সুস্বাদু ফল “লিচু” ওজন কমায়, হজমকারক, হার্টের বন্ধু ও বয়স ধরে রাখে।

উজ্জ্বল, তপ্ত, আগুনঝরা গ্রীষ্ম বিভিন্ন ধরণের রসালো (juicy), জল ভিত্তিক (water based), সুস্বাদু ফল নিয়ে প্রতিবছর আমাদের সামনে হাজির হয়।

আমি নির্দ্বিধায় বলতে পারি এই মধু মাসে (বৈশাখ-জৈষ্ঠ) তরমুজ, আম, জাম, কাঁঠাল, জামরুলের মতো চমৎকার লাল টুসটুসে লিচুর জন্য আমরা অপেক্ষা করতে থাকি।

কবে মুখে পুরবো অসাধারণ স্বাদ গন্ধের এই ফলটিকে। লিচু মুখে দিলে মুখের স্বাদ গ্রন্থিগুলোকে এমন সুড়সুড়ি দেয়, একটা খেলে আর একটা খেতে ইচ্ছে করে। নিজেকে সামলানো খুবই কঠিন।

এখন গ্রীষ্মকাল। প্রচন্ড এই গরমে লাল টুসটুসে লিচু দেখলেই খেতে ইচ্ছে করে। দারুন সুস্বাদু ও রসালো ফল লিচু খাওয়ার এখনই উপযুক্ত সময়। অসাধারণ মিষ্টি গন্ধ ও স্বাদের ছোট্ট ফল লিচু গ্রীষ্মকালেই পাওয়া যায়।

সকল বয়সী মানুষের কাছে সমান জনপ্রিয় এই ফলটির পুষ্টিগুণ অবাক করার মতন। এর বাইরের ত্বক রুক্ষ অসমান হয়ে থাকে এবং ভেতরের অংশ মাংসল, রসে টইটম্বুর থাকে।

রং, রূপ, বর্ণ, গন্ধ, পুষ্টিগুণ- এককথায় এর সাথে অন্য কিছুর তুলনা হবে না। চীনে এটি ঔষধ হিসাবে ব্যবহৃত হয়।

Litchi chinensis এর বৈজ্ঞানিক নাম। এটি Sapindaceae পরিবারের একটি ফল। Lychee/ Litchi হলো একটি গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চলের ফল। Lychee means “gift for loyal life” surely lives up to its name.

চীনের নিম্ন elevation ভূমি (কুয়াংতুংগ ও ফুকেইন প্রদেশ), তাইওয়ান ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া হলো লিচুর আদি আবাসভূমি। লিচু আর রামবুটান ফল দেখতে প্রায় একই রকম।

লিচু একটি উচ্চ পুষ্টিমানের ফল। প্রচুর ভিটামিন “সি”- তে সমৃদ্ধ এই ফলটিতে কপার (Copper) ও ফসফরাস পাওয়া যায়। লিচুকে অনন্য করে তুলেছে polyphenol oligonol নামক এন্টি-অক্সিডেন্ট ও আন্টি-ভাইরাল বৈশিষ্ট্য।
লিচুতে কমলার থেকে ৪০-শতাংশ বেশি ভিটামিন “সি” পাওয়া যায়। স্যাচুরেটেড ফ্যাট ও সোডিয়াম কম থাকায় লিচু জনপ্রিয় সুপারফুড হিসাবে পরিগণিত।

লিচু খেলে কি ওজন বৃদ্ধি পায়?


না, বরং লিচু ওজন কমায়। লিচুতে থাকা ভিটামিন “সি” ফ্রি র‌্যাডিকেলগুলির বিরুদ্ধে লড়াই করে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট হিসাবে কাজ করে।

লিচি ডায়েটরি ফাইবারের একটি দুর্দান্ত উৎস যা ওজন হ্রাসে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

লিচুতে জলের পরিমান অনেক বেশি অথচ ফ্যাট নেই বললেই চলে, যেকারণে লিচুকে ওজন হ্রাসের জন্য একটি আদর্শ ফল হিসাবে বিবেচনা করা হয়।

লিচুর উপকারীতা



নিচে লিচুর উপকারীতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো –

এন্টিক্যান্সার প্রভাব রয়েছে:

লিচুর সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা হলো এটির এন্টিক্যান্সার প্রভাব রয়েছে। অনেকে লিচুর জুস খেতে ভালোবাসেন বিশেষ করে বাচ্চারা।

তবে যেভাবেই খাওয়া হোক না কেনো এটি আমাদের অনেক মারাত্মক রোগের হাত থেকে বাঁচাতে সাহায্য করে।

লিচুর নির্যাস ব্যবহার করে গবেষণায় দেখা গেছে, এদের মধ্যে শক্তিশালী এন্টিঅক্সিড্যান্ট ও ফ্লভনয়েডস রয়েছে যেটি ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করে। বিশেষ করে স্তন ক্যান্সার কোষগুলির বিরুদ্ধে দারুণ কার্যকর।

বয়স বৃদ্ধির লক্ষণ প্রতিরোধ করে:

মানবদেহের সবথেকে বড়ো অঙ্গ হলো ত্বক। তাই এই ত্বক সুস্থ্য, সতেজ ও টানটান রাখাটা অতীব জরুরি।

