বাঁধাকপি বয়স বা তারুণ্য ধরে রাখে, ওজন কমায় ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

প্রকৃতি প্রদত্ত বা সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত যেটাই বলুন না কেন, ফল এবং শাক-সবজিতে রোগ নিরাময়কারী উপাদান রয়েছে।

এগুলোকে আমরা ভিটামিন, মিনারেলস, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিভিন্ন নাম দিয়েছি। তবে আসল কথা হলো, এগুলো আমাদের শরীরকে সুস্থ-সবল রাখতে সাহায্য করে।

Cruciferous-গোত্রের সবজির মধ্যে বাঁধাকপি বা পাতাকপি অন্যতম। শুধু সবজি হিসেবে নয়, জুস হিসেবেও খাওয়া যায় বহুগুণসম্পন্ন বাঁধাকপি।

এতে আছে এ, বি১, বি২, বি৬, ই, সি, কে, ক্যালসিয়াম, আয়রন, আয়োডিন, পটাশিয়াম, সালফারসহ আরও নানা ধরনের প্রয়োজনীয় উপাদান।

বাংলায় বাঁধাকপি বা পাতাকপি, ইংরেজিতে Cabbage। এই সবজিটির বৈজ্ঞানিক নাম Brassica Oleracea -যার মধ্যে ব্রকলি, ফুলকপি এবং Kale অন্তর্ভুক্ত।

আমাদের দেশে শীতকালে বাঁধাকপি সহজলভ্য একটি সবজি। বাজারে হামেশাই পাওয়া যায়। দামও খুব একটা বেশি নয়।

পুষ্টিগুণে ভরপুর বাঁধাকপি সাধারণত সবজি হিসেবে খাওয়া হলেও এর রয়েছে নানান ঔষধি বৈশিষ্ট্য।

সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, নিয়মিত বাঁধাকপি খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি হয়।

কারণ এর মধ্যএ আছে ভিটামিন “সি” ও মিনারেল যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে।

নানা মুখরোচক খাদ্য বানানো হলেও চিকিৎসকদের মতে নিয়মিত বাঁধাকপির রস খেলে মেলে নানা শারীরিক উপকারিতাও।

বিশেষত এই ঠাণ্ডায় শরীরকে চাঙ্গা রাখতে এই ঘরোয়া ঔষধিটির কোনও বিকল্প নেই বললেই চলে। স্তরে স্তরে সাজানো এই গোলাকার সবজিটিতে প্রচুর মাত্রায় আছে ভিটামিন এবং মিনারেল।

সেই সঙ্গে আছে ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, সালফার, ফসফরাস এবং ফলেটের মতো উপকারি উপাদানও, যা নানাভাবে শরীরের গঠনে সাহায্য করে থাকে।

বাঁধাকপি বা বাঁধাকপির রস পান করার উপকারিতা

এখন প্রশ্ন হল, কীভাবে খেলে এই সবজিটি থেকে সর্বোত্তম উপকার পাওয়া যেতে পারে? বিশেষজ্ঞদের মতে রান্না করার সময় অল্প হলেও এই সবজিতে থাকা উপকারি উপাদানগুলো নষ্ট হয়ে যায়।

সে কারণেই অল্প তাপে রান্না করার পাশাপাশি সালাদে বা বাঁধাকপির রস বানিয়ে তা খাওয়া উচিত।

এমনটা করলে সবজিটির ভেতরে থাকা প্রতিটি ভিটামিন এবং মিনারেল আমাদের শরীরে প্রবেশ করার সুযোগ পেয়ে যায়। ফলে মেলে নানা উপকার। আসুন জেনে নেওয়া যাক…

অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টের পরিমাণ বেশি:

বাঁধাকপির রসে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বেশি থাকে, যা এমন পদার্থ যা ফ্রি র‌্যাডিক্যালগুলির কারণে কোষের ক্ষতি হ্রাস করতে সহায়তা করে।

আপনার শরীরে ফ্রি র‌্যাডিকেলগুলির জমা হওয়ার ফলে প্রদাহ এবং রোগ হতে পারে। বাঁধাকপি বিশেষত ভিটামিন “সি” এর উচ্চ পরিমাণে থাকে, এমন একটি পুষ্টি যা আপনার দেহে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

ভিটামিন “সি” ইমিউন স্বাস্থ্য সমর্থন করে এবং একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট হিসাবেও কাজ করে।

লাল বাঁধাকপি অ্যান্থোসায়ানিনসযুক্ত। এই উদ্ভিদের রঙ্গকগুলি লাল বাঁধাকপিটিকে তার লালচে-বেগুনি রঙ দেয় এবং শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যযুক্ত। অ্যান্থোসায়ানিন সমৃদ্ধ ডায়েটগুলি হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস সহ অনেকগুলি সুবিধা দেয়।

অতিরিক্তভাবে, বাঁধাকপির রসে পাওয়া কিছু অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলির অ্যান্টিক্যান্সার বৈশিষ্ট্য থাকতে পারে।

একটি টেস্ট-টিউব সমীক্ষায় দেখা গেছে যে বাঁধাকপির রস মানুষের স্তন ক্যান্সারের কোষে কোষের মৃত্যুকে প্ররোচিত করে। এই প্রভাবটি রসে ইনডোল নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলির ঘনত্বকে দায়ী করা হয়েছে।

ওজন কমায়:

ওজন কমানোর পূর্বশর্তগুলা কি কি? প্রচুর পরিমাণে ফাইবার যা পেট ভরিয়ে রাখে। ক্যালরি কম, চর্বি ও কার্বোহাইড্রেট কম।

বাঁধাকপিতে রয়েছে একেবারে কম মাত্রায় ক্যালরি এবং কার্বোহাইড্রেট। ফলে এটি খেলে ওজন বৃদ্ধির কোনও সম্ভাবনাই থাকে না। বাঁধাকপিতে খুবই সামান্য পরিমাণে কোলেস্টেরল ও চর্বি রয়েছে।

হজম শক্তি বাড়ায়:

পাতাকপি বা বাঁধাকপিতে বিদ্যমান পুষ্টিকর উপাদানগুলো আমাদের হজমশক্তি বাড়ায়। সবথেকে ভালো হয়, যদি বাঁধাকপি ফার্মেন্টেড করে খাওয়া যায়।

বাঁধাকপি কেটে প্রক্রিয়াজাত করে কিছুদিন রেখে দিলে এতে উপকারী ব্যাকটেরিয়া যুক্ত হয়। এটি আমাদের হজম শক্তি বাড়ায়।

এইরকম খাবার হলো স্যুরক্র্যাট। মশলা যুক্ত আর একটি হলো কিমচি যেটি কোরিয়ায় জনপ্রিয়।

বাঁধাকপি যখন উত্তেজিত বা ফার্মেন্টেড হয় তখন এটি প্রাকৃতিক প্রোবায়োটিক তৈরি করে যা আপনার অন্ত্রে থাকা ব্যাকটিরিয়াকে পুষ্ট করে।

এই ব্যাকটিরিয়াগুলি আপনার শরীরকে জীবাণুগুলির সাথে লড়াই করতে, পুষ্টি গ্রহণ করতে, খাদ্য হজম করতে এবং উদ্বেগ নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে।

 রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটায়:

আমরা জানি যে, করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে দরকার শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা। ভিটামিন “সি” একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যেটা আমাদের ইমিউন সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ব্যাবস্থাকে শক্তিশালী করে।

পাতাকপি বা বাঁধাকপিতে ভিটামিন “সি” ছাড়াও আরো কিছু ভিটামিন ও মিনারেলস রয়েছে যেটি এই শীতে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যাবস্থাকে শক্তিশালী করবে। রোগবালাইকে তাড়াবে।

আমাদের শরীরের ভেতরে বেশ কিছু পরিশ্রমী শ্রমিক দিন-রাত কাজ করে চলেছে। ভিটামিন ও মিনারেলস-এর অভাবে এরা যখন কাজ করতে করতে দুর্বল হয়ে পড়ে, তখনই মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে নানা রোগ।

আমাদের শ্রমিকেরা এমন দুর্বল হয়ে পড়ুক এটা আপনি চান না। তাই আজ থেকেই বাঁধাকপি বা বাঁধাকপির রস খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন উপকার মিলবে।

কোষ্টকাঠিন্য দূর করে:

বাঁধাকপি মধ্যে থাকা ফাইবার এবং জলের পরিমাণ কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করতে এবং একটি স্বাস্থ্যকর হজমশক্তি বজায় রাখতে সহায়তা করে।

নিয়মিতভাবে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার পিত্ত এবং মলের মাধ্যমে বিষাক্ত পদার্থ নির্গমন জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বাঁধাকপি হাড় ভালো রাখতে সহায়তা করে:

বাঁধাকপিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও সোডিয়াম যা হাড়ের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে।

এছাড়াও বাঁধাকপিতে উপস্থিত ভিটামিন হাড়কে মজবুত রাখতে সাহায্য করে। যাঁরা নিয়মিত বাঁধাকপি খান তাঁদের বার্ধক্যজনিত হাড়ের সমস্যার সম্ভাবনা হ্রাস পায়।

ত্বকের সৌন্দর্য বাড়ায়:

খাদ্যতালিকায় , বাঁধাকপি, রাখুন কারণ এতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন “সি” ও মিনারেলস। এটি কোলাজেন উৎপাদনে সাহায্য করে। আমাদের ত্বকের বুড়িয়ে যাওয়া রোধ করে, দীর্ঘদিন তারুণ্য ধরে রাখাই কোলাজেনের কাজ। 

হালের ডায়েট ট্রেন্ডে বিশেষভাবে উচ্চারিত হচ্ছে কোলাজেন শব্দটি। নাম জানা থাকলেও অনেকেরই এ বস্তু সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা নেই।

কোলাজেন হলো মানবশরীরের সৃষ্ট প্রাকৃতিক প্রোটিন। আমাদের শরীরের যে প্রোটিনটি খুব বেশি পরিমাণে পাওয়া যায় সেটাই কোলাজেন নামে পরিচিত।

আমাদের শরীরের হাড়, পেশি, অস্থিসন্ধি, চুল, নখ ও ত্বকের গঠনে বিশেষ ভূমিকা রাখে। রক্তনালি, চোখের মণি ও দাঁতেও কোলাজেন থাকে। ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে কোলাজেনের কোনো বিকল্প নেই।

সতর্কতা:

যা কিছু খাবেন পরিমাণমতো খাবেন। আপনার শরীরের অবস্থা বুঝে খাবেন। অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো নয়।

আপনি যদি কোনো জটিল রোগে আক্রান্ত হন বা নিয়মিত কোনো চিকিৎসকের তত্বাবধানে থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করলে বা বিভিন্ন ওষুধ গ্রহণ করলে অবশ্যাই আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাবেন।

সূত্রঃ

medicalnewstoday, healthline