খাবারের ফরমালিন দূর করতে কি করবেন?

বর্তমানে ফরমালিন ছাড়া কোনো টাটকা খাবার বাজারে পাওয়া খুবই কষ্টসাধ্য ব্যাপার। সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রতিদিন যদিও সুষম খাদ্য খাওয়া উচিত। তবে ভয়ঙ্ককর ব্যাপার হচ্ছে মাছ, ফল ও সবজি সুস্বাস্থ্যের পরিবর্তে উল্টো আমাদের স্বাস্থ্যহানি করে।

কারণ এই সব খাবারে অতিরিক্ত পরিমাণে ফরমালিন মেশানো হয়ে থাকে। আর ফরমালিনযুক্ত খাবার খেয়ে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। অনেকেরই ধারণা, ১৫ থেকে ২০ মিনিট বিশুদ্ধ পানিতে খাদ্যদ্রব্য ডুবিয়ে রাখলে তা থেকে ফরমালিন দূর হয় বা কমে যায়।

ফরমালিন কি?
ফরমালডিহাইডের (রাসায়নিক সংকেত HCHO) ৩৭ থেকে ৪০ শতাংশ জলীয় দ্রবণই হলো ফরমালিন। ফরমালিনে ফরমালডিহাইড ছাড়াও ১০ থেকে ১৫ শতাংশ মিথানল মিশ্রত থাকে। ফরমালিন এন্টি-ব্যাকটেরিয়াল বা সংক্রামক ব্যাধি নাশক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ফরমালিন মাছ, মাংস, ফলমূল ইত্যাদির পচন রোধ করার ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা হচ্ছে।

ফরমালিন মাছ, ফলমূল এবং শাক সবজি খেয়ে দিন দিন শিশুদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হারিয়ে যাচ্ছে। কিডনি, লিভার ও বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নষ্ট, বিকলাঙ্গতা, এমনকি মরণব্যাধি ক্যানসারসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে শিশু-কিশোররা।

এছাড়া ফরমালিনযুক্ত খাবার খেলে গর্ভবতী নারীদের সন্তান প্রসবের সময় জটিলতা, বাচ্চার জন্মগত ত্রুটি ইত্যাদি দেখা দিতে পারে। বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর কেমিক্যাল ব্যবহারের কারণে পেটের পীড়া, হাঁচি, কাশি, শ্বাসকষ্ট, বদহজম, ডায়রিয়া, আলসার, চর্মরোগ সহ বিভিন্ন রোগ হয়ে থাকে।

এমন কিছু ঘরোয়া উপায় আছে যা মেনে চললে সহজেই খাদ্যদ্রব থেকে সহজেই ফরমালিন দূর করা সম্ভব। আসুন এবার জেনে নেই, কীভাবে ঘরোয়া পদ্ধতিতে ফল ও শাক-সবজি থেকে ফরমালিন বা বিষ দূর করতে পারবেন-

মাছের ক্ষেত্রে করণীয়:

  • ১ ঘণ্টা মাছ পানিতে ডুবিয়ে রাখলে শতকরা ৬০ ভাগ ফরমালিন নষ্ট হয়ে যায়। সবচেয়ে ভালো হয় ভিনেগার মিশ্রিত পানিতে ১৫ মিনিট মাছ ডুবিয়ে রাখলে শতকরা ১০০ ফরমালিন নষ্ট হয়ে যায়।
  • অথবা মাছটি রান্না করার আগে কমপক্ষে এক ঘণ্টা লবণ পানিতে ডুবিয়ে রাখা। এতে করে মাছের ফরমালিনের পরিমাণ প্রায় ৯০ শতাংশ কমে যায়।
  • আরেকটি কার্যকর পদ্ধতি হচ্ছে, আপনি যখন চাল ধুবেন এবং প্রথমবার চাল ধোয়ার সময় যে পানি বের হবে সেটি দিয়ে প্রথমে মাছটি ধুয়ে নিন। এরপর আবার সাধারণ পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। দেখবেন এতে করে প্রায় ৭০ শতাংশ ফরমালিন দূর হয়ে যাবে।
  • আমাদের দেশে এখন শুঁটকি মাছেও প্রচুর পরিমাণে ফরমালিন মেশানো হচ্ছে। শুঁটকি মাছ থেকে ফরমালিন দূর করতে ঠিক একই রকম পন্থা অবলম্বন করবেন। প্রথমে ১ ঘণ্টা লবণ মিশ্রিত হালকা গরম পানিতে পরে ১০ মিনিট ঠাণ্ডা পানিতে ডুবিয়ে রেখে ধুয়ে ফেলুন। এতে করে ফরমালিন তো দূর হবেই পাশাপাশি মাছের স্বাদও বাড়বে।

