সূর্যমুখী তেল পুষ্টিগুণে ভরপুর, হার্টের জন্য ভালো ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

প্রকৃতিতে অসাধারণ এক সৌন্দর্য বিশিষ্ট উদ্ভিদ সূর্যমুখী। পাগল করা সুন্দর তার রূপ। সূর্যমুখী দেখতে শুধু রূপময় নয় এটি গুণেও অনন্য। সূর্যমুখীর বীজ থেকে তৈরি তেল স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী।

অন্যান্য তেলে যেসব ক্ষতিকারক উপাদান (বিশেষ করে কোলেস্টেরল) থাকে সূর্যমুখী তেলে তা নেই।

খাবার রান্নার জন্য এটি খুবই স্বাস্থ্যকর। যেকোনো রান্নার সাথেই আমরা এ তেলটি ব্যবহার করতে পারি। এ তেলের রয়েছে অনেক গুনাগুন যা আমাদের হার্টকে ভালো রাখে। সেই সাথে আমাদের সবসময় সুস্থ্য ও স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে।

এছাড়াও প্রচুর পরিমাণে প্রাণশক্তি থাকায় সূর্যমুখী তেল (Sunflower Oil) আমাদের শরীরের দুর্বলতা কাটাতে অত্যন্ত কার্যকর। এটি প্রায়শই একটি স্বাস্থ্যকর তেল হিসাবে বিবেচিত হয়, কারণ এতে অসম্পৃক্ত ফ্যাট থাকে যা হার্টের রোগের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।

সূর্যমুখী তেলের বিশেষত:

এই তেলে প্রোটিন, কার্বস, কোলেস্টেরল বা সোডিয়াম থাকে না। এর মধ্যে রয়েছে লিনোলিক অ্যাসিড, যা সাধারণত ওমেগা-6 নামে পরিচিত, এটি একটি পলিঅনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড।

এছাড়া ওলেইক অ্যাসিড (oleic acid) বা ওমেগা-9 রয়েছে, এটি একটি মনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড। লিনোলিক এবং ওলিক অ্যাসিড উভয়ই শরীরের শক্তির উৎস। 

সূর্যমুখী তেলের পুষ্টি উপাদান

নিচে সূর্যমুখী তেলের পুষ্টি উপাদান দেওয়া হলো – 

  • লিনোলিক অ্যাসিড:৬৮%
  • ওলিক অ্যাসিড: ৬৫%
  • নিউট্রিসন: ৭২%
  • ক্যালোরি :১২০ গ্রাম
  • ফ্যাট: ১৪ গ্রাম 
  • পলিউনস্যাচুরেটেড ফ্যাট: ৯ গ্রাম 
  • ভিটামিন “ই”: ৫.৫৯ মিলিগ্রাম 

                                                                                         

সূর্যমুখী তেলের স্বাস্থ্য উপকারিতা

চলুন তবে জেনে নিই এর স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে-

ত্বককে সুরক্ষিত করে:

সূর্যমুখী তেলে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন “ই” আছে। ভিটামিন “ই” হল অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট যা ত্বককে ফ্রি র‌্যাডিক্যালস এবং সূর্যের বিরূপ প্রভাব যেমন বয়সের ছাপ এবং চুলকানির হাত থেকে রক্ষা করতে পারে।

সেল ড্যামেজের হাত থেকে ত্বককে বাঁচায়। সূর্যমুখীর তেলে লিনোলিক অ্যাসিড থাকে যা ব্যাকটিরিয়া এবং জীবাণু থেকে ত্বককে সুরক্ষা প্রদান করে।

এছাড়া ও লিনোলিক অ্যাসিড ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখাতে সহায়তা করে। সূর্যমুখীর তেল ত্বকের হাইড্রেশন বাড়াতে এবং ত্বকের বাইরের স্তরটির অখণ্ডতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।

চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখে:

রুক্ষ চুলকে নরম করতে সহায়তা করে সূর্যমুখী তেল। ভিটামিন “ই” থাকার কারণে সূর্যমুখীর তেল দ্রুত চুল বড় হতে সাহায্য করে।

ওলিক এসিডের প্রাচুর্যতাও আছে এই তেলে। আর এটি চুলের জন্য খুবই উপকারী। দ্রুত চুল বৃদ্ধির পাশাপাশি এটি চুলের গোড়া শক্ত করে। চুলের ঔজ্জ্বল্য বৃদ্ধিতেও সহায়ক।

নরম, সিল্কি চুলের জন্য আপনি সপ্তাহে একবার এই তেল আপনার মাথার ত্বকে মাসাজ করতে পারেন। সূর্যমুখী তেল লিনোলেনিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ যা চুল পড়া রোধ করে।

শরীরের ব্যাথা দূর করে:

এই তেলে আছে ভিটামিন “ই” যা আমাদের দেহের নানা রকম ব্যথা দূর করতে সহায়তা করে। সেই সাথে সূর্যমুখী তেলে বিদ্যমান ভিটামিন “ই” আমাদের ত্বককে রক্ষা করে সূর্যের আল্ট্রা-ভায়োলেট রশ্মি থেকে।

এছাড়া ত্বকের অযথা বুড়িয়ে যাওয়া এবং ক্ষয় রোধে এই তেল খুবই উপকারী।

ত্বককে কোমল ও মসৃৃণ করে:

অন্য সব তেলের মত সূর্যমুখীর তেলে তেল চিটচিটে ভাবটা থাকে না। তাই এ তেল ব্যবহারে ত্বক হয় কোমল ও মসৃৃণ। সব ধরনের ত্বকে এই তেল ব্যবহার উপযোগী।

গোসলের পানিতে কয়েক ফোঁটা সূর্যমুখীর তেল ব্যবহারে সারাদিনের ক্লান্তি ভাব দূর হয়। এছাড়া সূর্যমুখীর তেল ম্যাসাজে ও ব্যবহার করতে পারেন।

হার্টকে সুরক্ষিত করে:

মনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ ডায়েট উচ্চ কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস করতে সহায়তা করে। সূর্যমুখী তেলে ৮০% এর বেশি মনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে যা আপনার হার্টের স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো

এই তেলে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে দেহে ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করে:

এই তেল অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ যা কোষের ঝিল্লি বাধাগুলি শক্তিশালী করে ব্যাকটিরিয়া এবং ভাইরাসগুলির দেহে প্রবেশ করতে বাধা দেয়।

এটি সংক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করে।

পুষ্টিগুণে ভরপুর:

প্রচুর পরিমাণে খাদ্যশক্তি থাকায় সূর্যমুখী তেল দুর্বলতা কাটাতে কার্যকরী। সেই সঙ্গে দেহের কার্যক্ষমতা বাড়াতে এবং দীর্ঘদিন কর্মক্ষম রাখতেও সূর্যমুখীর ভূমিকা অনন্য।

এছাড়া সূর্যমুখী তেল আমাদের দেহের হাড় সুস্থ রাখে ও মজবুত করে। আমাদের দেহে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও কপার এর চাহিদা পূরণ করে সূর্যমুখী তেল।

মানসিক চাপ দূর করে:

এই তেলে থাকা ম্যাগনেসিয়াম উপাদান মানসিক চাপ দূর করে। মাইগ্রেনের সমস্যা এবং মস্তিষ্ককে শান্ত রাখতে সাহায্য করে এই তেল।

সূর্যমুখী তেলের মধ্যে আরও বেশি লিনোলিক অ্যাসিড থাকে, যা ওমেগা-6 নামেও পরিচিত। ওমেগা-6 প্রয়োজনীয় ফ্যাটি অ্যাসিড অতিরিক্ত গ্রহণ করা ভালো নয়। সূর্যমুখীর তেলে আছে শতকরা ১০০ ভাগ উপকারী ফ্যাট। সূর্যমুখীর তেল সম্পূর্ণ ক্ষতিকারক কোলেস্টেরল মুক্ত।

এটি দাঁতের জন্য উপকারী একটি তেল। হৃদরোগী, ডায়াবেটিসের রোগী উচ্চ রক্তচাপের রোগীর জন্যও সূর্যমুখীর তেল নিরাপদ।

রেফারেন্স: