অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হল আমাদের শরীরে উৎপাদিত এক ধরণের যৌগ এবং এটি খাবারের মধ্যেও পাওয়া যায়। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কোষকে ফ্রি র্যাডিকেল এর দ্বারা সৃষ্ট ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করে।
শরীরে জমে থাকা ফ্রি র্যাডিকেল অক্সিডেটিভ স্ট্রেস এর কারণ হতে পারে। দীর্ঘস্থায়ী অক্সিডেটিভ স্ট্রেস হৃদরোগ, টাইপ 2 ডায়াবেটিস এবং ক্যান্সারের মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে এবং রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
FRAP খাবারের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সামগ্রী পরিমাপ করে। FRAP মান যত বেশি, খাবারে তত বেশি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে।
জেনে নিন, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার কোনগুলো-
ডার্ক চকোলেট:
পলিফেনোল ও ফ্লাভোনোয়েডের অন্যতম উৎস ডার্ক চকোলেট। ডার্ক চকলেটে খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে।
FRAP বিশ্লেষণের উপর ভিত্তি করে, ডার্ক চকোলেটে প্রতি ১০০ গ্রামে ১৫ mmol পর্যন্ত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে।
তাছাড়া ডার্ক চকোলেটের থাকা কোকো রক্তচাপ হ্রাস করতে সহায়তা করে।
গ্রীন টি:
গ্রীন টিতে সর্বাধিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং উপকারী পলিফেনল রয়েছে। চীনা ও ভারতীয় ঔষুধে গ্রীন টি ব্যবহৃত হয়।
গ্রিন টি রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়ায়, ক্যান্সার প্রতিরোধ করে, উচ্চ রক্তচাপ কমায়, মস্তিষ্কের উন্নতি ঘটায়, চর্বি এবং ডায়াবেটিস ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
এছাড়া গ্রীন টি রক্তের অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের ধারণ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। গ্রীন টি ব্রেস্ট ক্যান্সার, প্রোস্টেট ক্যান্সার, কলোরেক্টাল (Colorectal) ক্যান্সারের ঝুঁকি কমিয়ে দিতে পারে।
পালং শাক:
পালংশাকে উচ্চ পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফাইবার এবং অন্যান্য যৌগ রয়েছে যা ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধিকে দমন করতে পারে। এছাড়া এটি প্রোস্টেট ক্যান্সার ও ব্রেস্ট ক্যান্সার প্রতিরোধে খুবই কার্যকর।
এছাড়াও পালং শাক লুটেইন এবং জেক্সানথিনের একটি দুর্দান্ত উৎস। এই দুটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আপনার চোখকে ক্ষতিকারক ইউভি আলো এবং অন্যান্য ক্ষতিকর আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।
স্ট্রবেরি:
স্ট্রবেরি ভিটামিন “সি” এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। FRAP বিশ্লেষণের ভিত্তিতে, স্ট্রবেরি প্রতি ১০০ গ্রামে ৫.৪ mmol পর্যন্ত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সরবরাহ করে।
তাছাড়া, স্ট্রবেরিতে অ্যান্থোসায়ানিন নামক এক ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা তাদের লাল রঙ দেয়। যে স্ট্রবেরিগুলিতে অ্যান্থোসায়ানিনের পরিমাণ বেশি থাকে সেগুলি বেশি উজ্জ্বল লাল হয়।
গবেষণায় দেখা গেছে যে অ্যান্থোসায়ানিনগুলি “খারাপ” LDL কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে এবং “ভাল” HDL কোলেস্টেরল বাড়িয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে।
মটরশুটি:
মটরশুটি হল একপ্রকার শিম যা অত্যতন্ত স্বাস্থ্যকর। এতে ফাইবার বেশি, যা আপনার অন্ত্রের গতিবিধি নিয়মিত রাখতে সাহায্য করতে পারে। মটরশুটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অন্যতম সেরা উৎস।
একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, মটরশুটি প্রতি ১০০ গ্রামে ২ mmol পর্যন্ত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ধারণ করে।
লাল বাঁধাকপি:
লাল বাঁধাকপি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের একটি দুর্দান্ত উৎস। এটি আবার বেগুনি বাঁধাকপি নামেও পরিচিত। বেগুনি বাঁধাকপিতে উপকারী যৌগ যেমন: সালফোরাফেন এবং অ্যান্থোসায়ানিনস রয়েছে।
বাঁধাকপি প্রতি ১০০ গ্রামে ২.২ mmol পর্যন্ত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সরবরাহ করে। যা সবুজ বাঁধাকপির অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের পরিমাণের চারগুণেরও বেশি। লাল বাঁধাকপিতে রয়েছে অ্যান্থোসায়ানিনস যা বাঁধাকপিটাকে লাল রঙ দেয়।
এই অ্যান্থোসায়ানিনগুলির বেশ কয়েকটি স্বাস্থ্য সুবিধার মধ্যে অন্যতম হলো এটি প্রদাহ কমাতে পারে, হৃদরোগের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিতে পারে এবং কিছু ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে পারে।
বিট:
বিট ফাইবার, পটাসিয়াম, আয়রন, ফোলেট এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর একটি দুর্দান্ত উৎস। FRAP বিশ্লেষণের উপর ভিত্তি করে, বীট প্রতি ১০০ গ্রামে ১.৭ mmol পর্যন্ত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ধারণ করে।
বেটালাইন নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের গ্রুপ বীটকে লালচে রঙ দেয়। বেশ কয়েকটি টেস্ট-টিউব গবেষণায় কোলন এবং পাচনতন্ত্রের ক্যান্সারের ঝুঁকি কম হওয়ার সাথে বেটালাইনকে যুক্ত রয়েছে।