তেতো কেন খাবেন ও তেতো শাক সবজি কোন গুলো।
কেন আমাদের তেতো খাওয়া উচিত
তেতো খাবারগুলি পুষ্টিকর এবং এতে বিভিন্ন ধরণের রাসায়নিক রয়েছে যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
এটি ক্যান্সার, হৃদরোগ এবং ডায়াবেটিস সহ অনেক রোগের ঝুঁকি কমাতে পারে এবং অন্ত্র, চোখ এবং যকৃতের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।
এই তেতো খাবার হজমে সাহায্য করে এবং পরিপাকতন্ত্রকে চলতে সাহায্য করে যাতে আমরা সর্বাধিক পুষ্টি পেতে পারি।
তেতো খাবার ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে। এই শাকসবজিতে ভিটামিন “এ” এবং ভিটামিন “সি”, ফোলেট, ফাইবার, পটাসিয়াম এবং ক্যালসিয়ামের মতো পুষ্টি উপাদান রয়েছে।
তেতো শাক সবজি কোন গুলো
নিচে তেতো শাক সবজি সম্পর্কে আলোচনা করা হল-
করলা:
করলা হল একটি সবজি, এটির স্বাদ অত্যন্ত তিক্ত। এটি এশিয়ান, আফ্রিকান এবং ক্যারিবিয়ান দেশগুলিতে জনপ্রিয়।
তিক্ত করলায় ফাইটোকেমিক্যাল যেমন ট্রাইটারপেনয়েড, পলিফেনল এবং ফ্ল্যাভোনয়েড রয়েছে যা বিভিন্ন ধরণের ক্যান্সারের বৃদ্ধিকে হ্রাস করে।
এটি ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।
তেতো করলা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ, যা কোষের ক্ষতি প্রতিরোধ করে এবং আপনার হৃদরোগ এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়।
সাইট্রাস খোসা:
লেবু এবং কমলার মতো সাইট্রাস ফলের বাইরের খোসা বেশ তেতো হয়। এগুলোতে ফ্ল্যাভোনয়েড থাকার কারণে ফলটিকে কীটপতঙ্গ থেকে রক্ষা করে তবে এগুলোতে আমাদের অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে।
সাইট্রাস খোসায় ফলের অন্যান্য অংশের থেকে বেশি ফ্ল্যাভোনয়েড থাকে।
সর্বাধিক সাইট্রাস ফ্ল্যাভোনয়েডগুলির মধ্যে দুটি হল হেস্পেরিডিন ও নারিংজিন এবং উভয়ই শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।
গিমা শাক:
গিমা শাক আগাছার মতো জন্মায়। যেখানে সেখানে কোন যত্ন ছাড়াই বেড়ে ওঠে। বর্ষার শেষে অর্থাৎ শীতের শুরুতে এই শাক জন্মায়।
এই শাক লতার মতো চিকন চিকন ডাল, দেখতে ঝোপালো হয় ও মাটিতে চাপাভাবে লেগে থাকে। এই শাক খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
এর পাতার পাশাপাশি কাণ্ড, ফুল সবই ব্যবহার করা হয়। এই শাক অজীর্ন, জন্ডিস, জ্বর, পিত্ত, কফ সারাতে উপকারী। মুখের রুচি ফিরাতে ভালো কাজ করে।
আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায়ও এই শাকের কাণ্ড, পাতা, ফুল কাজে লাগে। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য তেত খুবই উপকারী।
এছাড়া কৃমির সমস্যা কমায়। রক্তে হিমোগ্লোবিন অর্থাৎ লোহিত রক্ত কণিকার পরিমাণ বাড়ায়।
কালমেঘ পাতা:
সাধারণ জ্বরের প্রাকৃতিক প্রতিকারে কালমেঘ পাতার উপকারিতা অনেক।
এছাড়া রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে, প্রদাহ কমাতে ও পেটের সমস্যার জন্য কালমেঘের পাতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এই পাতার স্বাদ তিক্ত। কালমেঘ গাছের প্রত্যেকটি অংশই খুব তিক্ত হয় যার কারণে কালমেঘকে তিক্ততার রাজাও বলা হয়।
এটি আয়ুর্বেদিক ও হোমিওপ্যাথিক বিভিন্ন ধরণের রোগের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়।
মেথি শাক:
মেথি শাক সবজি হিসেবে তো খেতেই পারেন আবার পরোটা বা মেথি শাক লুচি বানিয়েও খাওয়া যায়।
এই শাক তারুণ্য ধরে রাখতে, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে, পেটের নানা সমস্যা নিরাময়ে, রক্তাল্পতা রোধ করতে এবং কোলেস্টেরল হ্রাস করতে খুবই উপকারী।
