যেসব খাবার ওজন কমাতে সাহায্য করে।

ওজন কমাতে আমরা কত কিছু্ই না করি। কেউ ছুটছে জিমে আবার কেউ বা করছে ডায়েটিং। শরীরের অতিরিক্ত ওজন নিয়ে আজকাল অনেকেই চিন্তিত।

সুস্বাস্থ্যের জন্য তো বটেই, শারীরিক সৌন্দর্যের জন্যও নারী-পুরুষ উভয়েরই ওজন কমানো উচিৎ।

এমন কিছু খাবার আছে যেগুলো অনেক সময় ধরে পেট ভরিয়ে রেখে বার বার খাওয়ার প্রবণতা কমিয়ে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।

প্রতিদিনের ডায়েটে কার্বোহাইড্রেট বাদ দিয়ে প্রোটিন যুক্ত ডায়েট রাখুন। অতিরিক্ত মেদ ঝরাতে শরীরচর্চার পাশাপাশি প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবারে জোর দিতে হবে।

আসুন জেনে নেই যেসব যেসব খাবার ওজন কমাতে সাহায্য করে-

ডিম:

ডিম ওজন কমানোর জন্য অন্যতম সেরা খাবার। কারণ ডিম প্রোটিন এবং ফ্যাট বেশি থাকে।

৩০ ওজন বেশি মহিলাদের একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, ব্রেকফাস্টের ডিম খাওয়া, পূর্ণতার অনুভূতি বৃদ্ধি করে।

ডিমে থাকা প্রোটিন আমাদেরকে অনেক সময় ধরে পেট ভরিয়ে রাখতে সহায়তা করে।

এটি কোনও ব্যক্তির সামগ্রিক ক্যালোরি গ্রহণ এবং বার বার খাওয়ার প্রবণতা হ্রাস করতে পারে।

ফলে ওজন কমে পাশাপাশি শক্তিশালী পেশী গঠনে সহায়তা করে। মজার ব্যাপার হল, প্রায় সব পুষ্টিই ডিমের কুসুমে পাওয়া যায়।

শাক:

শাকের মধ্যে রয়েছে ডাটাশাক, পালং শাক, পুঁইশাক, কলমি শাক। ক্যালোরি না বাড়িয়ে খাবারের পরিমাণ বাড়ানোর জন্য শাকসবজি খাওয়া একটি দুর্দান্ত উপায়।

শাক-সবজিতে ক্যালরি এবং ফ্যাট কম এবং ফাইবার উচ্চ পরিমানে থাকে। আমরা সকলেই জানি উচ্চ ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার বেশি খাওয়ার প্রবণতা কমায় যা ওজন কমাতে সহায়তা করে।

ক্রুসীফেরাস সবজি:

ক্রুসিফেরাস সবজির মধ্যে রয়েছে ব্রকলি, ফুলকপি, বাঁধাকপি ইত্যাদি। অন্যান্য সবজির মতো এগুলোতেও প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে এবং খুবই সহজেই পেট ভরে যায়।

ফলে বেশি খাওয়ার প্রবণতা কমে যায় এবং ওজন হ্রাস পায়। এই ধরনের সবজিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন থাকে।

মুরগির মাংস:

মাংস একটি ওজন কমানোর উপযোগী খাবার কারণ এতে প্রোটিন বেশি। ১০০ গ্রাম মুরগিতে ১৬২ ক্যালোরি রয়েছে।

তাই মাংস সেবন ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে এবং স্থূলত্ব প্রতিরোধ করে।

গবেষণায় দেখা গেছে যে আপনার প্রোটিন গ্রহণ দৈনিক ক্যালরির ২৫% পর্যন্ত বাড়িয়ে খাওয়ার অভ্যাস ৬০% কমিয়ে দিতে পারে। ফলে দ্রুত ওজন হ্রাস পায়।

জাম্বুরা:

জাম্বুরাতে ক্যালোরির পরিমাণ কম থাকায় ওজন কমাতে সহায়তা করতে পারে। জাম্বুরাতে রয়েছে প্রোটিন এবং ফাইবার, উভয়ই আপনাকে পেট ভরিয়ে রাখতে সহায়তা করতে পারে।

সুতরাং, আপনার ক্যালোরি গ্রহণ সহজেই কমিয়ে আনার মাধ্যমে ওজন হ্রাস করতে পারেন।

সেদ্ধ আলু:

একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে আলু সর্বোচ্চ পূর্ণতার অনুভূতি দিতে পারে। আলু অনেক্ষণ ধরে পেট ভরিয়ে রেখে খাওয়ার প্রবণতা কমাতে পারে। খাওয়ার প্রবণতা কমার ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।

শিম:

শিম এবং অন্যান্য ডাল ওজন কমানোর জন্য উপকারী। এতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন এবং ফাইবার থাকে, যা অনেক সময় ধরে পেট ভরিয়ে রাখতে সহায়তা করে।

স্যুপ:

এই খাবারটি খেলে শরীরের অন্দরে প্রোটিনের পরিমাণ খুব বেড়ে যায়। সেই সঙ্গে কার্বোহাইড্রেট এবং উপকারি ফ্যাটের মাত্রাও বাড়তে শুরু করে।

ফলে অনেকক্ষণ পর্যন্ত পেট ভরা থাকে। এমনটা হওয়ার কারণে স্বাভাবিকভাবেই বারে বারে খাওয়ার প্রবণতা কমে। সেই সঙ্গে কমে ওজন বৃদ্ধির আশঙ্কাও।

আপেল সিডার ভিনেগার:

বেশ কয়েকটি অধ্যয়ন দেখায় যে ভিনেগার পূর্ণতার অনুভূতি বাড়াতে পারে। এটি আপনাকে কম ক্যালোরি খেতে এবং ওজন হ্রাস করতে সাহায্য করে।

শর্করা সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পর ভিনেগার খেলে দিনের পরবর্তী সময়ে সহজে ক্ষুধা লাগে না।

স্থূলতায় আক্রান্ত ১৭৫ জনের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, প্রতিদিনের আপেল সিডার ভিনেগার গ্রহণের ফলে পেটের মেদ এবং ওজন হ্রাস পায়।

বাদাম:

বাদাম উচ্চ-ক্যালোরিযুক্ত খাবার হওয়ার পরও ওজন হ্রাস করতে পারে।

অতিরিক্ত ওজন আছে এমন মহিলাদের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, বাদাম খাওয়ার ফলে প্রায় তিনগুণ ওজন হ্রাস পেয়েছে এবং কোমরের আকারও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পেয়েছে।

পপকর্ন:

পপকর্নে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে এবং ক্যালোরি থাকে কম। প্রতি কাপ পপকর্নে ৩১ ক্যালোরি রয়েছে।

একটি গবেষণা দেখা গেছে পপকর্ন ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার হওয়ার কারণে অল্পতে পেট ভরে যায় এবং অনেকক্ষণ ক্ষুধা লাগে না। ফলে ওজন কমাতে সহায়তা করে।

দই:

দইতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকায় দই স্থূলত্বের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করে। আমাদের শরীরের চর্বি আমাদের মোটা করার সাথে সাথে অনেক অসুখও বহন করে নিয়ে আসে।

চর্বিতে থাকা কর্টিসল হরমোনটি স্থূলতা বাড়ায় ও আমাদের শরীরে ডেকে আনে বহু রোগ।

ক্যালসিয়াম কর্টিসল হরমোন তৈরিতে বাধা দেয় যা শরীরকে ওজন বৃদ্ধির দিকে নিয়ে যায় না। সঠিক পরিমাণে দই নিয়মিত সেবন করলে ওজন কমাতে এবং ফিটনেস বাড়াতে সহায়তা করে।

শসা:

শসা আমাদের শরীরের অতিরিক্ত চর্বি কমিয়ে ওজন নিয়ন্ত্রণে আনতে সাহায্য করে। শসায় উচ্চমাত্রায় পানি থাকার কারণে অল্প খেলে পেট ভরে যাই, বারবার খাওয়ার প্রবণতাও কমে যায়।

ফলে যাঁরা দেহের ওজন কমাতে চান, তাঁদের জন্য শসা আদর্শ খাবার হিসাবে কাজ করবে।

রেফারেন্স: