কেমোথেরাপির সময় কোন খাবারগুলো খাওয়া ভালো।
কেমোথেরাপি একটি সাধারণ ক্যান্সার চিকিৎসা, যা শরীরের ক্যান্সার কোষের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য এক বা একাধিক ওষুধ ব্যবহার করে। কেমোথেরাপির জন্য শুষ্ক মুখ, স্বাদ পরিবর্তন, বমি বমি ভাব এবং ক্লান্তি দেখা দিতে পারে।
এই সময় রোগীকে তাই স্বাস্থ্যকর, সুষম খাদ্য খাওয়া গুরুত্বপূর্ণ। খাদ্য থেকে রোগী তার যাবতীয় শক্তি পেয়ে থাকেন। এছাড়াও, কেমোথেরাপির কষ্টকর সময়গুলো পার করার জন্যেও রোগীর যথেষ্ট শারীরিক শক্তির প্রয়োজন হয়। তাই একজন ক্যান্সার রোগীর পুষ্টিকর ও গুণাগুণ সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ করা খুবই জরুরি।
কেমোথেরাপির সময় কোন খাবারগুলো খাওয়া ভালো
নিচে এমন কিছু খাবার দেওয়া হলো যে খাবারগুলো কেমোথেরাপির সময় খাওয়া ভালো
কমলালেবু:
কমলা একটি সাইট্রাস ফল। শুধুমাত্র একটি মাঝারি কমলা ভিটামিন “সি” এর দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে পারে। এছাড়া এই ফলে থায়ামিন, ফোলেট এবং পটাসিয়ামের মতো অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি রয়েছে।
ভিটামিন “সি” রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ক্যান্সারের চিকিৎসার সময় খুবই প্রয়োজন।
গবেষণা পরামর্শ দেয় যে, ভিটামিন “সি” ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি এবং বিস্তার কমাতে পারে এবং নির্দিষ্ট ধরণের ক্যান্সারের বিরুদ্ধে থেরাপিউটিক হিসাবে কাজ করতে পারে।
বাদাম:
কাজু বাদাম, কাঠবাদাম, পেস্তা বাদাম, চীনা বাদাম, আখরোট জাতীয় বাদাম কেমোথেরাপির সময় খাওয়া ভালো। বাদাম প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, স্বাস্থ্যকর চর্বি, ভিটামিন এবং খনিজে পূর্ণ।
এছাড়া বাদাম ম্যাঙ্গানিজ, কপার এবং প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট মুক্ত ফ্রি-র্যাডিকেলের সাথে লড়াই করতে সাহায্য করে।
কুমড়ো বীজ:
কুমড়োর বীজ ফ্যাট, প্রোটিন এবং ভিটামিন “ই” এর মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ, যা প্রদাহের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহায়তা করে। রক্ত সঞ্চালন, শরীরে আয়রন ওভারলোড বা অতিরিক্ত লোহার ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে। তাই কেমোথেরাপির সময় কুমড়োর বীজ খেলে ভালো উপকার পাওয়া যায়।
ডিম:
ক্লান্তি কেমোথেরাপির একটি সাধারণ পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া। ডিমে থাকে প্রোটিন যা ক্লান্তির বিরুদ্ধে লড়াই করে। একটি মাঝারি আকারের ডিমে প্রায় ৬ গ্রাম প্রোটিন থাকে। ডিমে প্রোটিন থাকায় শরীরে পেশীর ভর বজায় রাখতে সহায়তা করে, যা কেমোথেরাপির সময় বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। ডিম শতভাগ সেদ্ধ করে খাওয়া ভালো।
রসুন:
কেমোথেরাপি সময় রোগী অনেক বেশি দুর্বল হয়ে পড়ে। যার কারণে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এমন খাদ্য উপাদান গ্রহণ করা জরুরি হয়ে পরে। এতে করে শরীরে শক্তি সঞ্চয় হয় ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়ায় করার জন্য। তাই প্রতিদিন ২-৩ কোয়া রসুন খাওয়া প্রয়োজন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য।
সবজি:
কলা, ব্রকলি, ফুলকপি, বাঁধাকপি সহ বিভিন্ন ধরণের ক্রুসিফেরাস সবজি কেমোথেরাপির সময় খাওয়া ভালো। বিশেষ করে ব্রকলিতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ভিটামিন “সি” রয়েছে। এতে সালফোরাফেন রয়েছে যা মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়।
গবেষণায় দেখা গেছে যে, সালফোরাফেন প্রদাহ কমাতে এবং কোষগুলিকে ক্ষতি থেকে রক্ষা করে মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, যা কেমোথেরাপি চলাকালীন বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
সামুদ্রিক মাছ:
সামুদ্রিক মাছ কেমোথেরাপিতে প্রতি সপ্তাহে দুইবার খাওয়া ভালো। কারণ সামুদ্রিক মাছ প্রোটিন এবং ওমেগা -3 ফ্যাটি অ্যাসিড সরবরাহ করে।
এসব মাছ হল ভিটামিন “ডি” এর একটি সমৃদ্ধ উৎস, যা সঠিক হাড় গঠন এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য প্রয়োজনীয়।
স্ট্রবেরি:
মরণ ব্যাধি ক্যান্সার এমন একটি রোগ যা অনিয়ন্ত্রিত ভাবে বৃদ্ধি ছড়িয়ে পরে। বেশ কয়েকটি গবেষণায় বলা হয়েছে যে, বেরি জাতীয় ফল যেমন স্ট্রবেরী, ব্লুবেরি, ব্ল্যাক বেরি ইত্যাদি অক্সিডেটিভ স্ট্রেস এবং প্রদাহের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতার মাধ্যমে বিভিন্ন ধরণের ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে। স্ট্রবেরি মুখের ক্যান্সার, লিভার ক্যান্সারের কোষগুলিতে টিউমার গঠনে বাধা দিতে পারে।
স্ট্রবেরিতে ভিটামিন “সি”, ফোলেট, ম্যাঙ্গানিজ এবং পটাসিয়াম সমৃদ্ধ, সাথে পেলারগোনিডিনের মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যৌগও রয়েছে। মুখের ক্যান্সারে আক্রান্তদের স্ট্রবেরি টিউমার গঠন কমাতে সহায়তা করে।
ইঁদুরের আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে যে স্ট্রবেরি নির্যাস স্তন ক্যান্সারের কোষগুলিকে মেরে ফেলতে সাহায্য করে এবং টিউমার বৃদ্ধিতে বাধা দেয়।
ওটমিল:
ওটমিলে রয়েছে অসংখ্য পুষ্টি, প্রোটিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান। এটি আপনার অন্ত্রকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। কারণ এটি এক ধরনের দ্রবণীয় ফাইবার যা আপনার অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া দূর করে।
ওটমিলের নিরপেক্ষ স্বাদ এবং ক্রিমি টেক্সচার বিশেষভাবে উপকারী। তাই কেমোথেরাপির সময় ওটমিল খেলে ভালো উপকার পাওয়া যায়।
অ্যাভোকাডো:
অ্যাভোকাডো খাদ্যের মধ্যে প্রয়োজনীয় ক্যালোরি এবং পুষ্টি সরবারহ করতে পারে। এই সবুজ ফলটিতে স্বাস্থ্যকর মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট বেশি, যা HDL (ভাল) কোলেস্টেরল বাড়ানোর সময় LDL (খারাপ) কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করতে পারে।
ক্যান্সার চিকিৎসা এবং প্রতিরোধে অ্যাভোকাডো উপকারী। টেস্ট-টিউব অধ্যয়নগুলি পরামর্শ দেয় যে, অ্যাভোকাডো কেমোথেরাপির পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হ্রাস করতে সহায়তা করতে পারে। এছাড়া প্রোস্টেট ক্যান্সারের কোষগুলির বৃদ্ধি বাধা দেয়।