ত্বক যদি অল্প বয়সে ঝুলে পড়ে বা কুঁজকে যাই ও কালো দাগ পড়ে অর্থাৎ বয়সবৃদ্ধির এই চিহ্নগুলো যে কারো পক্ষে মেনে নেওয়া খুবই কঠিন।

কেহই নিজেকে বুড়া ভাবতে চাইনা। আপনি বুড়া হয়ে গিয়েছেন বা আপনাকে বয়স্ক দেখাচ্ছে এটি সর্বপ্রথম ও অতিদ্রুত জানান দেয় আমাদের ত্বক ও চুল

লিচুতে অতিমাত্রায় ভিটামিন সি থাকায় লিচু বয়সবৃদ্ধির এই চিহ্নগুলোকে বিলম্বিত করে। বয়স বেড়ে যাওয়ার সাথে সাথে শরীরের ভিতরে ফ্রি রেডিক্যালসের উৎপাদনও বেড়ে যায়।

এই ফ্রি রেডিক্যালস আমাদের ত্বকের ক্ষতি করে ও wrinkles সৃষ্টি করে। লিচু অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ হওয়ায় ফ্রি রাডিক্যালস প্রতিহত করে এবং ত্বককে রক্ষা করতে সাহায্য করে।

চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে:

প্রত্যেকেরই পেশাগত কাজের চাপ থাকে। এছাড়া সাংসারিক বিভিন্ন মানসিক চাপে এ জীবন জর্জরিত। তার উপর যুক্ত হয়েছে বায়ুমন্ডলের মারাত্মক দূষণ।

এগুলোর চাপে আমরা দুশ্চিন্তা ও টেনশনের সাগরে ডুবে যায়। ফলে অল্প বয়সে চুল পেঁকে ও পড়ে যাই ও চুলের স্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি সাধিত হয়।

লিচুতে copper(কপার) থাকায় এটি চুলের বৃদ্ধি ঘটায় ও চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। চুল দ্রুত বৃদ্ধি পায় যখন চুলের গ্রন্থিকোষগুলো (follicles) সঠিকভাবে পুষ্ট হয়।

কপার পেপটাইড চুলের গ্রন্থিকোষ সমূহকে পুষ্ট ও প্রসারিত করে এবং চুলের বৃদ্ধি ঘটায়।

হজম শক্তি বৃদ্ধি করে:

লিচু আমাদের Stomach (পেট)-পরিষ্কার করে। পাচনতন্ত্রকে শক্তিশালী রাখে। ক্ষুধা বাড়ায়। বুক জ্বালা ও পেটের মধ্যকার সমস্যা নিরাময় করে। এটি শরীরের শক্তির মাত্রা বাড়ায়।

লিচুতে দ্রবণীয় ফাইবার রয়েছে যা অন্ত্রের সমস্যাগুলি নিয়ন্ত্রণ করে এবং পেটকে বিষাক্ত যৌগ থেকে মুক্ত রাখে ও কোলন পরিষ্কার করতে সহায়তা করে।

হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়:

লিচু রক্তচাপ এবং হার্ট রেটকে কমিয়ে স্ট্রোকের ঝুঁকি থেকে আমাদের রক্ষা করে ও করোনারি হৃদরোগের বিরুদ্ধে আমাদের সুরক্ষা দেয়।

লিচুতে দ্বিতীয় সর্বোচ্ছ ডিগ্ৰী পলিফেনল রয়েছে যা হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।

লিচুতে উপস্থিত অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, ছত্রাকের অগ্রগতি হ্রাস করে এবং সব কার্ডিওভাসকুলার রোগগুলি ব্লক করে।

ওজন কমায়:

লিচুতে ক্যালোরি খুব কম থাকে। এতে কোনো সংশ্লেষযুক্ত ফ্যাট বা কলেস্টেরল থাকে না। এটি ফাইবার সমৃদ্ধ একটি ফল। যারা ওজন কমাতে চান তাদের জন্য লিচু হলো একটি আদর্শ ফল।

ভিটামিন “বি”:

লিচু ভিটামিন বি কমপ্লেক্স যেমন- থিয়ামিন, রিবোফ্লোবিন, নিয়াসিন এবং ফোলেটসের একটি ভালো উৎস। এই ভিটামিন শরীরকে কার্বোহাইড্রেটে, প্রোটিন এবং ফ্যাটগুলিকে শোষণে সহায়তা করে।

এটি একটি উচ্চস্তরের বিটা ক্যারোটিন যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে এবং লিভার ও অন্যান্য অঙ্গগুলির কার্যকে উন্নত করে।

সতর্কতা

যারা কঠিন ও জটিল রোগে ভুগছেন তারা অবশ্যই তাঁদের ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাবেন। পরিমান মতো খেলে লিচুর কোনো ক্ষতিকর প্রভাব পাওয়া যায়নি।

অতিরিক্ত খেলে ডায়াবেটিস বৃদ্ধিসহ আরো কিছু শারীরিক সমস্যা হতে পারে। তাই অতিরিক্ত খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।

আমরা জানি, অতিরিক্ত কোনো কিছুই শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর।

  • একেবারে খালিপেটে কাঁচা লিচু খাওয়া ঠিক নয় বিশেষ করে বাচ্চাদের ক্ষেত্রে।