কোন কোন খাবার রক্তস্বল্পতা দূর করতে সাহায্য করে।
রক্তকোষে লৌহসমৃদ্ধ একধরনের প্রোটিন হচ্ছে হিমোগ্লোবিন। এটি শরীরে অক্সিজেন পরিবহনে সাহায্য করে।
সুস্থ জীবনযাপনে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা সঠিক থাকা প্রয়োজন। কিছু খাবার খেয়ে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মান ঠিক রাখা যায়।
রক্তশূন্যতা (Anemia) দূর করতে নিয়মিত খাবারের তালিকায় কলিজা রাখা উচিত। কলিজায় প্রচুর পরিমাণে আয়রন ও ভিটামিন “বি” আছে।
মধু আয়রনের একটি ভালো উৎস। আয়রন ছাড়াও মধুতে কপার ও ম্যাঙ্গানিজ আছে যা শরীরে প্রচুর পরিমাণে হিমোগ্লোবিন প্রস্তুত করতে সহায়তা করে।
কচু শাক, কচুর লতি, কচু, পালং শাক, বিট, লেটুস, ব্রকোলি, ধনিয়া পাতা, পুদিনা পাতা ইত্যাদি নিয়মিত খেলে রক্তশূন্যতা থেকে মুক্তি মেলে। কলা, আঙ্গুর, কমলা, গাজর, বিট রক্তশূন্যতায় অত্যন্ত উপকারী।
আমাদের দেহে দুই ধরণের আয়রন আছে হেম আয়রন এবং ননহেম আয়রন।
ননহেম আয়রণ আমরা শস্য, মটরশুটি, শাকসবজি, ফলমূল, বাদাম এবং বীজ থেকে পাই এবং হেম আয়রন হাঁস-মুরগির মাংস, সামুদ্রিক খাবার এবং মাছের মধ্যে পাওয়া যায়।
শাক সবজি:
শাক বিশেষকরে গাঢ় সবুজ শাক আয়রনের সেরা উৎস মধ্যে একটি। যেমন:
কিছু শাক যেমন সুইস চার্ড এবং কলার্ড গ্রিনসেও ফোলেট থাকে। ফোলেটের-অভাবে রক্তাল্পতা দেখা দিতে পারে। সাইট্রাস ফল, মটরশুটি এবং আস্ত শস্য দানা (গম, ভূট্টা, ছোলা ইত্যাদি) ফোলেটের ভাল উৎস।
পালং শাক এবং ব্রকোলির মধ্যে উচ্চ পরিমানের আয়রন রয়েছে এছাড়াও রয়েছে উচ্চ অক্সালেট। অক্সালেট এমন একটি যৌগ যা ননহেম আয়রণ এর (ননহেম আয়রণ আমরা শাক সবজি থেকে পাই) শোষণকে বাধা দেয়।
ভিটামিন “সি” আপনার পাকস্থলীকে আয়রন শোষণে সহায়তা করে। কমলা, লাল মরিচ এবং স্ট্রবেরি জাতীয় ভিটামিন “সি”যুক্ত খাবারের পাশাপাশি শাক সবজি খাওয়ার ফলে আয়রনের শোষণ বাড়বে।
মাংস:
সব ধরণের মাংসতে হেম আয়রন থাকে। বিশেষ করে লাল মাংস হেম আয়রনের সেরা উৎস। হাঁস-মুরগির মাংসতে হেম আয়রণ পরিমাণ কম থাকে।
শাকের সাথে মাংস হাঁস-মুরগির মাংস খাওয়ার ফলে আয়রনের শোষণ শোষণ বাড়ে। ফলে রক্ত স্বল্পতা দূর হয়।
কলিজা বা লিভার:
অনেকেই কলিজা বা লিভার খেতে পছন্দ করেননা। কিন্তু রক্তশূন্যতায় ভুগছেন যারা তাদের নিয়মিত খাবার তালিকায় কলিজা বা লিভার রাখা উচিত।
কলিজায় প্রচুর পরিমাণের আয়রন এবং ফোলেট সমৃদ্ধ। তাই রক্তশূন্যতা দূর করতে প্রতিদিনের খাবার তালিকায় কলিজা বা লিভার রাখা উচিত।
ফল:
সবধরনের রসালো সাইট্রাস ফল যেমন: আম, লেবু এবং কমলা ভিটামিন “সি”-র সবচেয়ে ভালো উৎস। আর দেহে আয়রন দ্রুত শুষে নেওয়ার জন্য ভিটামিন “সি” সবচেয়ে জরুরি।
এর ফলে হিমোগ্লোবিন উৎপাদনের গতিও বাড়ে। স্ট্রবেরি, আপেল, তরমুজ, পেয়ারা এবং বেদানাতেও প্রচুর পরিমাণে আয়রন আছে।
শিমজাতীয় বীজ:
নিরামিষভোজীদের ক্ষেত্রে মাংসের মতো শিমের বীজ আয়রনের প্রয়োজন চাহিদা মেটায়। শিম ও মটরশুঁটির বীজ, কালাই কিংবা ছোলায় রয়েছে আয়রন। বিভিন্ন ধরনের ডালও রয়েছে এ তালিকায়।
বাদাম এবং বীজ:
অনেক ধরণের বাদাম এবং বীজ আয়রনের ভাল উৎস। এসব বাদাম ও বীজ খুবই সুস্বাদু হয়ে থাকে। যখন খাওয়ার জন্য বাদাম এবং বীজ বেছে নেওয়া হয়, তখন কাঁচা বাদাম বেছে নিন।
যেমনঃ কাজু বাদাম, পেস্তা বাদাম, চীনা বাদাম, সূর্যমুখী বীজ, কুমড়ো বীজ এবং আখরোট খেলে রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়ে দ্রুতগতিতে।
বীট:
হিমোগ্লোবিন বাড়াতে বীটের রস খাওয়ার পরামর্শ দেন ডাক্তাররা। এতে রয়েছে প্রচুর আয়রন, ফলিক অ্যাসিড, ফাইবার ও পটাশিয়াম। এর পুষ্টিমান শরীরের লাল রক্তকণিকা বাড়ায়।
যেকোনো একটি খাবার রক্তস্বল্পতা দূর করতে পারে না। রক্তসল্পতা দূর করতে আমাদের যতটুকু আয়রন দরকার তা আমরা গাঢ় সবুজ শাকসবজি, বাদাম, বীজ, সামুদ্রিক খাবার, মাংস এবং মটরশুটি ইত্যাদি স্বাস্থ্যকর খাবার থেকে পেতে পারি।
রক্তাল্পতা দূর করার জন্য ডায়েট অনুসরণ করার সময়, এই নির্দেশিনাগুলি মনে রাখতে হবে:
- নন হেম আয়রন সমৃদ্ধ খাবারের সাথে অক্সালেট যুক্ত খাবার (যেমন কফি, চা, ডিম) খাওয়া উপকারী নয়। কারণ অক্সালেট আমাদের শরীর যে আয়রন শোষণ করে তা বাধাগ্রস্ত করে।
- উচ্চ আয়রন সমৃদ্ধ খাবারের সাথে ভিটামিন “সি” সমৃদ্ধ খাবার যেমন কমলা, টমেটো বা স্ট্রবেরি খেলে আমাদের শরীর খুব ভালো ভাবে আয়রন শোষণ করতে পারবে।
- আয়রনের শোষণ উন্নত করতে বিটা-ক্যারোটিনযুক্ত খাবার যেমন: লাল মরিচ এবং বিট জাতীয় খাবার খান।
- আয়রনের শোষণ বাড়ানোর জন্য যখনই সম্ভব হেম এবং ননহেম আয়রনযুক্ত খাবার একসাথে খান।
- লোহিত রক্তকণিকা উৎপাদন বাড়াতে ফোলেট এবং ভিটামিন বি-12 সমৃদ্ধ খাবার খান।