হেপাটাইটিস রোগের কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার।

হেপাটাইটিস বলতে লিভার প্রদাহজনক অবস্থাকে বোঝায়। এটি সাধারণত একটি ভাইরাল সংক্রমণের কারণে ঘটে থাকে। এছাড়া অ্যালকোহলের মত ক্ষতিকারক পদার্থের কারণেও হেপাটাইটিস হয়।

হেপাটাইটিস এমন একটি রোগ যা আমাদের শরীর যখন লিভারের টিস্যুর বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি করে তখন হয়।

এই রোগে অল্প কিছু উপসর্গসহ বা কোনো উপসর্গ ছাড়াই ঘটতে পারে। উপসর্গের ভিতর কিছু রোগীর হলুদ বর্নের চোখ ও ত্বক দেখা দেয় এবং পেটে ব্যথা এবং ডায়রিয়া হয়।

হেপাটাইটিস এ, হেপাটাইটিস বি, হেপাটাইটিস সি, হেপাটাইটিস ডি এবং হেপাটাইটিস ই অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। প্রতিটি হেপাটাইটিসের জন্য আলাদা আলাদা ভাইরাস দায়ী।

হেপাটাইটিস রোগের কারণ:

চলুন জেনে নেওয়া যাক, হেপাটাইটিস রোগের কারণ সম্পর্কে –

হেপাটাইটিস রোগীর রক্ত গ্রহণ করলে:

এই রোগীর রক্ত যদি অন্য ব্যাক্তি কে দেওয়া হয় বা অন্য কেউ গ্রহণ করে, এর কারণে হেপাটাইটিস হয়ে থাকে।

এছাড়া হেপাটাইটিস সংক্রামিত ব্যাক্তির ব্যবহৃত জিনিস যেমন, ব্লেড, টুথব্রাশ, এর সংস্পর্শে করলে অন্য ব্যাক্তির হেপাটাইটিস হতে পারে।

অবিশুদ্ধ পানি পানের কারণে :

দীর্ঘদিন ধরে যদি আপনি অবিশুদ্ধ পানি পান করেন তাহলে হেপাটাইটিস হতে পারে। তাই যেকোন পানি পান করা যাবে না। সব সময় বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে।

ওষুধের কারণে:

অতিরিক্ত ওষুধ গ্রহণের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থেকে হতে পারে হেপাটাইটিস।

অ্যালকোহল সেবন করলে :

অ্যালকোহল সেবনের কারণে হেপাটাইটিস হয়ে থাকে। সাধারণত দীর্ঘ দিন অ্যালকোহল সেবন করলে হেপাটাইটিস দেখা দেয়।

হেপাটাইটিস রোগের লক্ষণ

এবার চলুন জেনে নেওয়া যাক, হেপাটাইটিস রোগের লক্ষণ কি কি:

জ্বর হওয়া:

এ রোগ হলে আপনার উচ্চ মাত্রায় জ্বর হতে পারে। উচ্চ তাপমাত্রা (৩৮ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেট অর্থাৎ ১০০.৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশী) মাত্রায় জ্বর হতে পারে। এই জ্বর বেশ কিছু দিন থাকে।

মাথা ব্যথা ও চুলকানি হওয়া:

এ সময় খুব মাথা ব্যথা হতে পারে। এই ব্যথা কখনো কখনো সহ্য করার বাইরে চলে যায়। আবার মাথা ব্যথার সাথে আপনার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় চুলকানি হতে পারে। চুলকানির মাত্রা কম বা বেশি হতে পারে।

বমি ভাব ও পেটে ব্যথা হওয়া:

আপনার বমি বমি ভাব হতে পারে আবার বমি ও হতে পারে। তার সাথে মাঝে মাঝে বা প্রায় সময় পেট ব্যথা করতে পারে। পেট ব্যথা কখনো কখনো তীব্র আকার ধারণ করতে পারে।

ত্বক ও চোখ হলদে হয়ে যাওয়া:

এ রোগ হলে আপনার ত্বক ও চোখ হলদে হয়ে যাবে। চোখের সাদা অংশ বেশির ভাগ সময় হলুদ হয়ে যায়। তাছাড়া শরীরে বিভিন্ন জায়গার ত্বক হলুদ হয়ে যায়। এর সাথে সাথে আপনার ল‍াল ও গাঢ় রঙের প্রস্রাব হতে পারে।

ক্ষুধা কমে যাওয়া ও পাতলা পায়খানা হওয়া:

খাবারের হজম ক্ষমতা কমে যাবে, যার ফলে ক্ষুদা কম লাগবে হেপাটাইটিস হলে। তাছাড়া খাবারের প্রতি রুচি কমে যাবে। আবার আপনার পাতলা পায়খানা দেখা দিতে পারে।

রোগের প্রতিকার কি:

এবার চলুন জেনে নেওয়া যাক, হেপাটাইটিস রোগের প্রতিকার সম্পর্কে –

রক্ত গ্রহণের আগে অবশ্যই পরীক্ষা করে নিতে হবে যে এই রক্ত ভাইরাসমুক্ত।
ব্যক্তিগত ব্যবহার করা ট্রুথব্রাশ, রেজর, নেইল কাটার ইত্যাদি অন্যকে ব্যবহারে নিষেধ করতে হবে।
বিশুদ্ধ পানি ও খাবার গ্রহণ করতে হবে।
মদ্যপান ও অন্যান্য নেশা জাতীয় দ্রব্য পরিহার করতে হবে।
শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে।
ডায়াবেটিস ও হাইপারটেনশন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
চর্বিযুক্ত খাবার কম খেতে হবে। আর শাকসবজি ও ফলমূল বেশি খেতে হবে এবং তা অবশ্যই হতে হবে ফরমালিনমুক্ত
ঝুঁকিপূর্ণ এবং অনৈতিক শারীরিক সম্পর্ক বা আচরণ পরিহার করতে হবে।
ডিসপসেবল সুচ ও সিরিঞ্জ ব্যবহার করতে হবে।

আপনার যদি দীর্ঘস্থায়ী হেপাটাইটিস থাকে, তবে যেকোনো কোন ওষুধ খাওয়ার আগে আপনার ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন।

রেফারেন্স: