অ্যাভোকাডো ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে, ত্বকের যত্নে ও গর্ভবতী মহিলাদের জন্য ভালো।

ঠিক যেন মা তার সন্তানকে আপন যত্নে বুকের ভিতর আগলে রেখেছে। অ্যাভোকাডো কেটে সাজিয়ে রাখলে এমনটাই মনে হয়। সবুজ রঙের এই ফলটি দেখতে অনেকটা নাশপাতির মতো তবে কিছু কিছু অ্যাভোকাডো দেখতে গোলাকার।

অ্যাভোকাডো নাম শুনলেই স্বাদ নিতে ইচ্ছা করে তাই না। সুস্বাদু এই ফলটি বিদেশী হলেও বর্তমানে দেশে চাষ হচ্ছে।

পুষ্টিতে ভরপুর এবং ঔষধিগুণে সমৃদ্ধ অ্যাভোকাডো। তাই এর জনপ্রিয়তা দিনে দিনে বাড়ছে। ইংরেজি: avocado এবং বৈজ্ঞানিক নাম: Persea americana. অ্যাভোকাডো গাছ মেক্সিকো এবং মধ্য আমেরিকার স্থানীয় গাছ।

ফলটির খোসা কুমিরের গায়ের মত অমসৃণ হওয়ায় এটা কুমির নাশপাতি হিসেবেও পরিচিত। বেশিরভাগ ফলের মধ্যে মূলত কার্বোহাইড্রেট থাকে তবে অ্যাভোকাডোতে স্বাস্থ্যকর ফ্যাটের পরিমাণ বেশি।

বর্তমানে অ্যাভোকাডো স্বাস্থ্য সচেতন ব্যক্তিদের মধ্যে একটি অবিশ্বাস্যভাবে জনপ্রিয় খাবারে পরিণত হয়েছে। এটি প্রায়শই একটি সুপারফুড হিসাবে উল্লেখ করা হয় এর স্বাস্থ্য সুবিধার কারণে।

অ্যাভোকাডো ফলের পুষ্টিগুণ

নিচে অ্যাভোকাডো ফলের পুষ্টিগুণ দেওয়া হলো –

  • ভিটামিন “কে”: ২৬% (DV)
  • ফোলেট: ২০% (DV)
  • ভিটামিন “সি”: ১৭% (DV)
  • পটাশিয়াম: ১৪% (DV)
  • ভিটামিন বি-5: ১৪% (DV)
  • ভিটামিন বি-6: ১৩% (DV)
  • ভিটামিন “ই”: ১০% (DV)

অ্যাভোকাডো ফলের স্বাস্থ্য উপকারিতা

ভারতে ‘মাকখান ফাল’ (makkhan fal) নামেও ডাকা হয়, অ্যাভোকাডোতে প্রচুর পরিমাণে ফ্যাট থাকে। অ্যাভোকাডো মানবজাতির জন্য সবচেয়ে পুষ্টিকর ফলগুলির মধ্যে একটি। নিচে এর স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো –

কলা চেয়ে বেশি পটাসিয়াম রয়েছে:

পটাসিয়াম এমন একটি পুষ্টি যা বেশিরভাগ মানুষ পর্যাপ্ত পরিমাণে পায় না। কলার থেকে অ্যাভোকাডোতে পটাসিয়াম পরিমানে বেশি। ১০০ গ্রাম কলাতে ১০% পটাসিয়াম এবং অ্যাভোকাডোতে ১৪% পটাসিয়াম থাকে। বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে যে উচ্চ পটাসিয়াম গ্রহণ রক্তচাপ হ্রাস করতে পারে, যা হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক এবং কিডনি রোগের ঝুঁকির কারণ।

হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমায়:

অ্যাভোকাডো একটি উচ্চ ফ্যাটযুক্ত খাবার। এতে থাকা ক্যালোরি ফ্যাট থেকে আসে। অ্যাভোকাডোস অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস এবং মনস্যাচুরেটেড ফ্যাট হার্টকে সুস্থ রাখতে এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি হ্রাস করতে সহায়তা করে। অ্যাভোকাডো খাওয়া রক্তের ট্রাইগ্লিসারাইডের পাশাপাশি LDL এবং HDL কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। প্রতিদিনের একটি অ্যাভোক্যাডো হঠাৎ হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুর সম্ভাবনা হ্রাস করতে পারে।

হজমে সহায়তা করে:

প্রতিদিনের খাবার তালিকায় অ্যাভোকাডো রাখলে আপনার খাবার খুব ভালোভাবে হজম হবে। সেই সাথে কোষ্ট্যকাঠিন্যের মত সমস্যা দূর হবে। কারণ অ্যাভোকাডো ফাইবার সমৃদ্ধ। ফাইবার অ্যাভোকাডোতে তুলনামূলকভাবে বেশি আছে। ফাইবার ওজন হ্রাসে অবদান রাখতে পারে, রক্তে শর্করার স্পাইক হ্রাস করতে পারে এবং অনেক রোগের ঝুঁকি হ্রাস করতে পারে। দ্রবণীয় ফাইবার অন্ত্রের বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি করতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ১০০ গ্রাম অ্যাভোকাডোতে ৭ গ্রাম ফাইবার থাকে।

