করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ভিটামিন “সি” সমৃদ্ধ যেসব খাবার গুরুত্বপূর্ণ।
করোনাভাইরাস সারা দুনিয়ার মানুষকে ঘরবন্দী করে ফেলেছে। কোনো প্রতিষেধক নাই বলেই আক্রান্ত মানুষকে করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হচ্ছে নিজ দেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য। সংগত কারণেই এখন জোরেশোরে আলোচনা হচ্ছে এমন সব খাবারগুলো নিয়ে, যা দেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সক্ষম। যে খাবারের তালিকায় একেবারে প্রাথমিক আলোচনাতেই রয়েছে সেটি ভিটামিন সি–সমৃদ্ধ খাবার।
ভিটামিন “সি” একটি দ্রবণীয় ভিটামিন যা ফল এবং শাকসবজি থেকে পাওয়া যায়। এটি একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট হওয়ার পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ভিটামিন “সি” – কোলাজেন সংশ্লেষণ, সংযোজক টিস্যু, হাড়, দাঁত এবং ছোট রক্তনালীগুলির জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। এটি আমাদের দেহের ক্ষতিগ্রস্থ ত্বকের কোষগুলি মেরামত করতে সহায়তা করে।
ভিটামিন “সি” ঘাটতি হলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, মাড়ি থেকে রক্তক্ষরণ হয়, যেকোন ক্ষত নিরাময় হতে সময় লাগে, রক্তাল্পতা এবং স্কার্ভি রোগ হতে পারে।
ভিটামিন “সি” সমৃদ্ধ খাবার
নিচে কয়েকটি উচ্চ ভিটামিন “সি” সমৃদ্ধ খাবার দেওয়া হলো –
কমলালেবু:
প্রতি ১০০ গ্রাম কমলালেবুতে ৮৮% (DV%) ভিটামিন “সি” থাকে। ভিটামিন “সি”-এর চমৎকার উৎস কমলালেবু আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেবে হাজার গুণ। কমলালেবু ছাড়া অন্যান্য ফল যেমন- মাল্টা, জাম্বুরাতেও প্রচুর পরিমানে ভিটামিন “সি” রয়েছে।
স্ট্রবেরী:
স্ট্রবেরীতে আছে প্রচুর ভিটামিন “সি” যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং বিভিন্ন রকম সংক্রমণ থেকে শরীরকে রক্ষা করে। মাত্র এক কাপ স্ট্রবেরী প্রতিদিনের ভিটামিন “সি” এর চাহিদার ১০০% পূরণ করতে সক্ষম। এছাড়া স্ট্রবেরী ম্যাঙ্গানিজ, ফ্ল্যাভোনয়েডস, ফোলেট এবং অন্যান্য উপকারী অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলির একটি শক্তিশালী উৎস।
লেবু:
লেবুতে ভিটামিন “সি” প্রচুর পরিমাণে থাকে, এটি এমন একটি পুষ্টি যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে। ভিটামিন “সি” শ্বেতরক্ত কণিকার উৎপাদন বাড়াতে সহায়তা করে, যা আমাদের শরীরকে সংক্রমণ এবং রোগের বিরুদ্ধে রক্ষা করতে সহায়তা করে। মানব অধ্যয়নগুলিতে দেখা গেছে, ভিটামিন “সি” গ্রহণের ফলে সর্দি-কাশির সময়কাল এবং তীব্রতা হ্রাস করতে সহায়তা করে।
ব্রকলি:
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ঠিক রাখার জন্য ভিটামিন “সি” খুবই প্রয়োজনীয় একটি পুষ্টি উপাদান। এই ভিটামিন “সি” ব্রকলি থেকে প্রচুর পরিমাণ পাওয়া যায়। গবেষণা ইঙ্গিত দেয় যে, ভিটামিন “সি” বিভিন্ন অসুস্থ্যতা প্রতিরোধ করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। প্রতিদিন ১০০-২০০ মিলিগ্রাম ভিটামিন “সি” খেলে তা যে কোন সংক্রমণ থেকে শরীরকে রক্ষা করতে পারে।
