“গরুর দুধ” দৃষ্টিশক্তি ও মেধা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এবং হাড় শক্ত করে।
পৃথিবীর সব খাদ্যের সেরা খাদ্য গরুর দুধ। গরুর দুধ, সমগ্র পৃথিবীজুড়ে জনপ্রিয় এক খাদ্যপানীয় যা বহুকাল ধরেই মানুষের প্রতিদিনের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করে আসছে।
বিশেষ করে বাচ্চাদের সঠিক বৃদ্ধি এবং বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহে গরুর দুধ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।
অন্যান্য গবাদি পশু যেমন ছাগল, মহিষ থেকে নেয়া দুধও কম গুরুত্ব বহন করে না।
তারপরও বলতে দ্বিধা নেই যে, গরুর দুধই সর্বাধিক পান করা পানীয়, যা কয়েক হাজার বছর ধরে বিশ্বজুড়ে গরু লালন পালনের মাধ্যমে উৎপাদিত হয়ে আসছে।
দুধ কেন আদর্শ খাবার?
দুধে প্রোটিন, ফ্যাট, কার্বোহাইড্রেট, সমস্ত পরিচিত ভিটামিন রয়েছে এবং জীবনকে টিকিয়ে রাখতে এবং সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন খনিজ উপাদানের কারণে দুধকে একটি সম্পূর্ণ বা আদর্শ খাবার বলা হয়।
মানুষের স্বাস্থ্য রক্ষার অন্যতম উপাদান দুধ। গরুর দুধ পানের মাধ্যমে আমাদের শরীরে পৌঁছে যাচ্ছে ক্যালসিয়াম যা হাড় মজবুত করার জন্য উপকারী।
বলা হয়ে থাকে দুধে উপস্থিত শতভাগ খনিজের ভেতর ৬০% ক্যালসিয়াম। এছাড়াও পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস, জিংক ও আয়রণের মতো গুরুত্বপূর্ণ উপাদান আছে।
শিশুর জন্য দুধ কেন প্রয়োজনীয়?
বাচ্চার বয়স এক বছর পার হওয়ার পর থেকে তার দুধের চাহিদা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। সেক্ষেত্রে, মায়ের বুকের দুধের পাশাপাশি গরুর দুধের মাধ্যমে চাহিদা পূরণ সম্ভব হয়।
শিশুর মানসিক ও শারীরিক চাহিদা পূরণে গরুর দুধ অতুলনীয়। শিশুদের শরীরের হাড় শক্ত করতে, দৃষ্টিশক্তি প্রখর করতে গরুর দুধের তুলনা নেই।
দুধ বি ভিটামিনের একটি বিশেষ উৎস, বিশেষত ভিটামিন B12 যা মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুতন্ত্রের স্বাস্থ্যকর কার্যকারিতা নিশ্চিত করে।
গর্ভবতী মায়েদের জন্য দুধ কেন প্রয়োজনীয়?
গর্ভবতী মায়েদের ক্ষেত্রে গরুর দুধ পান করা খুবই জরুরী। যদি দিনে দুই কাপ দুধ পান করা যায় তাহলে বাচ্চা প্রসবের সময় নিশ্চিত হয় একটি সুস্থ্য সবল বাচ্চার।
এছাড়া প্রসবের পর মায়ের বুকের দুধে বাচ্চার অধিক পুষ্টির জন্য মায়েদের দরকার গরুর দুধ পান করা। তাই গর্ভকালীন ও প্রসব পরবর্তী সময়ে দুধ পান করা মায়েদের জন্য অত্যন্ত জরুরী।
গরুর দুধের উপকারীতা
সর্বোচ্চ পুষ্টিমানের জন্যই দুধের শ্রেষ্ঠত্ব। দুধের অপরিহার্য উপাদান ল্যাকটোজ, যা দৈহিক গঠন, বিকাশ ও মেধা বৃদ্ধিতে সহায়ক।
মানুষের স্বাস্থ্য রক্ষার মূল উপাদান দুধ। নিচে গরুর দুধের কিছু পুষ্টি উপাদান দেওয়া হলো –
- ক্যালোরি: ১৪৬
- প্রোটিন: ৮ গ্রাম
- ফ্যাট:৮ গ্রাম
- ক্যালসিয়াম: ২৮% (RDA)
- ভিটামিন “ডি”: ২৪% (RDA)
- রিবোফ্লাভিন (বি-2): ২৬% (RDA)
- ভিটামিন বি-12: ১৮% (RDA)
- পটাশিয়াম: ১০% (RDA)
- ফসফরাস: ২২% (RDA)
- সেলেনিয়াম: ১৩% (RDA)
গরুর দুধের উপকারীতা
দুধ পটাসিয়াম, B12, ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন “ডি” সরবরাহ করে। এছাড়াও দুধ প্রোটিনের এবং সংশ্লেষিত লিনোলিক অ্যাসিড, ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন “এ”, ম্যাগনেসিয়াম, জিঙ্ক এবং থায়ামিন (বি-1) এর একটি ভাল উৎস।
দুধে থাকা লিনোলিক অ্যাসিড এবং ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড ডায়াবেটিস এবং হার্টের রোগের ঝুঁকি হ্রাস করে।
ঘাস খায় এমন গাভীর দুধে সংশ্লেষিত লিনোলিক অ্যাসিড এবং ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড বেশি পরিমাণে রয়েছে।
এছাড়া প্রাকৃতিক খাবার এবং ঘাস খাওয়া গরুর দুধে বেশি পরিমাণে উপকারী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যেমন ভিটামিন “ই” এবং বিটা ক্যারোটিন, যা প্রদাহ হ্রাস করতে এবং অক্সিডেটিভ স্ট্রেসে লড়াই করতে সহায়তা করে।
নিচে গরুর দুধের উপকারীতা দেওয়া হলো-
হাড়ের জন্য ভালো:
স্বাস্থ্যকর হাড় এবং দাঁতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ খনিজ উপাদান হলো ক্যালসিয়াম। ক্যালসিয়ামের সব চাইতে ভালো উৎস দুধ।
এছাড়া দুধ ভিটামিন “ডি” এর ভালো উৎস যা হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন “ডি” অস্টিওপরোসিস প্রতিরোধে সহায়তা করে।
তাছাড়া ক্যালসিয়াম ভিটামিন “ডি” এর সাহায্যে আমাদের হাড় ও দাঁতে শোষিত হয়ে হাড় ও দাঁতের গঠন দৃঢ় করে এবং দাঁতের ক্ষয়রোধ করে।
তাই বাচ্চাদের ছোটবেলা থেকেই দুধ পানের অভ্যাস করানো উচিৎ।
প্রোটিনের একটি ভাল উৎস:
দুধ হল প্রোটিনে ভরপুর একটি পানীয়। প্রোটিন আমাদের দেহে বৃদ্ধি এবং বিকাশ, সেলুলার মেরামত এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি সহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য প্রয়োজনীয়।
দুধকে একটি “সম্পূর্ণ প্রোটিন” হিসাবে বিবেচনা করা হয়। যার অর্থ এটি আমাদের শরীরের সর্বোত্তম স্তরে কাজ করে।
দুধে প্রধানত দুটি প্রোটিন পাওয়া যায়- কেসিন (casein) এবং হুই প্রোটিন (whey protein)। এই দুইটি প্রোটিনই হলো উচ্চ মানের প্রোটিন।
একটি গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, ব্যায়াম করার পরে দুধ পান করলে পেশীর ক্ষতি হ্রাস পাই এবং শক্তি বৃদ্ধি করতে পারে।
ওজন কমায়:
বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, দুধ খেলে স্থূলতার ঝুঁকি কমে। এই স্থূলতার ঝুঁকি কমবে শুধুমাত্র পূর্ণ ননী যুক্ত দুধ খেলে।
১৪৫ টি ৩-বছর বয়সী শিশুদের উপর এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, দুধের-চর্বি খাওয়ানোর ফলে শৈশবকালে শিশুদের স্থূলত্বের ঝুঁকি হ্রাস পেয়েছে।
আঠেরোশোও (১৮,০০০) বেশি মধ্যবয়সী এবং প্রবীণ মহিলাদের আরও একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে অধিক চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাত খাবার খাওয়ার সাথে ওজন কম হওয়া এবং স্থূলত্বের ঝুঁকি হ্রাস এর সাথে সম্পর্কিত।
দুধে বিভিন্ন উপাদান রয়েছে যা ওজন হ্রাসে অবদান রাখতে পারে এবং ওজন বৃদ্ধি রোধ করতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ, এর উচ্চ-প্রোটিন সামগ্রী আপনাকে দীর্ঘ সময়ের জন্য পেট ভরিয়ে রাখতে সহায়তা করে, যা আমাদের অতিরিক্ত খাবার খাওয়া থেকে বিরত রাখতে পারে।
ফিটনেস বাড়ায় ও মানসিক চাপ দূর করে:
দুধে থাকা ভিটামিন ও মিনারেল ফিটনেস বৃদ্ধি ও মানসিক চাপ দূর করতে সহায়তা করে। দুধ পানে ঘুম ভালো হয়, যার ফলে মস্তিষ্ক শিথিল থাকে ও মানসিক চাপমুক্ত হয়।
সারাদিনের মানসিক চাপ দূর করে শান্তির ঘুম নিশ্চিত করতে প্রতিদিন রাতে এক গ্লাস কুসুম গরম দুধ পান করতে পারেন।
গরুর দুধের সতর্কতা:
দুধ সবার খুবই পছন্দের এবং প্রিয়, কিন্তু এটি সবাই হজম করতে পারেনা। যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে ও উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে তারা গরুর দুধ খাওয়ার ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারেন।
অনেকের দুধে এলার্জি থাকতে পারে। যাদের পেটে অস্ত্রোপচার (অপারেশন) করা হয়েছে তাদের জন্য দুধপান নিষিদ্ধ। কোনোকিছু অতিরিক্ত খাওয়া ভালো না। তাই পরিমাণমতো খাবেন।
আপনি যদি জটিল কোনো রোগে আক্রান্ত হন বা অন্য কোনো কারণে রেগুলার কোনো মেডিকেল কোর্স-এর মধ্য দিয়ে যান তাহলে অবশ্যই আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।
একটি মানুষ কেবলমাত্র দুধ পান করেই একটি স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করতে পারে কারণ এতে বেঁচে থাকার জন্য সমস্ত কিছু রয়েছে।
খাঁটি গরুর দুধেই রয়েছে সুস্বাস্থ্যের নিশ্চয়তা। তাই ছেলে বুড়ো থেকে শুরু করে সবার জন্য দরকার গরুর দুধ পান করা। দুধ পান করুন। সুস্থ্য থাকুন।