এই শাক লিভারের কার্যকারিতা বাড়াতে এবং বদহজম দূর করতেও দারুন উপকারী।
কোকো পাউডার:
কোকো পাউডার কোকো গাছের বীজ থেকে তৈরি করা হয় যার তেতো স্বাদ রয়েছে।
গবেষণায় দেখা গেছে যে যারা সপ্তাহে অন্তত পাঁচবার চকলেট খান তাদের হৃদরোগের ঝুঁকি ৫৬% কম।
কারণ কোকোতে থাকা পলিফেনল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রক্তনালীগুলিকে প্রশস্ত করে এবং প্রদাহ কমাতে পারে, যা আমাদের হার্টকে রক্ষা করতে পারে।
কোকো কপার, ম্যাঙ্গানিজ, ম্যাগনেসিয়াম এবং আয়রন সহ বেশ কয়েকটি পুষ্টি উপাদানে ভরপুর।
পাটশাক:
পাটশাক ভাজি কিংবা শুক্ত হিসাবে খাওয়া হয় অথবা ডালে দিয়েও খাওয়া যায়। পাটশাক দুই রকমের হয় তেতো পাটশাক আর মিষ্টি পাটশাক।
তেতো শাক হিসেবে পাটশাক (jute leaves) রুচি বৃদ্ধি করে ও মেদ বৃদ্ধির আশঙ্কা কমায়। এটি কেবল মুখরোচকই নয়, এতে রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ।
এই শাকে প্রচুর পরিমান আয়রন থাকে যা রক্তে হিমোগ্লোবিন উৎপাদনে সহায়তা করে। ফলে রক্তশূন্যতা দূর হয়। যাদের রক্ত স্বল্পতার সমস্যা আছে তারা পাটশাক খেতে পারেন।
সরিষার শাক:
স্বাদে একটু তেতো কিন্তু স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী এই সরিষা শাক। সরিষা শাক ফ্লাভোনয়েডস, বিটা ক্যারোটিন, লুটিন এবং ভিটামিন “সি” এবং” ই” এর উৎস।
সরিষার শাকে গ্লুকোসিনোলেটস (glucosinolates) নামে একধরণের উপকারী উদ্ভিদ যৌগ রয়েছে। যার অ্যান্টিক্যান্সার প্রভাব থাকতে পারে।
টেস্ট-টিউব স্টাডিতে, গ্লুকোসিনোলেটস কোষকে ডিএনএর ক্ষতির বিরুদ্ধে রক্ষা করতে এবং ক্যান্সারজনিত কোষগুলির বৃদ্ধি রোধে সহায়তা করে।
একটি টেস্ট-টিউব সমীক্ষায় দেখা গেছে সরিষার পাতার রস কোলন এবং ফুসফুস ক্যান্সারের বিরুদ্ধে করতে পারে।
নিম পাতা:
আয়ুর্বেদে নিম পাতাকে “স্কিনের রানী” বলা হয়। নিম পাতার ঔষধী গুন এতই বেশী যে এটাকে “গ্রাম্য ঔষুধের ফার্মেসী” বলা হয়।
নিমগাছ আমরা সবাই চিনি। এটার উপকারীতা সম্পর্কে কম বেশি জানি। বাংলাদেশসহ ভারতীয় উপমহাদেশে ঔষধী গাছ হিসাবে ৫০০০-বছর ধরে নিম গাছের ব্যবহার হয়ে আসছে।
নিমের ডাল, পাতা, ফুল, বাকল সব কিছুই কাজে লাগে। নিম একটি বহুবর্ষজীবী ও চিরহরিৎ বৃক্ষ। ১৩০টি ঔষধী গুন সম্পন্ন নিম পাতা, ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া নাশক হিসাবে খুবই কার্যকরী।
এটাতে উচ্চ মাত্রায় ক্লোরোফিল থাকায় এটা মানব শরীরের দুর্গন্ধ দূর করতে চমৎকার কাজ করে। নিম পাতা রক্ত পরিষ্কার রাখতে খুবই ভালো কাজ করে।
কফি:
কফি সারা বিশ্বে বহুল ব্যবহৃত একটি পানীয়। বেশিরভাগ তিক্ত খাবারের মতো কফিতে পলিফেনল থাকে।
কফিতে প্রচুর পরিমাণে পলিফেনল থাকে যার মধ্যে একটি হল ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড। কফির অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা অনেক স্বাস্থ্য সুবিধা প্রদান করে। যেমন অক্সিডেটিভ ক্ষতি এবং হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়।
গ্রিন টি:
সারা বিশ্বে গ্রিন টি একটি জনপ্রিয় পানীয়। এটির ক্যাটিচিন এবং পলিফেনলের কারণে এটির তিক্ত স্বাদ রয়েছে। ক্যাটেচিনগুলির মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত এপিগ্যালোকাটেচিন গ্যালেট, বা ইজিসিজি।
এটিতে বিভিন্ন ধরনের পলিফেনল রয়েছে যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি হিসেবে কাজ করে।
এই যৌগগুলি আপনার হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে পারে। প্রতিদিন মাত্র এক কাপ গ্রিন টি পান করলে হার্ট অ্যাটাকের ২০% ঝুঁকি কমায়।