চোখের জন্য ভালো:

অ্যাভোকাডো কেবল অন্যান্য খাবার থেকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শোষণ বাড়িয়ে তোলে না। এতে উচ্চ পরিমানে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যেমনঃ ক্যারোটিনয়েডস- লুটেইন এবং জেক্সানথিন, যা চোখের স্বাস্থ্যের জন্য অবিশ্বাস্যভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এই সব উপাদানগুলি প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে সাধারণ সমস্যা ছানি এবং ম্যাকুলার অবক্ষয়ের ঝুঁকি হ্রাস করতে পারে।

ত্বকের যত্নে:

অ্যাভোকাডো ত্বকের যত্নে অতুলনীয়। কারণ অ্যাভোকাডো ভিটামিন “সি” সমৃদ্ধ এবং ভিটামিন “ই”, যা উভয়ই ত্বককে স্বাস্থ্যকর, ময়েশ্চারাইজ করতে সহায়তা করে এবং ত্বকে লাবণ্য আনতে সাহায্য করে।

ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে:

ক্যান্সার চিকিৎসা এবং প্রতিরোধে অ্যাভোকাডো উপকারী। টেস্ট-টিউব অধ্যয়নগুলি পরামর্শ দেয় যে, অ্যাভোকাডো কেমোথেরাপির পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হ্রাস করতে সহায়তা করতে পারে। এছাড়া প্রোস্টেট ক্যান্সারের কোষগুলির বৃদ্ধি বাধা দেয়।

বাত রোগের লক্ষণগুলি থেকে মুক্তি দিতে পারে:

আর্থ্রাইটিস পশ্চিমা দেশগুলিতে একটি সাধারণ সমস্যা। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে যে, অ্যাভোকাডো অস্টিওআর্থারাইটিস বা বাত রোগের লক্ষণগুলি হ্রাস করতে পারে।

ওজন কমায়:

অ্যাভোকাডো ফাইবারের পরিমাণ বেশি এবং কার্বস কম, যা ওজন হ্রাস করতে সহায়তা করে। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, অ্যাভোকাডো খেলে ২৩% বেশি তৃপ্তি পাওয়া যায়। সুতরাং আপনার ডায়েট চার্টে অ্যাভোকাডো যোগ করলে এটি স্বাভাবিকভাবেই কম ক্যালোরি খেতে সহায়তা করবে এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাসে অভ্যস্ত করবে।

রোগ প্রতিরোধ করে:

অ্যাভোকাডোতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন “বি” রয়েছে। আর ভিটামিন “বি” শরীরকে রোগ জীবাণু থেকে রক্ষা করে। এছাড়া অ্যাভাকাডোতে যে ভিটামিন “সি”, ভিটামিন “ই” এবং উদ্ভিজ্জ খনিজ রয়েছে তা ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে।

হাড়ের জন্য ভালো:

অ্যাভোকাডোর অর্ধেকটাই ভিটামিন “কে” প্রায় ২৫%। ভিটামিন “কে” হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য অতি প্রয়োজনীয়। স্বাস্থ্যকর হাড় বজায় রাখার জন্য ভিটামিন “কে” এর পাশাপাশি ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন “ডি”ও গুরুত্বপূর্ণ। পর্যাপ্ত ভিটামিন “কে” ক্যালসিয়াম শোষণকে বৃদ্ধি করে এবং ক্যালসিয়ামের মাত্রা ঠিক রেখে হাড়ের স্বাস্থ্যের সহায়তা করতে পারে।

গর্ভবতী মহিলাদের জন্য:

ফোলেট ফলিক অ্যাসিড হিসাবেও পরিচিত। স্বাস্থ্যকর গর্ভাবস্থার জন্য ফোলেট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভাবস্থায় ফোলেট পর্যাপ্ত পরিমাণে গ্রহণ গর্ভপাত এবং নিউরাল টিউব ত্রুটিগুলির ঝুঁকি হ্রাস করে। অ্যাভোকাডো ফোলেটের একটি দুর্দান্ত উৎস। তাই গর্ভবতী মহিলারা গর্ভাবস্থায় ফোলেটের চাহিদা পূরণ করতে অ্যাভোকাডো খেতে পারেন।

সতর্কতা:

আপনি যদি জটিল কোনো রোগে আক্রান্ত হন বা অন্য কোনো কারণে রেগুলার কোনো মেডিকেল কোর্স-এর মধ্য দিয়ে যান তাহলে অবশ্যই খাওয়ার আগে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।

রেফারেন্স: