গর্ভাবস্থায় লাউ খাওয়ার উপকারিতা।

শীতকালীন সবজিগুলোর মধ্যে লাউ অন্যতম। তবে এখন সারা বছরই লাউ পাওয়া যায়। লাউয়ের ৯৬ শতাংশই পানি। ফলে নিয়মিত লাউ খেলে শরীরে পানির ঘাটতি পূরণ হয়। তাছাড়া লাউ ক্লান্তি দূর করে এবং শরীরকে ঠান্ডা ও সতেজ রাখে।

এতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম রয়েছে যা আমাদের শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে ও শরীরের ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।

গরমকালে আমরা খুব ঘামি বলে আমাদের শরীর থেকে পানির সঙ্গে ইলেক্ট্রোলাইট বেরিয়ে যায় তাই লাউ খেলে ক্লান্তি দূর হয়। তাছাড়া লাউ গর্ভবতী মহিলাদের জন্য বিশেষ উপকারী।

শীতের সকালে গরম ভাতের সঙ্গে লাউ আর আলু দিয়ে শোল মাছের ঝোল খেতে কি যে ভালো লাগে তা বলে বোঝানো যাবে না।

শুধু শোল কেন কৈ, শিং, মাগুর, ট্যাংরা ইত্যাদি আরো অনেক মাছ দিয়ে খেতে লাউয়ের কোনো তুলনা হয় না।

লাউয়ের পুষ্টি উপাদান

নিচে লাউয়ের পুষ্টি উপাদান দেওয়া হলো-

  • শক্তি: ১৪ কিলোক্যালোরি
  • কার্বোহাইড্রেট: ৩.৩৯ গ্রাম
  • প্রোটিন: ০.৬২
  • ফাইবার: ০.৫
  • ভিটামিন “এ”: ১৬ আইইউ
  • ভিটামিন “সি”: ১০.১ মিলিগ্রাম
  • সোডিয়াম: ২ মিলিগ্রাম
  • পটাসিয়াম: ১৫০ মিলিগ্রাম

গর্ভবতী মহিলারা কি লাউ খেতে পারেন?

গর্ভবতী এবং বুকের দুধ খাওয়ানো মহিলারা লাউ খেতে পারেন। গর্ভাবস্থায় যদি লাউ খাওয়া হয়, তাহলে এটি আপনাকে হাইড্রেট রাখতে সাহায্য করে কারণ এটি খনিজ এবং পানিতে পরিপূর্ণ।

এছাড়া এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ যা আপনার ত্বকের কোষগুলিকে সুস্থ্য রাখতে সাহায্য করে।

তাই গর্ভাবস্থায় প্রতিদিনের খাবারে যদি লাউ অন্তর্ভুক্ত করা হয় তাহলে এটি আপনার এবং আপনার শিশুর জন্য খুবই উপকারী বলে প্রমাণিত হয়েছে।

গর্ভাবস্থায় লাউ খাওয়ার উপকারিতা

আসুন এবার জেনে নেওয়া যাক, গর্ভাবস্থায় লাউ খেলে কি কি উপকার হয়-

কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে:

লাউতে চর্বি এবং কোলেস্টেরল কম কিন্তু এটি ফাইবার সমৃদ্ধ। যা গর্ভবতী মহিলাদের জন্য খুব উপকারী। গর্ভবতী মহিলাদের কোষ্ঠকাঠিন্য একটি সাধারণ সমস্যা। তাই গর্ভাবস্থায় লাউ খেলে উপকার পাবেন।

লাউয়ে দ্রবণীয় ও অদ্রবণীয় ফাইবার আছে বলে সবজিটি হজমে সহায়তা করে। তাই লাউ (Bottle Gourd) (Lauki) খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়, গ্যাস-অম্বল দূর করতে সাহায্য করে ও অর্শ সারায়।

শরীর ঠাণ্ডা করে:

অনেকেই জানেন না লাউ গর্ভাবস্থায় আপনার শরীর থেকে তাপ মুক্ত করতে সাহায্য করতে পারে।

আসলে এই সবজিটিতে যেমন রয়েছে প্রচুর মাত্রায় পানি, তেমনি রয়েছে প্রচুর পরিমাণ খনিজও, যা শরীরকে ঠাণ্ডা রাখার পাশাপাশি দেহের ভিতরে উপস্থিত ক্ষতিকর টক্সিক উপাদানদেরও বার করে দেয়।

ফলে নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে। তেমনি দেহের ভিতরে তাপমাত্রা বা প্রাদাহ বাড়ার সম্ভাবনাও আর থাকে না।

ত্বকের সমস্যা কমায়:

লাউ থেকে আমরা যে ভিটামিন “সি” এবং জিংক পাই তা ত্বকের অকাল বার্ধক্য ও কুঁচকে যাওয়াকে রোধ করতে সাহায্য করে।

আসলে গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মহিলাদের ত্বকে বিভিন্ন ধরণের সমস্যা দেখা দেয়। ভিটামিন “সি” শরীরে কোলাজেন উৎপাদন করে।

কোলাজেন একটি প্রোটিন যা আমাদের শরীরের টিসুকে শক্তিশালী বানায়।

অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ সীমিত করে:

গর্ভাবস্থায় কেক এবং আইসক্রিমের মতো অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার ইচ্ছা করতে পারে।

যেহেতু লাউতে ৯৬% জল তাই এটি খেলে এই ধরনের ক্ষুধার্ত যন্ত্রণা প্রতিরোধ হতে পারে। এছাড়া এটি পানির তৃষ্ণা মেটাতেও সাহায্য করে।

প্রয়োজনীয় খনিজ সরবরাহ করে:

লাউ সোডিয়াম এবং পটাসিয়ামের মতো খনিজ পদার্থে সমৃদ্ধ। গর্ভাবস্থায়, শরীরে সোডিয়ামের ক্ষয়ের কারণে হতে পারে ক্লান্তি।

তাই শরীরের হারানো সোডিয়াম পূরণ করতে, লাউ খান কারণ এটি সোডিয়ামের একটি দূর্দান্ত উৎস। এছাড়া চাইলে আপনি গর্ভাবস্থায় লাউয়ের জুসও পান করতে পারেন।

মাথাব্যথা নিরাময় করে:

গর্ভাবস্থায় মাথা ব্যাথা সহ বিভিন্ন প্রকার জ্বালাযন্ত্রণা নিরাময় করতে লাউ খুবই উপকারী।

তাই গর্ভাবস্থায় আপনি যদি প্রতিদিন অন্তত একবার লাউ জুস করে অথবা রান্না করে খেতে পারেন তাহলে গর্ভাবস্থার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কমানো যেতে পারে।

প্রাকৃতিক ক্ষারীয়:

লাউয়ের রস প্রাকৃতিক ক্ষারীয়, তাই এটি আপনার পেটে অ্যাসিডিক রসের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করতে পারে।

গর্ভাবস্থায় অনেক মহিলা অ্যাসিডিটি এবং বুক জ্বালায় ভোগেন। তাই লাউই হচ্ছে তখন এর একমাত্র সমাধান।

কারণ এটি আপনার পেটে অ্যাসিডিটির প্রভাবকে ভারসাম্য এবং নিরপেক্ষ করে।

গর্ভাবস্থায় আপনার ডায়েটে লাউ কীভাবে অন্তর্ভুক্ত করবেন?

গর্ভকালীন সময়ে লাউয়ের রস খেতে পারেন। তবে লাউ রস করে খাওয়ার ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। বিভিন্ন মাছ দিয়ে এটি রান্না করে খেতে পারেন।

তাছাড়া আপনি এটিকে সালাদেও অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন বা হালুয়া তৈরি করতে পারেন বা ভাজতে পারেন। তবে রান্না করার আগে এটি অবশ্যই ধুয়ে খোসা ছাড়িয়ে নিতে হবে।

রেফারেন্স:
এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট পড়ুন: