করলা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে, ওজন কমাতে, রক্ত ও পেট পরিষ্কারে সহায়তা করে।

বন্ধুরা, করলা তিতা হলেও এর গুন কিন্তু মিঠা। রোগ-ব্যাধিকে সমুদ্রে নিক্ষেপ করতে চান তাহলে আজ থেকেই করলা খাওয়া শুরু করুন।

করলা তেতো হলেও অনেকেরই প্রিয় সবজি এটি। ভর্তা, ভাজি আর তরকারিতে করলার কদর অনেক। তাই খাদ্যতালিকায় নিয়মিত করলা রাখুন।

পুষ্টিবিদদের মতে করলার পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা অনেক। করলা (উস্তে, করল্লা, উচ্ছা, উচ্ছে) এক প্রকার ফল জাতীয় সবজি। ইংরেজিতে একে Balsam pear, alligator pear, bitter gourd, bitter melon, bitter cucumber ইত্যাদি বলা হয়। এই সবজিটির বেজ্ঞানিক নাম Momordica Charantia।

করলা দিয়ে খাবারের আইটেম তৈরি করা খুবই সহজ। তিন-চার টুকরো করে ভাতের সাথেই সিদ্ধ করে নিন। একটু সর্ষের তেল ও লবন দিয়ে করলা মেখে গরম ভাতের সাথে খান।

আপনি করলার প্রেমে পড়ে যাবেন। করলা ভাজি বা করলার চপ আমাদের অনেকেরই খুব পছন্দের। গরম ভাতে কাসুন্দি দিয়ে খেতে খুব মজা লাগে।

এটি ভিটামিন B, ভিটামিন সি, ম্যাগনেসিয়াম, ফোলেট, দস্তা, ফসফরাস, ম্যাঙ্গানিজের একটি দুর্দান্ত উৎস এবং এতে উচ্চ ডায়েট্রিক ফাইবার রয়েছে।

করলাকে সবজি হিসাবে আমরা চিনি কিন্তু এটি কিন্তু একটি ফল।

ইংরেজিতে Bitter gourd বা করোলা, আয়রনে সমৃদ্ধ এবং ব্রোকলির বিটা ক্যারোটিনের দ্বিগুণ, পালং শাকের ক্যালসিয়ামের দ্বিগুণ এবং কলার পটাসিয়ামেরও দ্বিগুন পরিমান রয়েছে এতে।

কাঁচা করলার রস পান করাও স্বাস্থ্য সুবিধায় পূর্ণ কারণ এটিতে প্রয়োজনীয় ভিটামিনের পাশাপাশি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা আমাদের সকলের প্রয়োজন।

রস করে খান ওষুধের মতো কাজ করবে

করলাতে পলিপেপটাইড-পি বা পি-ইনসুলিন নামক ইনসুলিন জাতীয় যৌগ থাকে যা ডায়াবেটিসকে প্রাকৃতিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে।

তাই টাইপ-১ ও টাইপ-২ ডায়াবেটিস-এর রোগীরা করলার রস খেলে উপকৃত হবেন।

ছোট্ট ছোট্ট টুকরো করে কেটে ব্লেন্ডার বা শীল পাটায় পিষে রস করে নিন। তেতো ভাব কমানোর জন্য মধু যোগ করতে পারেন।

একটু লেবুর রসও যোগ করা যায়। সবশেষে, আদার রস ও গোলমরিচ গুঁড়ো যোগ করে স্বাদ আরো বাড়িয়ে নিতে পারেন।

তেতো স্বাদযুক্ত “করলার” উপকারিতা

১০০ গ্রাম করোলাতে ১৩ মিলিগ্রাম সোডিয়াম, ৬০২ গ্রাম পটাসিয়াম, ৭ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট এবং ৩.৬ গ্রাম প্রোটিন সহ প্রায় ৩৪ ক্যালোরি রয়েছে।

নীচে করলা শরীরে যে বিভিন্ন স্বাস্থ্য সুবিধা দিতে পারে তা আলোচনা করা হলো –

রক্ত পরিশোধনকারী হিসাবে কাজ করে:

করলার রসে উপস্থিত অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যগুলি রক্ত ​​থেকে বিষাক্ত পদার্থগুলি সরিয়ে ফেলা এবং এটি বিশুদ্ধ করতে সাহায্য করে।

এটি রক্ত ​​সঞ্চালনের উন্নতি করে এবং ফুসকুড়ি, ব্রণ, সোরিয়াসিস, রক্ত ​​ফোঁড়া এবং এমনকি দেহে ক্যান্সারজনিত কোষগুলির বৃদ্ধিতে বাধা সৃষ্টি করতে সহায়তা করে।

ওজন হ্রাসে সহায়তা করে:

করলার রস খাওয়া বা পান করা শরীরের চর্বি বিপাকের জন্য প্রয়োজনীয় পিত্ত অ্যাসিড নিঃসরণে লিভারকে উদ্দীপিত করে।

এছাড়াও, ১০০ গ্রাম করলার রসে কেবল ১৭ ক্যালোরি থাকে যা ফিটনেস উৎসাহীদের জন্য দুর্দান্ত।

ডায়াবেটিসের জন্য দারুণ:

করলাতে পলিপেপটাইড থাকে যাকে ইনসুলিন জাতীয় যৌগ বলা হয় এবং এতে ডায়াবেটিস বিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এই উপাদানগুলি রক্তে শর্করার মাত্রা হ্রাস করতে সক্রিয়ভাবে সহায়তা করে।

এটি বিপাক এবং শরীরের দ্বারা গ্রহণ করা চিনির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করে ইনসুলিনের মাত্রায় অপ্রত্যাশিত স্পাইক এবং ড্রপ প্রতিরোধে সহায়তা করে।

করলা হাইপোগ্লাইসেমিক এজেন্ট হিসাবে কাজ করে।

এটি দ্রবণীয় ফাইবার সমৃদ্ধ উৎস এবং গ্লাইসেমিক সূচক কম, যা রক্তে শর্করার মাত্রা হ্রাস করতে সহায়তা করে।

করলা অ্যাডিনোসিন মনোফসফেট অ্যাকটিভেটেড প্রোটিন কাইনেজ নামক এনজাইমের মাত্রা বৃদ্ধির মাধ্যমে রক্ত থেকে শরীরের কোষগুলোতে সুগার গ্রহণ করার ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়।

এটি শরীরের কোষের গ্লুকোজের বিপাক ক্রিয়া বাড়ায় ফলে রক্তের সুগারের মাত্রা কমে।

ব্রণের সাথে লড়াই করে :

করলা সেবন করা ব্রণ, দাগ এবং ত্বকের সংক্রমণ থেকে মুক্তি পেতে সহায়তা করে এবং একটি স্বাস্থ্যকর এবং ঝলমলে প্রাণবন্ত ত্বকের জন্য কার্যকরী ভূমিকা রাখে।

হজমের জন্য ভালো ও পেট পরিষ্কার করে:

এটি ডায়েটারি ফাইবারের একটি দুর্দান্ত উৎস। করলার নিয়মিত সেবন কোষ্ঠকাঠিন্য এবং বদহজম নিরাময়ে অবদান রাখে।

করলার বড় গুণ হচ্ছে এটি হজমের জন্য উপকারী। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে এর ভূমিকা আছে। পরিপাকতন্ত্রের জটিলতা দূর করতে নিয়মিত করলা খেতে পারেন।

কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে :

করলা “খারাপ কোলেস্টেরল” এবং ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা স্বাভাবিক রাখে।

ফলস্বরূপ, এটি উচ্চ ঘনত্বের লাইপোপ্রোটিন (এইচডিএল) বা “ভাল কোলেস্টেরল” বৃদ্ধি করে। পটাসিয়াম থাকায় নিয়ন্ত্রণ করে রক্তচাপ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিদিন করলা গ্রহণে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ সহজ হয় এবং প্রতিরোধ হয় রক্তনালিতে চর্বি জমার কারণে হার্ট অ্যাটাকের প্রবণতা

ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করে :

করলা অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট দ্বারা পূর্ণ। এই অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট আমাদের শরীরে ফ্রি-র‌্যাডিকেলগুলির বিস্তার রোধ করতে সহায়তা করে।

জাতীয় এনসিবিআই এ প্রকাশিত গবেষণা অনুসারে করলা কোলন ক্যান্সার গঠনে বাধা দেয়। তিক্ত স্বাদের এই সবজিটির রস অগ্ন্যাশয় ক্যান্সার এবং স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস করে।

এছাড়া করলায় রয়েছে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা সৃষ্টিকারী লুটিন এবং ক্যান্সার প্রতিরোধকারী লাইকোপিন।

হাড় ক্ষয় রোধ করে :

ভিটামিন-কে এবং ভিটামিন-সি সাহায্য করে ক্যালসিয়াম শোষণ, বিশেষত অস্টিওপরোসিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য।

তেতো স্বাদের উস্তে বা উচ্ছে বা করলা হাড়ের খনিজ ঘনত্বের কারণে হাড়ের হাড়ভাঙ্গা রোধে সহায়তা করে।

তারুণ্য ধরে রাখে

করলা উচ্চ রক্তচাপ ও চর্বি কমায়। এর তেতো রস কৃমিনাশক। এটি দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে। এছাড়া এটি ভাইরাসনাশকও।

রক্তশূন্যতায় ভুগছেন—এমন রোগীর উত্তম পথ্য করলা। করলা হিমোগ্লোবিন তৈরি করে শরীরে রক্তের উপাদান বাড়ায়।

করলার ভিটামিন-সি ত্বক ও চুল ভালো রাখে এবং ম্যালেরিয়া জ্বরে স্বস্তি দেয়। মাথাব্যথারও উপশম করে করলা।

এটি শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেয় এবং রক্ত পরিষ্কার করে।

করলার সবচেয়ে বড় গুণ এটি বার্ধক্য ঠেকিয়ে রাখতে সাহায্য করে। তাই করলা খেয়ে ধরে রাখুন তারুণ্য।

সতর্কতা

সবকিছু পরিমাণমতো খাবেন। অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো না। আপনি যদি কোনো রোগে আক্রান্ত হন বা রেগুলার কোনো মেডিকেল কোর্স-এর ভেতর দিয়ে যান তাহলে অবশ্যই আপনার ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাবেন।