খিরা বা শসা আপনার পানিশুন্যতা দূর ও ত্বক চকচকে করবে। কিভাবে জেনে নিন।

হাইড্রেশন থেকে চকচকে ত্বক। ভাবছেন কিভাবে। এই গরমে প্রতিদিন খিরা বা শসা খেলে হাইড্রেশন বা তৃষ্ঞা যেমন মিটবে তেমনি শসার একাধিক স্বাস্থ্যসুবিধা রয়েছে।

যখন স্বাস্থ্যকর ডায়েটের কথা আসে তখন মন প্রায় অনিবার্যভাবে একটি বাটি সালাদ সম্পর্কে চিন্তা করে।

আপনি অস্বীকার করতে পারবেন না যে, প্রচুর জল সমৃদ্ধ এবং খুব কম ক্যালোরিযুক্ত খিরাই বা শসা আপনার শরীরের প্রয়োজনীয় সমস্ত পুষ্টিগুণে ঠাসা।

খিরাই একটি স্বাস্থ্যকর ও উপকারী সবজি। আমরা খিরা এমনিই খেয়ে থাকি। রান্না ছাড়াই সালাদ হিসেবে সবার প্রিয় একটি ফল বা সবজি।

এই শশার ভেষজ গুনের শেষ নেই। Cucurbitaceae-পরিবারের এই ফলটির বৈজ্ঞানিক নাম Cucumis sativus.

সৌন্দর্য পিপাসু নারী-পুরুষেরা খিরা ত্বকের যত্নে ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়া পরিপাকতন্ত্র সুস্থ রাখতে এবং শরীরের অতিরিক্ত মেদ ঝরাতে খিরা বা শশার বিকল্প নেই।

কাটা শসা আধা কাপ মাত্র ফাইবার ০.৩ গ্রাম এবং ০.৩ গ্রাম প্রোটিন রয়েছে। এতে ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম, ভিটামিন “সি”, ভিটামিন “কে” এবং ম্যাঙ্গানিজ রয়েছে।

দিনে মাত্র একটি শসা খাওয়া দুর্দান্ত হতে পারে। এতে বেশিরভাগ অংশেই জল থাকে।

শসা খাওয়ার উপকারিতা

গরম পড়তেই হকারদের হাঁকডাক শুরু হয়ে গেছে। বাসে, ট্রেনে, শহরের ফুটপাতে। এই খিরাই। গরমের শান্তি খিরাই। কেউবা লাগবে শসা।

স্যার, নিননা শসা। প্রতি পিচ মাত্র ৫ টাকা, ১০ টাকা।  বিট লবন, মরিচের গুঁড়া মাখিয়ে একেবারে রেডি।

আপনার শরীর হাইড্রেটেড থাকবে:

অতিরিক্ত গরমে শরীরের ঘামের সঙ্গে প্রয়োজনীয় পানি বের হয়ে যায় এবং দেখা দেয় পানিশূন্যতা। কখনও কখনও প্রচন্ড গরমে কাজের ফাঁকে পর্যাপ্ত পানি খাওয়া হয় না অনেকেরই।

এই পানির ঘাটতি পূরণের জন্য শসা অতুলনীয়। কারণ শসার ৯৫ ভাগই পানি। তাই শসা শরীরে প্রয়োজনীয় পানির অভাব দূর করে আমাদের সুস্থ্য থাকতে সাহায্য করে।

খিরা বা শশায় বেশিরভাগ জল। অতএব, এটি আপনার শরীরকে দীর্ঘ সময়ের জন্য হাইড্রেটেড রাখবে।

শরীরকে ঠান্ডা রাখতে:

শসা বা খিরাইতে একটি হালকা, সতেজক স্বাদ এবং উচ্চ পানি বা জলের পরিমান রয়েছে।

তাই ডিহাইড্রেশন উপশম করতে সাহায্য করতে পারে এবং গরম আবহাওয়ায় খেতে মনোরম বা মনটা ভালো করে দেয়।

আমরা সবজি হিসাবে, বাইরের দেশে সবজির পাশাপাশি লবণযুক্ত আঁচার হিসাবে খাওয়া হলেও আসলে এটি একটি ফল।

এটি বিউটি পার্লার বা প্রোডাক্টগুলিতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। এটা শরীরের তাপমাত্রা নরমাল রাখতে সাহায্য করে।

এটি বদহজম ও কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করবে:

শসা বা খিরাইতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবারযুক্ত উপাদান থাকে যা কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করে এবং নিয়মিত অন্ত্রের গতিবিধি নিশ্চিত করে।

হজম ও কনস্টিপেশনের সমস্যার সমাধানে ডায়েটে খিরা রাখতে পারেন। কারণ খিরাতে আছে এরেপসিন নামের এনজাইম। 

আলসার গ্যাস্ট্রাইটিস, অ্যাসিডিটির ক্ষেত্রেও তাজা খিরার রস উপকারী। শরীরের পিএইচ সমতা বজায় রাখে খিরা।

ওজন হ্রাস করতে সহায়তা করে:

শসাতে ক্যালোরি কম এবং পুষ্টির পরিমাণ বেশি। আর কি, শসা খাওয়া আপনাকে পূর্ণ বোধ করে এবং ক্ষুধার্ত যন্ত্রণা দূর করে।

শসাতে প্রচুর পরিমাণ পানি এবং কম পরিমাণ ক্যালরি রয়েছে।

এটি রক্তে শর্করার মাত্রা ধরে রাখতে সহায়তা করে:

খিরাই বা শসাগুলি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে আপনাকে সহায়তা করতে পারে। সুতরাং, এটি মূলত ডায়াবেটিস এবং এটি সম্পর্কিত অন্যান্য জটিলতাগুলি প্রতিরোধ করতে পারে।

শসাতে থাকা cucurbitacins ইনসুলিন নিঃসরণ এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে।

এতে থাকা ফাইবার, টাইপ-2 ডায়াবেটিস প্রতিরোধ এবং পরিচালনা করতে সহায়তা করতে পারে।

আপনার প্রতিরোধ ক্ষমতা আরও শক্তিশালী হবে:

খিরাই বা শসাতে যথেষ্ট পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে।  এগুলি ক্ষতিকারক ফ্রি র‌্যাডিক্যালগুলির সংক্রমণ রোধ করে। এমনকি তারা দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকিও হ্রাস করে।

খিরা গ্রহণ আপনার দৃষ্টিশক্তি বাড়াবে:

শসাতেও ভিটামিন এ রয়েছে যা আমাদের দৃষ্টিশক্তিকে উন্নত করে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ:

শসা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে ভূমিকা রাখতে পারে। এটিতে এমন পদার্থ রয়েছে যা রক্তে শর্করাকে হ্রাস করতে বা রক্তের গ্লুকোজকে খুব বেশি বৃদ্ধি থেকে রোধ করতে পারে।

শসা বা খিরাইতে উপস্থিত Cucurbitacins ইনসুলিন নিঃসরণ এবং রক্তে শর্করার প্রক্রিয়াকরণের একটি মূল হরমোন হেপাটিক গ্লাইকোজেনের বিপাক নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।

একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে শসার খোসা ইঁদুরে ডায়াবেটিসের লক্ষণগুলি পরিচালনা করতে সহায়তা করে। এটি এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সামগ্রীর কারণে হতে পারে।

গ্লাইসেমিক ইনডেক্সে (জিআই) শসাগুলি কম স্কোর করে, এর অর্থ তারা রাখতে শর্করা যুক্ত না করে প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে।

ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রনে:

খিরা বা শসাতে থাকা ভিটামিন সি, পটাশিয়াম, ম্যাগনোশিয়াম ও ফাইবার হাই ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রনে রাখতে সাহায্য করে। 

তাছাড়া শশায় রয়েছে স্টেরল নামের একধরণের উপাদান যা কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রনে রাখতে সাহায্য করে। স্টেরল মুটিয়ে যাওয়া রোধ করতেও সাহায্য করে।

চকচকে ত্বক:

ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্যও খিরা খুব ভাল কাজ করে। ত্বক পরিষ্কার রাখতে খিরার স্লাইস, জুস প্রভৃতি বেশ কাজে দেয়।

খিরায় উপস্থিত সিলিকা মালস, কার্টিলেজ, লিগামেন্টের কানেকটিভ টিস্যু গড়ে ওঠে। খনিজ উপাদান সমৃদ্ধ খিরা নখ, দাঁত ও মাড়ির জন্য ভাল।

সতর্কতা

যা কিছু খাবেন পরিমাণমতো খাবেন। আপনার শরীরের অবস্থা বুঝে খাবেন। 

আপনি যদি জটিল কোনো রোগে আক্রান্ত হন বা অন্য কোনো কারণে রেগুলার কোনো মেডিকেল কোর্স-এর মধ্য দিয়ে যান তাহলে অবশ্যই খাওয়ার আগে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।

সূত্রঃ

medicalnewstoday, healthline