একজিমা কি? একজিমা কেন হয়?

একজিমা (ইংরেজি: Eczema) একটি চর্মরোগ। এটি বেশ যন্ত্রণাদায়ক। এই চর্মরোগের কারণে ত্বকের বিভিন্ন স্থানে ফুসকুড়ি, চুলকানি, লালচে র‍্যাশ ইত্যাদি দেখা দেয়। সময় মতো ব্যবস্থা না নিলে ধীরে ধীরে আক্রান্ত স্থানের ক্ষত আরও বাড়তে থাকে।

একজিমা কী?
অ্যাটোপিক ডার্মাটাইটিস বা একজিমা ত্বকের এক ধরণের প্রদাহ৷ এর ফলে ত্বক প্রচুর চুলকায়, লালচে হয়ে যায়, ফুলে উঠে, ত্বক ফেটে যায় এবং চুলকানোর ফলে আক্রান্ত স্থান থেকে কখনও কখনও পানির মত তরল পদার্থ বের হয়ে আসে৷ পরবর্তীতে সেখানে কালো স্পট পড়তেও দেখা যায়৷

শিশুদের ক্ষেত্রে পুরো শরীরেই চুলকানি থাকে৷ বয়স বাড়ার সাথে সাথে হাঁটুর পিছনের অংশ, কনুইয়ের সামনের অংশগুলি বেশি আক্রান্ত হয়৷ প্রাপ্ত বয়স্কদের হাত ও পা বেশি আক্রান্ত হয়৷ এছাড়া শরীরের অন্যস্থানও আক্রান্ত হতে পারে৷

একজিমা কেন হয়?

একজিমার প্রকৃত কারণ এখনো অজানা৷ তবে ধারণা করা হয় জেনেটিক কারণ, এলার্জি ও ইমিউন সিস্টেমের কারণে এটি হতে পারে৷ বিভিন্ন পরিবেশে, ধুলোবালি, শুস্ক আবহাওয়া ও বিশেষ কিছু খাবারের কারণে এই রোগের প্রকটতা বেড়ে যায়৷

যেহেতু রোগের প্রকৃত কারণ এখনও অজানা, সেহেতু এর সুনির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই যার দ্বারা রোগটি নিরাময় করা যায়৷ তবে, চিকিৎসার মাধ্যমে এর প্রকটতা নিয়ন্ত্রনে রাখা হয়৷

একজিমা দূর করার প্রাকৃতিক উপায়

নারিকেল তেল:

নারিকেল তেল একজিমা প্রতিরোধের অন্যতম প্রাকৃতিক উপাদান। নারিকেল তেলে অ্যান্টি-ফাঙ্গাল, অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এসব বৈশিষ্ট্য এর কারণে নারিকেল তেল চুলকানির বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করে এবং ত্বকে শীতল প্রভাব তৈরি করে।

হলুদ:

হলুদ এমন একটি প্রাকৃতিক ভেষজ যা ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা মোকাবেলার জন্য ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। ২০১০ সালে চর্মরোগ বিদ্যায় জার্নাল অফ ড্রাগস-এর ইস্যুতে প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, ত্বকের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সামগ্রীর কারণে হলুদ প্রাকৃতিক একজিমা ড্রাগের বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। এছাড়াও, হলুদের সক্রিয় উপাদান কারকুমিনে রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং ব্যাকটিরিয়াঘটিত বৈশিষ্ট্য যা প্রদাহ এবং চুলকানি ত্বকের চিকিৎসা করতে সহায়তা করে।

অ্যালোভেরা জেল:

অ্যালোভেরা জেল একজিমা প্রতিরোধের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। অ্যালোভেরায় অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা চুলকানি প্রশমিত করতে সহায়তা করে। এছাড়াও, অ্যালোভেরার অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্যগুলি আরও ত্বকের অন্যান্য সংক্রমণ রোধ করতে পারে এবং ত্বককে হাইড্রেট করতে এবং আর্দ্র রাখতে পারে।

টাটকা অ্যালোভেরার পাতা থেকে জেল বের করুন। তারপর এই জেলটি সরাসরি আক্রান্ত ত্বকে লাগান। শুকানোর জন্য কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন। তারপরে হালকা গরম জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। চুলকানি কমে যাওয়া অবধি বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে দিনে এই সহজ পদ্ধতিটি ব্যবহার করুন।

নিমপাতা:

আয়ুর্বেদে নিমপাতাকে “স্কিনের রানী” বলা হয়। স্কিনের যেকোনো সমস্যায় নিমপাতা মহাঔষধ হিসাবে কাজ করে। নিমপাতা একজিমা প্রতিরোধের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। নিমপাতায় অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা চুলকানি প্রশমিত করতে সহায়তা করে।

এছাড়াও যেসব পরিবেশে বা খাবারের কারণে চুলকানি হয় তা পরিহার করা৷ ধুলোবালি, রোদ, সিগারেটের ধোঁয়া এড়িয়ে চলা৷ সুঁতি কাপড় পরিধান করা৷ সাবান, স্যাভলন পরিহার করা। এবং গোসলে ঠান্ডা পানির পরিবর্তে কুসুম গরম পানি ব্যবহার করা৷