পনির ওজন কমাতে, পেশী বৃদ্ধিতে ও হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য দারুন কার্যকরী।
রান্নার খুবই একটি জনপ্রিয় ও স্বাস্থ্যকর পদ হল পনির। খেতে খুবই সুস্বাদু রান্না করাও সহজ। যারা নিরামিষ খাবার খায় তাদের ডায়েটে আমিষের চাহিদা পূরণ করতে পনিরের বিভিন্ন পদ রাখা যেতে পারে।
পনির ইংরেজিতে Paneer, Cottage cheese নামে পরিচিত। হালকা করে তেলে ভেজে নিয়ে জিরা বাটা, আদা বাটা, মরিচ বাটা এবং টমেটো কুচি দিয়ে ভালো করে কষিয়ে নিয়ে তার মধ্যে ভেজে রাখা পনিরের টুকরো গুলো দিয়ে আস্তে একটু নেড়ে চেড়ে পানি ঢেলে ঢেকে রাখুন। তারপর নামিয়ে নেওয়ার আগে হালকা করে একটু গরম মসলা দিন। এছাড়া পিয়াজ রসুন দিয়ে মাংসের মতো করে রান্না করতে পারেন।
পনির কীভাবে তৈরি হয়?
পনির তৈরি করা সহজ এমনকি এটি বাড়িতে তৈরি করা যায়। পনির প্রস্তুত করার জন্য ফুটন্ত দুধে লেবুর রস অথবা ভিনিগার মিশিয়ে দুধ থেকে ছানা করতে হবে। তারপর ছানা থেকে পানি আলাদা করে ছানার মণ্ডটিকে ঠান্ডা পানিতে ২-৩ ঘণ্টা ডুবিয়ে রাখতে হবে।
তারপর পানি শুকিয়ে নেওয়ার জন্য প্রায় ২০ মিনিট ধরে কোন ভারী কিছু দিয়ে চেপে রাখতে হবে। পনির তৈরি করার সময় এতে লবণ যোগ করা হয়।
পনিরের পুষ্টিগুণ
নিচে পনিরের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টিগুণ দেওয়া হলো –
- ক্যালোরি: ১৬৩
- প্রোটিন: ২৮ গ্রাম
- ফ্যাট: ২.৩ গ্রাম
- ফসফরাস: ২৪% (RDI)
- সোডিয়াম: ৩০%
- সেলেনিয়াম: ৩২%
- ভিটামিন বি-12: ৫৯%
- রিবোফ্লাভিন: ২৯%
- ক্যালসিয়াম: ১১%
- ফোলেট: ৭%
পনির খাওয়ার উপকারিতা
এটিতে ভিটামিন বি-6, কোলাইন, জিংক এবং কপার অল্প পরিমাণ রয়েছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, পনিরের মধ্যে ৭০% ক্যালরির রয়েছে। নিচে পনির খাওয়ার স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
ওজন কমাতে সহায়তা করে:
ওজন কমানোর ডায়েটে প্রায়শই পনিরকে গুরুত্ব দেওয়া হয়ে থাকে। কারণ এতে উচ্চ পরিমাণে প্রোটিন এবং কম ক্যালোরি রয়েছে।
একটি সমীক্ষায় এমন লোকদের অনুসরণ করা হয়েছিল যারা ১ বছর ধরে পনিরের মতো উচ্চ প্রোটিনযুক্ত খাবারের একটি ডায়েট বজায় রেখেছিলেন। এই সমীক্ষা থেকে দেখা যায় উচ্চ প্রোটিনযুক্ত ডায়েটের কারণে মহিলাদের ২.৮ কেজি এবং পুরুষদের ১.৪ কেজি শরীরের ওজন হ্রাস পেয়েছে।
পনিরে কেসিন (casein) জাতীয় প্রোটিন রয়েছে যা পেট ভরিয়ে রাখতে সহায়তা করে। এতে বার বার খাওয়ার প্রবণতা কমে ফলে ওজন হ্রাস পায়।
ইনসুলিন নিঃসৃত হতে সহায়তা করে:
পনির ইনসুলিন নিঃসৃত হতে সহায়তা করে। ইনসুলিন নিঃসৃত না হওয়ার ফলে টাইপ-2 ডায়াবেটিস এবং হার্টের রোগের বিকাশ ঘটতে পারে। তবে, দুগ্ধজাত পণ্যগুলিতে থাকা ক্যালসিয়াম ইনসুলিন নিঃসৃত হতে সহায়তা করে মনে করা হয়। একটি সমীক্ষায় পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যে, দুগ্ধজাত খাবার খাওয়ার ফলে ইনসুলিন নিঃসৃত না হওয়ার ঝুঁকি ২১% হ্রাস পেয়েছে।
আমিষের চাহিদা পূরণ করে:
নিরামিষভোজীদের খাদ্য তালিকায় আমিষের চাহিদা পূরণ করতে পনির দুর্দান্ত। নিরামিষীদের আমিষের চাহিদা ৭০% পর্যন্ত পূরণ করতে পারে পনির। তাই নিরামিষভোজীরা আমিষের চাহিদা পূরণ করতে খাদ্যতালিকায় পনির রাখতে পারেন।
হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো:
ক্যালসিয়াম ছাড়াও পনির ফসফরাস এবং প্রোটিনের একটি ভাল উৎস। এই পুষ্টি উপাদান গুলো হাড়ের স্বাস্থ্যে ভালো রাখতে সাহায্য করে। গর্ভবতী ও প্রসূতিদের জন্য পনির খাওয়া ভালো কারণ এতে ফোলেট রয়েছে। শিশুদের জন্যও পনির ভালো।
হজমে সহায়তা করে:
পনির হজমে সহায়তা করতে পারে। পনিরে অল্প পরিমাণে ফসফরাস রয়েছে যা হজম স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে এবং মলত্যাগে সহায়তা করে। এছাড়া পনিরে ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে যা কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করতে পারে। ম্যাগনেসিয়াম মলে পানির পরিমাণ বৃদ্ধি করে ফলে মল নরম হয় এবং অন্ত্রের গতি বিধি ঠিক থাকে।
পেশী শক্তিশালী করে:
পনির যারা নিয়মিত অনুশীলন করেন তাদের জন্য ভালো। উচ্চ প্রোটিনযুক্ত খাবার পেশী বৃদ্ধি করতে সহায়তা করতে পারে। পনির কেসিন নামক প্রোটিন সমৃদ্ধ। কেসিন প্রোটিন আমাদের শরীর দ্বারা আস্তে আস্তে শোষিত হয়, পেশী বৃদ্ধি করে এবং পেশীর ভাঙ্গন রোধে সহায়তা করে।
সতর্কতা:
যেহেতু কিছু কিছু পনিরে লবণ থাকে। তাই কম লবণ যুক্ত পনির বেছে নিতে হবে। কারণ অতিরিক্ত লবণ অর্থাৎ সোডিয়াম গ্রহণ হার্টের রোগের ঝুঁকি ও রক্তচাপ বাড়িয়ে দিতে পারে। এছাড়া আপনি যদি জটিল কোনো রোগে আক্রান্ত হন বা অন্য কোনো কারণে রেগুলার কোনো মেডিকেল কোর্স-এর মধ্য দিয়ে যান তাহলে অবশ্যই খাওয়ার আগে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।