সবুজ আপেল বার্ধক্যতা দূর করে, হার্টের স্বাস্থ্য উন্নত করে ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়।
প্রকৃতি মা আমাদেরকে যে আশীর্বাদ সরূপ হিসাবে যেসব উপহার দিয়েছে সেগুলির মধ্যে আপেল একটি। আপেলে প্রচুর পরিমাণে প্রয়োজনীয় পুষ্টি এবং ভিটামিন রয়েছে যা প্রতিটি ব্যক্তির প্রতিদিনের ডায়েটের একটি অংশ হওয়া উচিত।
আজ আমরা সবুজ আপেলের উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করবো।
চিনি এবং কার্বস কম থাকে সবুজ আপেলে। সবুজ রঙের আপেল লাল রঙের আপেলের মতো স্বাস্থ্যকর।
তবে স্বাদে খানিকটা টক মিষ্টি। অস্ট্রেলিয়ায় প্রথম সবুজ আপেলের চাষ শুরু হয়। মারিয়া অ্যান স্মিথ প্রথম সবুজ আপেলের চাষ করায় সবুজ আপেলকে গ্র্যানি স্মিথ আপেলও বলা হয়।
সবুজ ও লাল আপেলের মধ্যে পুষ্টিগুণ প্রায় এক। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে সবুজ আপেলে খাদ্যগুণ বেশি থাকে। এছাড়া লাল আপেলের মতো সবুজ আপেলে ফাইবার, প্রোটিন, পটাসিয়াম ও ভিটামিন “কে” রয়েছে।
লাল আপেলের সঙ্গে সবুজ আপেলের পার্থক্য করিয়ে দেয় ভিটামিন “এ”। লাল আপেলের তুলনায় সবুজ আপেলে দ্বিগুণের বেশি ভিটামিন “এ” থাকে। তবে লাল আপেলে কিন্তু সবুজের থেকে অনেক বেশি অ্যান্টি অক্সিডেন্ট থাকে।
লাল আপেল না সবুজ আপেল
সবুজ আপেল লাল আপেলের চেয়ে বেশি উপকারী না হলেও সমান। তবে কিছু ক্ষেত্রে সবুজ আপেলকে স্বাস্থ্যকর হিসাবে নেতৃত্ব দেয়।
এই আপেলে চিনি এবং কার্বস কম থাকে। এছাড়া ফাইবার, প্রোটিন, পটাসিয়াম, আয়রন এবং ভিটামিন “কে” থাকে।
সবুজ আপেল (green apple) ও লাল আপেলের পুষ্টির একমাত্র প্রধান পার্থক্য হল ভিটামিন “এ”, যা লাল আপেলের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ বেশি।
লাল আপেলে সবুজ আপেলের চেয়ে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট রয়েছে। তাই এটা বলা কস্টকর যে লাল আপেল বেশি স্বাস্থ্যকর নাকি সবুজ আপেল।
সবুজ আপেলের পুষ্টি উপাদান
নিচে সবুজ আপেলের পুষ্টি উপাদান দেওয়া হলো-
- ভিটামিন “এ”
- ভিটামিন “সি”
- ক্যালসিয়াম
- ক্যালোরি: ৯৫
- সোডিয়াম: ২ মিলিগ্রাম
- কার্বোহাইড্রেট: ২৫ গ্রাম
- ডায়েটারি ফাইবার: ৪ গ্রাম
সবুজ আপেলের উপকারিতা
হজমজনিত সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে, রক্তের কোলেস্টেরল কমাতে, রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল রাখতে সবুজ আপেল বেশ কার্যকর। নিচে সবুজ আপেলের উপকারিতা
সম্পর্কে আলোচনা করা হলো –
হার্টের স্বাস্থ্য উন্নত করে:
সবুজ আপেল কার্ডিওভাসকুলার রোগ হওয়ার ঝুঁকি কমায়। সবুজ আপেলের মধ্যে পেকটিন নামক ফাইবার থাকে, যা অন্ত্রনালীতে কোলেস্টরেল জমতে দেয় না। যার ফলে কোলেস্টেরলের মাত্রা সঠিক থাকে।
এছাড়াও, আপেলের খোসার মধ্যে যে ফেনলিক উপাদান রয়েছে, যা রক্তনালীর থেকে কোলেস্টেরল দূর করতে সাহায্য করে।
এর ফলে হার্টে রক্তচলাচলা স্বাভাবিক থাকতে। এছাড়া আপেলে থাকা ফ্ল্যাভোনয়েডস শতকরা ২০ শতাংশ স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়।
টাইপ 2 ডায়াবেটিসের বিকাশের ঝুঁকি কমায়:
এক গবেষণা অনুসারে প্রতি সপ্তাহে ২টি সবুজ আপেল খাওয়া টাইপ-2 ডায়াবেটিসের সম্ভাবনা কমিয়ে দিতে পারে।
কারণ আপেলে থাকা পেকটিন নামক ফাইবার ইনসুলিনের পরিমাণ ঠিক রাখে এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। তাই ডায়াবেটিস রোগীরাও আপেল খেতে পারে।
উচ্চ ফাইবার সামগ্রী:
সবুজ আপেল প্রচুর পরিমাণে ফাইবার সমৃদ্ধ। ফাইবারযুক্ত খাবার আমাদের শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আমাদের অন্ত্রের ভাল ব্যাকটিরিয়ার পরিমাণ বৃদ্ধি করে অন্ত্রকে সুস্থ্য রাখে এবং অস্বাস্থ্যকর ব্যাকটিরিয়ার হাত থেকে রক্ষা করে ফাইবার।
এটি কয়েকটি গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনালের ঝুঁকি হ্রাস করতে পারে, যেমন প্রদাহজনক পেটের রোগ, খিটখিটে আন্ত্রিক সিন্ড্রোম এবং কোলন ক্যান্সার।
বার্ধক্যতা দূর করে:
বয়সের সাথে সাথে বার্ধক্য একটি সাধারণ বিষয়। তবে কিছু কিছু খাবার আছে যেগুলো আমাদের বার্ধক্য প্রক্রিয়া একটু ধীরে করে দিতে পারে। তার মধ্যে আপেল একটি।
আপেলে রয়েছে প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যা ফ্রি রেডিক্যাল নিয়ন্ত্রণ করে ত্বককে বার্ধক্যতার হাত থেকে দূরে রেখে সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
হাড়ের জন্য ভাল:
অন্যন্য ভিটামিন এবং খনিজগুলির পাশাপাশি সবুজ আপেলে ক্যালসিয়ামও যথেষ্ট পরিমানে রয়েছে। প্রতিদিন একটি সবুজ আপেল খাওয়া হাড় এবং দাঁতকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে।
ভিটামিন “এ” এবং “সি” এর সমৃদ্ধ উৎস:
সবুজ আপেল ভিটামিন “সি” এর একটি দুর্দান্ত উৎস যা ত্বকের কোষকে ফ্রি র্যাডিক্যাল এর ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে এবং ত্বকের ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস করে।
এছাড়া সবুজ আপেল যথেষ্ট পরিমানে ভিটামিন “এ” রয়েছে যা দৃষ্টিশক্তি ঠিক রাখতে সহায়তা করে।
ফ্যাট কম:
সবুজ আপেল কম ফ্যাট রয়েছে এবং দেহে রক্তের প্রবাহ ঠিক রাখতে সহায়তা করে। দেহে রক্তের প্রবাহ ঠিক থাকলে হার্টের রোগ এবং স্ট্রোক প্রতিরোধ করতে পারে।
এছাড়া সবুজ আপেল ভিটামিন “কে” সমৃদ্ধ, যা রক্ত জমাট বাঁধতে সহায়তা করে।
পাচনতন্ত্রকে সুস্থ্য রাখে:
এই ফলটিতে উচ্চ ফাইবার সামগ্রী রয়েছে যা দেহের বিপাক বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। উচ্চ ফাইবার পেতে গেলে আপেল অবশ্যই খোসাসহ খাবেন।
এতে থাকা ফাইবার উপাদান লিভার এবং পাচনতন্ত্রকে ক্ষতিকারক উপাদান থেকে দূরে রাখে। গ্রিন আপেলে পেকটিন নামক একটি ফাইবার থাকে যা অন্ত্রে স্বাস্থ্যকর ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি করে।