পাকা আম স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে, ক্যান্সার প্রতিরোধী ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
আমের একটি সাধারণ ডাক নাম হল: ফলের রাজা। সুস্বাদু, রসে ভরা পাকা আমের অসাধারণ স্বাদ আমরা যখন গ্রহণ করি তখন প্রতিটি কামড়ের সাথে আসা অসীম স্বাস্থ্য সুবিধার কথা আমরা ভাবি না।
লোভে পাপ পাপে মৃত্যু একটা কথা প্রচলিত থাকলেও আমের ক্ষেত্রে লোভ থাকা ভালো।
কারণ-মিষ্টত্ব, সুগন্ধ ও অসাধারণ স্বাদের বাইরে পাকা আমে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন, খনিজ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা আমাদের সর্বোত্তম স্বাস্থ্য নিশ্চিত করে।
ফলের রাজা আমের আদি আবাসস্থল হলো ইন্ডিয়া। উত্তর-পূর্ব ভারত, বাংলাদেশ ও মায়ানমারে প্রায় ২৫-৩০ মিলিয়ন বছর আগে সর্বপ্রথম আমের চাষ করা হয়।
সত্যি বলতে, শৈশবের সেই মধুর দিনগুলো কিভাবে ভুলি। শৈশবে ঝড়ের পরে আম কুঁড়াতে যাওয়া ভোলার মতো নয়।
স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর চিপস, চকলেট, জুস, বিস্কুট, কেক, আইসক্রিম ইত্যাদি ২-৩ বছর বাচ্চা থেকে শুরু করে স্কুল পড়ুয়া বাচ্চাদের প্রতিদিনের খাবার হয়ে দাড়িয়েছে।
আর্টিফিশিয়াল রং, সেন্ট, বিভিন্ন কেমিক্যাল দিয়ে বানানো এসব খাবার বাচ্চাদের না খাইয়ে পাকা আম খেতে দিন। এতে শরীরের পুষ্টির চাহিদা পুরণের পাশাপাশি পড়াশোনায় মনোযোগ বাড়বে।
একদিনে আমি সর্বোচ্ছ কয়টি আম খেতে পারি?
পরিমিততা বা সংযম হলো সমাধানের পথ। প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৩৩০ গ্রামই যথেষ্ট। তবে অনেক দিন পরে একদিন খেলাম সেক্ষেত্রে এটা না মানলেও চলবে।
যখন আপনি প্রতিদিন খাচ্ছেন তখন এটি মেনে চলুন। আমে অন্যান্য অনেক ফলের চেয়ে সুগার বেশি থাকে।
আপনি যদি ডায়াবেটিসসহ অন্য কোনো জটিল রোগে ভুগে থাকেন তাহলে অবশ্যাই আপনার ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাবেন।
রাতে কি আম খাওয়া যায়?
আম অনিদ্রা প্রতিরোধে এবং রাতে আরও ভালো ঘুমের জন্য সহায়তা করে। কিছু কিছু দেশে আমকে প্রাকৃতিকভাবে ঘুম সহায়তা কারক হিসাবে ঘুমাতে যাওয়ার ঠিক আগে আম খাওয়া হয়।
আমের পুষ্টি উপাদান
আমে ক্যালরি কম তবে অন্যান্য পুষ্টিতে পরিপূর্ণ। নিচে আমের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান দেওয়া হলো –
- ক্যালোরি: ৯৯
- ডায়েটারি ফাইবার: ২.৬ গ্রাম
- ভিটামিন সি: ৬৬% (RDI)
- ফোলেট: ১৮% (RDI)
- ভিটামিন “এ”: ১০% (RDI)
পাকা আমের উপকারীতা
পাকা আমে অনেক পুষ্টি উপাদান রয়েছে যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। নিচে পাকা আমের স্বাস্থ্য উপকারীতা আলোচনা করা হলো –
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি:
নিউট্রিয়েন্টস জার্নাল কতৃক প্রকাশিত একটি গবেষণায় বলা হয়েছে আমে বিদ্যমান ভিটামিন ও অন্যান্য উপাদান এতটা স্বতন্ত্র ও চিত্তাকর্ষক যা আমাদের গোটা স্বাস্থ্যের উপর খেয়াল রাখে।
পাকা আম পটাসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ এবং উচ্চ রক্তচাপের জন্য এটি একটি দুর্দান্ত প্রতিকার। এছাড়া পাকা আমে সেলেনিয়াম, ক্যালসিয়াম, আয়রন এবং ফসফরাস রয়েছে।
পাকা আমকে ভিটামিনের পাওয়ার হাউস বলা হয়। এতে রিবোফ্লাবিন, ভিটামিন B৬, ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন ই, ভিটামিন কে, নিয়াসিন, ফোলেট, থিয়ামিন এবং প্যানটোথেনিক অ্যাসিড পাওয়া যায়। এগুলো রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
ক্যান্সার প্রতিরোধী:
আমে ইসোকুয়েরসিট্রিন, কোয়ারসেটিন, অস্ট্রাগালিন, গ্যালিক অ্যাসিড, ফিসেটিন এবং মিথাইল গ্যালেট্ অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমূহ রয়েছে।
যেগুলো স্তন, কোলন, লিউকেমিয়া ও প্রস্টেট ক্যান্সার থেকে আমাদের দেহকে রক্ষা করে।
কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে:
আপনি একটা আম খেলেন মানে আপনি প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি, ফাইবার ও পেক্টিন গ্রহণ করলেন। এই উপাদানগুলো আপনাকে সিরাম কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে রাখতে সাহায্য করে।
এছাড়া আম পটাসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়ামেরও ভালো উৎস যা আমাদের রক্তচাপ ও হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক রাখে।
গর্ভবতী মায়েদের জন্য:
গর্ভবতী মায়েদের গর্ভকালীন সময়ে অতিরিক্ত আয়রন ও ক্যালসিয়ামের দরকার হয়।
পাকা আম গর্ভবতী মায়েদের আয়রন ও ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণের সর্বোত্তম একটি খাবার।
এছাড়া মায়েদের মেনোপজ বা রজোবন্ধ সময়েও এটি আইরন ও ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণ করে। এছাড়া রক্তশুন্যতা দূর করতেও পাকা আম কার্যকরী।
ওজন হ্রাস ও হজম শক্তি বৃদ্ধিতে:
আমে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন রয়েছে। আমরা সবাই জানি, আমে প্রচুর আঁশ (তন্তু) থাকে। এই আঁশ আমাদের পাকস্থলীর হজম প্রক্রিয়ার উন্নতি সাধন করে।
অতিরিক্ত ক্যালরিকে কমিয়ে শরীরের ওজন হ্রাসে সহায়তা করে। আমে যে এনজাইমগুলি পাওয়া যাই সেগুলি প্রোটিন ভাঙ্গতে সাহায্য করে ও হজমে সহায়তা করে।
Proboitic dietary ফাইবার, খনিজ ও ভিটামিন সমৃদ্ধ ফল “পাকা আম” হজম শক্তি বৃদ্ধির সর্বোত্তম একটি খাবার।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে:
টক জাতীয় ফল সবসময় ডায়াবেটিস রোগীর জন্য ভালো। আম এবং আমের পাতা ডায়াবেটিস রোগীর জন্য একটু বেশি ভালো।
গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, আম এবং আমের পাতায় পাওয়া মানজিফেরিন যৌগটিতে এন্টি ডায়াবেটিস, এন্টিহাইপেরলিপিডেমিক ও এন্টিএথেরোজেনিক বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান।
আম অতি মিষ্টি এবং এতে চিনির পরিমান বেশি হওয়া সত্বেও ভয়ের কিছু নেই। অতি মিষ্টি আম পরিমাণ মতো খান, টক আম বেশী করে খান।
কামোদ্দীপক খাবার:
পাকা আমের আরো একটি পরিচিতি রয়েছে। অনেক মানুষ পাকা আমকে “প্রেমের ফল” বা “ভালোবাসার ফল” বলে থাকেন।
পুরুষের পুরুষত্ব বা বীরত্ব বৃদ্ধি করার ক্ষমতা রয়েছে।
আমের একটি নির্দিষ্ট পুষ্টি ভিটামিন ই রয়েছে যা সেক্স হরমোনগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং সেক্স ড্রাইভকে বাড়িয়ে তোলে।
মনোযোগ ও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি:
পাকা আমে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি, বি ও ফোলেট রয়েছে যেগুলি আমাদের মস্তিস্কের ফাংশন সঠিকভাবে পরিচালনা ও উন্নতির জন্য অতীব প্রয়োজনীয়।
নার্ভ-এর কার্যকারীতা ঠিক রাখতে ও সুস্থ্য মস্তৃষ্কের জন্য পাকা আম খাদ্য তালিকায় রাখুন। আম গ্লুটামিক এসিড সমৃদ্ধ যা মস্তিস্কের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আলফা-অ্যামিনো অ্যাসিড।
যেসব শিশুরা পড়াশোনায় অমনোযোগী তাদের পড়াশোনায় মনোযোগ বৃদ্ধি ও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির জন্য পাকা আম খেতে দিন।
চোখের জন্য ভালো:
চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে আপনার ডায়েটে আম অন্তর্ভুক্ত করুন। আমগুলি বিটা ক্যারোটিন সমৃদ্ধ যা ভিটামিন এ উৎপাদন করতে সহায়তা করে।
বিটা ক্যারোটিন শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট যা দৃষ্টিশক্তি উন্নত করতে, চোখের সামগ্রিক স্বাস্থ্যকে বাড়িয়ে তোলে এবং বয়স-সম্পর্কিত ম্যাকুলার অবক্ষয় বা দৃষ্টি হ্রাস রোধ করে।
ব্রণ কমায় এবং ত্বক ও চুল ভালো রাখে:
পাকা আম ব্রণ কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া আমাদের ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। প্রচুর বিটা ক্যারোটিন থাকায় এজমা (asthma) প্রতিরোধ করে।
সতর্কতা
কোনোকিছু অতিরিক্ত খাওয়া ঠিক নয়। অতিরিক্ত খেয়ে এলার্জি হলে কম করে খান। আমের খোঁসা ও জুস-এ অনেকের এলার্জিক প্রবলেম দেখা দেয়। এজন্য যার সমস্যা সে এড়িয়ে চলুন।