কোষ্ঠকাঠিন্যতা দূর করার প্রাকৃতিক উপায়।
সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়া আমাদের প্রতিদিনের কাজ। আর এটা সহজ ও সুখকর না হয়ে যদি হয় কষ্টকর ও ব্যাথা এবং রক্তপাতযুক্ত তাহলে জীবন হয়ে ওঠে দুর্বিসহ।
অনিয়মিত জীবনযাপন, অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস, অনিদ্রা, কায়িক শ্রমের অভাব ইত্যাদির কারণে হজমের সমস্যা এবং কোষ্ঠকাঠিন্য ধারণ করছে।
বয়স যা-ই হোক না কেন, কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগছেন বেশিরভাগ মানুষ। অনেকেই আছে এ সমস্যার কথা মুখফুটে বলতে সংকোচ বোধ করে।
যখন একজন ব্যক্তি সহজে মলত্যাগ করতে সক্ষম হয় না আমরা সেটাকেই কোষ্ঠকাঠিন্য (Constipation) বলে থাকি। অনেক সময় ১-২ দিন পরপর মলের বেগ আসে।
ডাক্তারদের মতে, কেউ যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ আঁশযুক্ত খাবার গ্রহণ করার পরও প্রতি সপ্তাহে তিনবারের কম পায়খানায় যায় তখনই কোষ্ঠকাঠিন্য বলা হয়।
কোষ্ঠকাঠিন্যকে আপাতদৃষ্টিতে তেমন সমস্যা বলে মনে না হলেও এ থেকে কিন্তু হতে পারে বড় ধরনের শারীরিক সমস্যা।
যেমন- রক্তসল্পতা, অবসাদ (ক্লান্তি), অনিদ্রা, চোখে ব্যথা, চোখের নিচে কালি পড়া, মাথা ঘোরা, কোমর ব্যথা, এবং মনোযোগ হ্রাস পাওয়া ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে।
দীর্ঘস্থায়ী কোষ্ঠকাঠিন্যতা থেকে চর্ম রোগ হতে পারে:- যেমন, চুলকানি, মুখে ঘা, মেচেতা ইত্যাদি।
এছাড়া ক্ষুধা কমে যাওয়া, মুখে দুর্গন্ধ হওয়া, পেটে গ্যাস ইত্যাদি সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
প্রস্রাবের সমস্যা দেখা দিতে পারে। দীর্ঘ স্থায়ী কোষ্ঠকাঠিন্যের সচরাচর যে দুটি সমস্যা হয় তা হলো পাইলস ও এনাল ফিশার। এছাড়া আমরা মলধরে রাখার ক্ষমতা হারাতে পারি।
এমনকী কোন কোন ক্ষেত্রে দিনের পর দিন অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগের কারণে মলাধার দেহের বাইরে চলে আসতে পারে যাকে বলা হয় রেকটাল প্রোল্যাপস। আর কোষ্ঠকাঠিন্য আমাদের মনের উপর প্রচণ্ড চাপ ও অশান্তি সৃষ্টি করতে পারে।
বিভিন্ন কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়। ডাক্তারদের মতে কোষ্ঠকাঠিন্যের অন্যতম কারণ হলো ফাইবারযুক্ত খাবার এবং শাকসবজি কম খাওয়া, পানি কম খাওয়া, দুশ্চিন্তায় ভোগা, অন্ত্রনালিতে ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, ঔষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ইত্যাদি।
এছাড়া ঋতু পরিবর্তনে কখনও কখনও কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়। এছাড়া, বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখেছেন যে, যারা অতিরিক্ত চা বা কফি পান করেন তাদের কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার সম্ভাবনা বেশী।
একই সাথে চর্বি জাতীয় ও আমিষ জাতীয় খাবার বেশি খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার আশঙ্কা থাকতে পারে।
কোষ্ঠকাঠিন্যতা দূর করার প্রাকৃতিক উপায়
ঔষুধ খেয়েও আমরা আমাদের কোষ্ঠ্যকাঠিন্যের সমস্যা সমাধান করতে পারি। কিন্তু সব ধরনের ঔষুধেরই কোন না কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে।
তাই আমাদের সবসময় প্রাকৃতিক উপায়গুলো বেছে নেওয়া উচিত। নিচে কোষ্ঠ্যকাঠিন্যতা দূর করার কয়েকটি প্রাকৃতিক উপায় দেওয়া হলো –
উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার:
ফাইবার অবিশ্বাস্যভাবে আমাদের শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কোষ্ঠকাঠিন্য এমন লোকেদের ফাইবারযুক্ত খাবারের পরিমাণ বাড়ানোর জন্য বলা হয়।
এর কারণ হল ফাইবার মলের পরিমাণ বাড়িয়ে অন্ত্রের প্রবাহকে ঠিক রাখে। দৈনিক একজন মহিলার ২৫ গ্রাম এবং একজন পুরুষের ৩৮ গ্রাম খাদ্য ফাইবার খাওয়া উচিত।
কয়েকটি উচ্চ ফাইবার যুক্ত খাবার নিচে দেওয়া হলো –
বেশি বেশি পানি পান করুন:
প্রতিদিন আমাদের অন্ত্রের গতিবিধির জন্য অন্তত ৬-৮ গ্লাস পানি পান প্রয়োজনীয়।
যদি আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য হয়ে থাকে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান না করে থাকেন তবে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন বা অন্যান্য তরল খাবার গ্রহণ করুন।
এতে করে অন্ত্রের গতিবিধি ঠিক থাকার মাধ্যমে কোষ্ঠকাঠিন্যতা দূর হবে।
ব্যায়াম:
হালকা ব্যায়াম, যেমন হাঁটা বা জগিং পেট জুড়ে রক্ত প্রবাহ বাড়িয়ে অন্ত্রের গতিপথকে উৎসাহিত করে। যদি আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য হয়, তবে নিয়মিত হাঁটার চেষ্টা করুন।
ওটমিল:
ব্রেকফাস্ট হিসেবে পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে ওটমিল একটি পরিচিত নাম। স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ওটমিলের অবদানের কারণে এটি খুবই জনপ্রিয়।
ওটমিলের ফাইবার হজম শক্তি বৃদ্ধি করে, মলের পরিমাণ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
ফল খান:
উচ্চ ফাইবার সমৃদ্ধ ফল কোষ্ঠকাঠিন্যতা দূর করতে সাহায্য করে।
যেমন- কমলা, নাশপাতি, তরমুজ, আনারস, আম, পেয়ারা, পাঁকা কলা এবং পেঁপে জাতীয় ফল খাওয়ার মাধ্যমে আমরা কোষ্ঠকাঠিন্যতা দূর করতে পারি।
শাক-সবজি খানঃ
শাক-সবজি মানেই ফাইবার এটা আর আলাদা করে বলার দরকার হয় না। বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি রয়েছে যেগুলো নিয়মিত খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার সম্ভবনা কম যাবে।
যেমন – মিষ্টি আলু, বাঁধাকপি, ফুলকপি, মটর শুঁটি, ক্যাপসিকাম, লাউ, গাজর, ব্রকলি, মেথি শাক, কলমি শাক, লাল শাক, শিম, ডাটা শাক এবং শসা, ইত্যাদি খাওয়ার মাধ্যমে আমরা কোষ্ঠকাঠিন্যতা থেকে দূরে থাকতে পারি।
বেল:
যারা দীর্ঘদিন ধরে কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য বেল মহৌষধ। কারণ বেল আমাদের পাচন প্রক্রিয়াকে স্বাবাভিক করে কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যার সমাধান করে।
কোষ্ঠকাঠিন্য আক্রন্ত রোগীরা এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে নিয়মিত বেলের শরবত খেতে পারেন।
ডুমুর:
ডুমুরে আছে প্রচুর ফাইবার। এ ফাইবার হজমে সাহায্য করে। এ ছাড়া এটি কোষ্ঠকাঠিন্যতা দূর করতে সাহায্য করে। ডায়রিয়া বা অন্য কোনো রকম পেটের সমস্যায় ডুমুর খুবই কার্য্করী।
ত্রিফলা:
প্রাচীন কাল থেকেই আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় ত্রিফলা ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ১ গ্লাস গরম পানি অথবা গরম দুধে ১ চা চামচ ত্রিফলা পাউডার ভালো করে মিশিয়ে নিন।
রাতে ঘুমানোর পূর্বে তা নিয়মিত পান করুন। এতে করে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর হবে।
ইসবগুলের ভূসি:
ইসবগুলের ভূসি অদ্রবণীয় ও দ্রবণীয় ফাইবারের এক চমৎকার উৎস। যা কোষ্ঠকাঠিন্যতা দূর করনে প্রাকৃতিক উপায় হিসেবে কাজ করে। এটি পাকস্থলীতে গিয়ে মলের পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করে।
প্রাকৃতিকভাবে পানিগ্রাহী হওয়ার কারণে পরিপাকতন্ত্র থেকে পানি গ্রহণ করে মলের ঘনত্বকে বাড়িয়ে দিয়ে কোষ্ঠকাঠিন্যতা দূর করতে সাহায্য করে।
১ গ্লাস পানিতে ২ টেবিল চামচ ইসবগুলের ভূসি দিয়ে ৫-১০ মিনিট রেখে দিন। যখন এটি পানি শুষে নিয়ে জেলির মতো আঠালো হবে তখন তা পান করুন।
স্বাভাবিক কোষ্ঠকাঠিন্যতাই আমরা এই প্রাকৃতিক উপকরণগুলো চেষ্টা করতে পারি। কিন্তু যদি কোষ্ঠকাঠিন্য দীর্ঘস্থায়ী হয় তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।