ধনিয়া হজমে সহায়ক, সংক্রমণ প্রতিরোধী ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

রান্নায় ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত এবং খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি মসলা ধনিয়া। রান্নাঘরে জনপ্রিয় মশলা হিসাবে এর ব্যাবহার ছাড়াও ধনিয়া বীজ ঔষধি গুণাগুণের জন্যও পরিচিত। ধনিয়া এমন একটি ঔষধি মসলা যার গুনের কারণে আন্তর্জাতিক সব ধরণের খাবারে এটি ব্যবহৃত হয়।

ঔষধি গুণের পাশাপাশি সুন্দর ঘ্রাণ রয়েছে। তবে ধনিয়ে তেলে ফোঁড়ন হিসাবে দিলে এর ঘ্রাণ হ্রাস পায়। তাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই মসলা কাঁচা অবস্থায় রান্নাতে দেওয়া হয়।

ধনিয়া হজম শক্তি উন্নত করতে, বমি বমি ভাব, অন্ত্রের গ্যাস সহ যেকোনো পেটের সমস্যার জন্য খুবই উপকারী।

এটি হাম, হেমোরয়েডস, দাঁত ব্যথা, কৃমি এবং জয়েন্টে ব্যথার পাশাপাশি ব্যাকটিরিয়া এবং ছত্রাকজনিত সংক্রমণের জন্যও ব্যবহৃত হয়।

ধনিয়া ইংরেজিতে coriander seeds ও বৈজ্ঞানিক নাম Coriandrum sativum. এটি দক্ষিণ ইউরোপ, উত্তর আফ্রিকা এবং পশ্চিম এশিয়া থেকে উদ্ভূত বলে জানা যায়। আয়ুর্বেদে, এটি প্রায়শই পাকস্থলীর সাথে সম্পর্কিত অসুস্থ্যতার জন্য সুপারিশ করা হয়।

ধনিয়ার উপকারীতা

ধনিয়ার উপকারীতা নিচে দেওয়া হলো –

রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে:

রক্তে উচ্চ মাত্রার শর্করা, টাইপ-2 ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। তাই আমাদের রক্তের শর্করার মাত্রা ঠিক রাখা অতীব জরুরী।

এক্ষেত্রে ধনিয়া এবং ধনিয়া তেল রক্তে শর্করার মাত্রা হ্রাস করতে সহায়তা করতে পারে।

গবেষণায় দেখা গেছে যে, ধনিয়া বীজের নির্যাস রক্তের সুগার হ্রাস করে এবং ইনসুলিন নিঃসরণ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে:

আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারে এমন কয়েকটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ধনিয়াতে রয়েছে। পাশাপাশি এই অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট, ফ্রি র‌্যাডিক্যালগুলির কারণে সেলুলার ক্ষতি প্রতিরোধ করতে পারে।

টেস্ট-টিউব এবং অ্যানিম্যাল স্টাডিজ অনুসারে এই যৌগগুলির মধ্যে টের্পিনিন, কোরেসেটিন এবং টোকোফেরল অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যার মধ্যে এন্টিক্যান্সার, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং নিউরোপ্রোটেক্টিভ প্রভাব থাকতে পারে।

একটি টেস্ট-টিউব সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, ধনিয়াতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টগুলি প্রদাহ হ্রাস করে, ফুসফুস ক্যান্সার, প্রোস্টেট ক্যান্সার, স্তন ক্যান্সার এবং কোলন ক্যান্সারের কোষগুলির বৃদ্ধি ধীর করে দেয়।

হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো:

কিছু টেস্ট-টিউব সমীক্ষায় পরামর্শ দেওয়া হয় যে ধনিয়া হার্টের রোগের ঝুঁকির কারণগুলি যেমন- উচ্চ রক্তচাপ এবং LDL (খারাপ) কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস করতে পারে।

এছাড়া ধনিয়া মূত্রবর্ধক হিসাবে কাজ করে, ফলে আমাদের শরীরের থেকে অতিরিক্ত সোডিয়াম বের হয়ে যায়। যা রক্তচাপকে হ্রাস করতে পারে।

হজম স্বাস্থ্যের জন্য ভালো:

ধনিয়া হজমে সমস্যা দূর করতে পারে। জ্বালাময়ী আন্ত্রিক সিন্ড্রোমসহ ৩২ জন লোকের মধ্যে ৮-সপ্তাহের এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, ধনিয়াযুক্ত ভেষজ ঔষধের ৩০ ফোঁটা রোজ তিনবার খেয়ে পেটে ব্যথা, ফোলাভাব এবং অস্বস্তি থেকে উপশম হয়েছে।

তাই যারা বদহজমের সমস্যায় ভুগছেন তারা খাবারের সঙ্গে অথবা সরাসরি ধনিয়া বীজ খাওয়া শুরু করুন। ভালো ফল পাবেন।

সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে:

ধনিয়াতে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল যৌগ রয়েছে যা নির্দিষ্ট সংক্রমণ এবং খাদ্যজনিত অসুস্থতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করতে পারে।

ধনিয়াতে মিশ্রিত ডোডেনসাল সালমনেল্লার মতো ব্যাকটেরিয়াগুলোর সাথে লড়াই করে যা প্রাণঘাতী খাদ্যের বিষক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।

একটি টেস্ট-টিউব সমীক্ষায় জানা গেছে যে, ধনিয়া যা মূত্রনালীর সংক্রমণের জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে।

ত্বককে রক্ষা করতে পারে:

ধনিয়া ডার্মাটাইটিসের মতো হালকা ফুসকুড়ি সহ ত্বকের বেশ কয়েকটি সুবিধা থাকতে পারে।

আয়ুর্বেদের করা একটি গবেষণা অনুসারে ধনিয়া এন্টিসেপটিক বৈশিষ্ট্যযুক্ত হওয়ায় একজিমা, চুলকানি, ফুসকুড়ি এবং প্রদাহের মতো বিভিন্ন ত্বকের রোগ নিরাময়ে বেশ কার্যকর। এগুলি মুখের আলসার এবং ঘা নিরাময়ের জন্যও পরিচিত।

বাত ও বাতজনিত রোগ প্রতিরোধ:

ধনিয়াতে লিনোলিক অ্যাসিড, সিনিয়োল, এন্টি-আর্থ্রাইটিক এবং অ্যান্টি-রিউম্যাটিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। তাই নিয়মিত ধনিয়া ভিজানো পানি খেলে জয়েন্টে প্রদাহ, ব্যথা এবং ফোলাভাব কমে যায়।

এক গ্লাস পানিতে রাত্রে পুরো এক চামচ ভিজিয়ে রাখুন। সকালে ওঠে পানি ছেঁকে নিয়ে পান করুন।

ঠান্ডা ও ফ্লু প্রতিরোধ করে:

ঠান্ডা এবং ফ্লু কমাতে ধনিয়া দুর্দান্ত। এটি কোলাজেনের উৎপাদনকে বাড়িয়ে তোলে যা একরকমভাবে ক্ষত নিরাময় করে, টিস্যুগুলিকে সুস্থ্য করে তোলে এবং সাধারণ সর্দি এবং ফ্লু প্রতিরোধ করে।

এছাড়া ধনিয়াতে উপস্থিত ভিটামিন “সি” শরীরকে সুস্থ্য রাখে।

সতর্কতা

আপনি যদি জটিল কোনো রোগে আক্রান্ত হন বা অন্য কোনো কারণে রেগুলার কোনো মেডিকেল কোর্স-এর মধ্য দিয়ে যান তাহলে অবশ্যই খাওয়ার আগে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।

সূত্র:হেলথ লাইন, টাইমস অফ ইন্ডিয়া