শাক-সবজির ক্ষেত্রে করণীয়:

  • সবজি রান্না করার আগে ১০ মিনিট লবণ গরম পানিতে ডুবিয়ে রাখুন।
  • সবজিকে ফরমালিনমুক্ত করার সব চাইতে ভালো পদ্ধতি হলো- ভিনেগার ও পানির মিশ্রণে (পানিতে ১০% আয়তন অনুযায়ী) ১৫ মিনিট ভিজিয়ে রাখা। এতে প্রায় ১০০ ভাগ ফরমালিন দূর হয়।
  • কোনো ফলমূল খাবার আগে সেটি হালকা গরম এবং লবণ মিশ্রিত পানিতে ১০ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। এতে করে ফরমালিনের পরিমাণ প্রায় ৯৮ শতাংশ দূর হবে।

ফলমূলের ক্ষেত্রে করণীয়:
অনেক সময় ফলমূলে বিশেষ করে আম, লিচুতে স্প্রে করার মাধ্যমে ফরমালিন দেওয়া হয়। সেজন্য গাড় বা উজ্জল রঙের ফল কেনা থেকে বিরত থাকুন। এছাড়া কিছু কিছু কাজ করে নিতে পারেন খাবারের ফরমালিন দূর করার জন্য।

  • গরম পানি দিয়ে ধুয়ে নিন- বাজার থেকে যেকোনো ধরনের ফল ও সবজি কেনার পর তা খাওয়ার আগে গরম পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। বেশি গরম বা ঠাণ্ডা পানি সম্পূর্ণভাবে রাসায়নিক দূর করে না।
  • হালকা গরম পানি ব্যবহার করুন। ফল ও সবজির ওপরে থাকা মোম, আঠা ও অন্যান্য রাসায়নিক ধুয়ে দূর করে দিতে পারে উষ্ণ গরম পানি।
  • লবণ পানি দিয়ে ধুয়ে নিন: একটি বড় পাত্রের মধ্যে পানি নিয়ে তাতে আধা চা-চামচ লবণ মিশিয়ে সেই পানি দিয়ে ফল ও সবজি ধুয়ে নিন। লবণ-পানি দিয়ে ধোয়ার পর আবার পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে নিন।
  • ভিনেগার মিশ্রিত পানিতে ডুবিয়ে রাখুন: রাসায়নিক দূর করার সেরা সমাধান হচ্ছে- ভিনেগার মিশ্রিত পানিতে ফল ও সবজি ডুবিয়ে রাখা। বড় একটি পাত্রে পানি নিয়ে ১ চা-চামচ ভিনেগার মিশিয়ে সেই পানিতে ফল ও সবজি ভিজিয়ে রাখুন। কিছুক্ষণ পর ভালো পানি দিয়ে আবার ধুয়ে নিন।
  • খোসা ফেলে দিন: যেসব ফল ও সবজির খোসা ফেলে দেওয়া যায়, সেগুলোর খোসা ফেলে দিন। যেমন: পেঁয়াজ, আলু, অ্যাভাকাডো, আপেল, আদা, আম, গাজর, মূলা ইত্যাদি। প্রথমত এসব ফল ও সবজি ভালো করে ধুয়ে নিন। তারপর খোসা ফেলে দিন। খোসা ছাড়ানোর পর তা আবারো ধুয়ে নিন।

কেমিক্যাল বা ফরমালিন দিয়ে পাকানো ফল চেনার উপায়

  • আম কাটার পর চামড়ার ঠিক নিচে ফলের অংশ কাঁচা পাওয়া যাবে। যদিও চামড়াটি পাকা রঙের বর্ণ ধারণ করেছিল।
  • যদি ঝুড়িতে বা দোকানে সব ফল একই সময়ে একই রকম পাকা দেখা যায় এবং দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে ফলের চামড়ায় আঁচিল বা তিলের মতো রং দেখা যায়।
  • প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় যে ফল পাকে তাতে মাছি বসবে কিন্তু কেমিক্যাল দ্বারা পাকানো হলে সে ফলে মাছি বসবে না।
  • প্রাকৃতিকভাবে পাকা ফলের চামড়া উঠানোর পর এক ফোঁটা আয়োডিন দিলে তা গাঢ় নীল অথবা কালো বর্ণ ধারণ করে। কিন্তু কেমিক্যাল দ্বারা পাকানো ফলে এই আয়োডিনের রং অপরিবর্তিত থাকে।