আমলকী:
ভিটামিন “সি” তে পরিপূর্ণ আমলকী। আমলকী রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে, সর্দি-কাশির সারাতে ও হজম ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। প্রতিদিন এক চামচ আমলকীর রস মধু দিয়ে খেলে সর্দি-কাশির প্রকোপ থেকে রেহাই পাওয়া যাবে।
সরিষার শাক:
সরিষার শাক আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য ভালো। প্রতি ১০০ সরিষার শাকে ২১৬% (DV) ভিটামিন “সি” রয়েছে। যা আমাদের প্রতিদিনের ভিটামিন “সি” এর চাহিদার এক তৃতীয়াংশের চেয়ে বেশি পূরণ করে। গবেষণায় দেখা যায় যে, ডায়েটে পর্যাপ্ত ভিটামিন “সি” না থাকলে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে যেতে পারে। তাই ভিটামিন “সি” আর চাহিদা পূরণ করতে সহজলভ্য এই শাকটি আমরা খেতে পারি।
হলুদ ক্যাপসিকাম:
হলুদ ক্যাপসিকামে ১৫২% (DV) ভিটামিন “সি” রয়েছে। যা সবুজ ক্যাপসিকামের তুলনায় দ্বিগুণ। পর্যাপ্ত পরিমাণে গ্রহণ ভিটামিন “সি” গ্রহণ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ঠিক রাখতে সহায়তা করে। এছাড়া ক্যাপসিকাম চুল ও ত্বকের জন্য ভালো।
পেয়ারা:
পেয়ারায় উচ্চ মাত্রায় ভিটামিন “সি” রয়েছে। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে এই ভিটামিন”সি”- এর জুড়ি মেলা ভার। প্রতিরোধী ব্যাবস্থা মজবুত থাকলে সহজে রোগবালাই শরীরের ধারে ঘেঁষতে পারে না। পাশাপাশি পেঁয়ারা রক্তের সুগার কমাতে, কোষ্টকাঠিন্যতা দূর করতে ও ওজন কমাতে বেশ উপকারী।
আনারস:
আনারস বহু শতাব্দী ধরে ঔতিহ্যবাহী ঔষধের একটি অংশ হয়ে উঠেছে। এতে ব্রোমেলাইনের মতো বিভিন্ন ধরণের ভিটামিন, খনিজ এবং এনজাইম রয়েছে যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে পারে এবং প্রদাহ কমাতে করে।
মরিচ:
মরিচ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করার পাশাপাশি সাধারণ সর্দি এবং শ্লেষ্মার ব্যথা কমাতে পারে। একটি সবুজ মরিচে ১২১% (DV) ভিটামিন “সি” থাকে। এছাড়া মরিচ ক্যাপসাইসিন সমৃদ্ধ, যা মরিচের ঝাল স্বাদের জন্য দায়ী। ক্যাপসাইসিন ব্যথা এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
শাক সবজি:
শাকে প্রচুর পরিমানের ভিটামিন “সি” রয়েছে। এতে আরো রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেণ্ট এবং বেটা-ক্যারোটিন যেটা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। যেকোনো শাক সবজি ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে, হার্ট ভালো রাখতে, কোষ্টকাঠিন্যতা দূর করতে ও দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে সাহায্য করে।
সতর্কতা:
অতিরিক্ত ভিটামিন “সি” গ্রহণের ফলে কিডনিতে পাথর হতে পারে। এই জন্য প্রতিদিনের চাহিদা অনুযায়ী ভিটামিন “সি” গ্রহণ করতে হবে। আপনি যদি কোনো রোগে আক্রান্ত হন বা কোনো মেডিকেল কোর্স-এর ভেতর দিয়ে যান তাহলে অবশ্যই আপনার ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী গ্রহণ করবেন।