স্ট্রোকের লক্ষণ কি কি?

স্ট্রোক হলো মস্তিষ্কের রক্তনালীর রোগ। মস্তিষ্কের ভেতরে রক্তের শিরায় রক্ত জমাট বাধার ফলে অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়, যার ফলে হয়ে থাকে স্ট্রোক। এ থেকে ব্রেন ড্যামেজ, প্যারালাইসিস এবং মৃত্যুও হতে পারে। তাই বলা যাই, স্ট্রোক গুরুতর একটি স্বাস্থ্য সমস্যা।

স্ট্রোক হলে বা স্ট্রোকের লক্ষণ দেখা দিলে রোগীকে দ্রুত হাসপাতাল ও ডাক্তারের কাছে নেওয়াও খুবই জরুরি। স্ট্রোকের প্রাথমিক লক্ষণগুলো সামান্য কিছু বিষয় লক্ষ করলে বোঝা যায় যেমন – হাত, পা ও মুখের অসাড় অবস্থা বা জড়তা ইত্যাদি উপসর্গ দ্বারা স্ট্রোকের লক্ষণ বোঝা যায়।

স্ট্রোক কম বয়স্কদের তুলনা প্রাপ্ত বয়স্কদের মাঝে বেশি লক্ষ করা যায়।

স্ট্রোক দুই ধরনের হয়। যথা-

  • ইসকেমিক।
  • হেমোরেজিক।

এবার চলুন জেনে নেওয়া যাক, কি কি লক্ষণ দেখলে আপনি বুঝবেন স্ট্রোক হয়েছে :

তীব্র মাথা ব্যথা :

স্ট্রোকের আগে রোগীর তীব্র মাথা ব্যথা হয়ে থাকে। এই তীব্র মাথা ব্যথা অনেক কারনেই হতে পারে। অনেকের আবার এই তীব্র মাথা ব্যথা মাইগ্রেনের কারণে হয়। তবে যদি হঠাৎ করেই কোন ধরনের কারণ ছাড়াই মাথার বাম অংশে তীব্র ব্যথা শুরু হয় তবে অবহেলা করবেন না। দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন। কারণ এর ফলে হতে পারে স্ট্রোক।

মাথা ঘোরা ও চোখে ঝাপসা দেখা :

ভারসাম্য রেখে হাঁটার ক্ষেত্রে অসুবিধা কিংবা দাঁড়ানো অবস্থা থেকে হঠাৎ করে পড়ে যাওয়া বা হোঁচট খাওয়া – এগুলোও স্ট্রোকের লক্ষণ হতে পারে৷ অনেক সময় মাথা ঘোরা থেকে এই সমস্যা হয়ে থাকে। তাই এসব লক্ষণ দেখলে একদমই অবহেলা করা যাবে না।

স্ট্রোকের আরেকটি লক্ষণ হলো আপনার কোনো একটি চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসা। মস্তিষ্কের যে অংশ আপনার দৃষ্টি সম্বন্ধীয় কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে সে অংশে অক্সিজেন সরবরাহ কমে যাওয়ার ফলে চোখে ঝাপসা দেখা দেয়।

কথা জড়িয়ে যাওয়া :

মস্তিস্কে রক্ত সঞ্চালন বন্ধ হয়ে গেলে স্ট্রোক হয়। অনেকেরই স্ট্রোকের আগে কথা জড়িয়ে যাওয়ার লক্ষণটি ধরা পড়ে। যদি কেউ কথা বলতে বলতে হঠাৎ অস্পষ্ট কথা বলা শুরু করেন কিংবা কথা জড়িয়ে বলতে থাকেন তবে অবশ্যই তা লক্ষণীয়। এমন লক্ষণ দেখলে রোগীকে দিয়ে কথা বলানোর চেষ্টা করতে হবে। যদি কথা জড়িয়ে যায় তবে দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।

আচরণগত পরিবর্তন :

মস্তিষ্কই যেহেতু আমাদের আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে সেহেতু স্ট্রোকে আক্রান্ত হলে লোকের অস্বাভাবিক রাগ, উদ্বেগ এবং ভ্যাবাচেকা খাওযার মতো সমস্যা দেখা দেয়। এমনকি স্ট্রোক থেকে বেঁচে যাওয়ার পরও এমন সব সমস্যায় স্থায়ীভাবে আক্রান্ত হতে পারেন। এক্ষেত্রে রোগীর সাথে সব সময় ভালোভাবে আচরণ করতে হবে।

শর্ট মেমোরি লস বা স্মৃতি হারানো :

মস্তিষ্কের যে অংশ স্মৃতি সংরক্ষণের কাজ করে সে অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হলে এমন সমস্যা দেখা দিতে পারে। স্ট্রোকের আগে রোগীরা তাদের আপনজনকেও চিনতে পারেন না এমনকি নিজের নাম পর্যন্ত ভুলে যান। ডাক্তারদের ভাষায় একে শর্ট মেমোরি লস বা স্মৃতি হারানো বলে থাকে। এমন লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।

মুখের অর্ধেক অসাড় হয়ে যাওয়া :

আপনার যদি হঠাৎ করেই কথা বলার সময় মুখের অর্ধেক নাড়াতে না পারেন বা মুখের অর্ধেক পুরোপুরি অসাড় হয়ে পড়ে তাহলে তা স্ট্রোকের স্পষ্ট একটি লক্ষণ। এমনটা ঘটে যখন আপনার মুখের মাংসপেশিতে রক্ত সরবরাহকারী স্নায়ুগুলো অক্সিজেন সরবরাহ কমে যাওয়ার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

উপরোক্ত লক্ষণগুলি দেখলে দেরি না করে দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন।