বাড়িতে করোনা রোগী থাকলে কিভাবে পরির্চযা করবেন।

করোনাভাইরাসের হটস্পট এলাকার হাসপাতালগুলি রোগীদের চাপে দিন দিন ভারী হয়ে উঠছে। কম লক্ষণযুক্ত অনেক লোককে বাড়িতে চিকিৎসা করার পরামর্শ শুধু নয়, বাড়িতেই চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

যদি আপনার বাড়ির কোনও প্রিয়জনের কোভিড-১৯ এর রিপোর্ট পসিটিভ আসে এবং ভাইরাসের লক্ষণগুলি প্রকাশ পেতে শুরু করে তাহলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি হলো আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য সম্পূর্ণ আলাদা শয়নকক্ষ এবং বাথরুম সরবরাহ করা।

এটি বলা যতটা সহজ কিন্তু পালন করা অতটা সহজ না হলেও আপনার পরিবারের যখন কোনও সংক্রামিত ব্যক্তি থাকে তখন বিচ্ছিন্নতা (isolation) হল মূল বিষয় এবং এটা আপনাকে মেনে চলতেই হবে।

বাড়িতে করোনাভাইরাস রোগীর যত্ন নেওয়া আরও একটি চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসে। সেটি হলো পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের করোনা থেকে সুরক্ষিত রাখা।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ খুবই ছোঁয়াচে একটি রোগ। ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী ও পরিবারের বাকি সদস্যরা যেভাবে আক্রান্ত হচ্ছেন তাতে বোঝা যায় এই ভাইরাসটি কতটা ছোঁয়াচে এবং আমাদের কতটা সচেতন হতে হবে।

কিন্তু আমরা যদি আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে না যাই এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ করি তাহলে এতে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি কম। কাজেই আপনার পাশের বাড়িতে বা ফ্ল্যাটে করোনা সংক্রমিত রোগী থাকলে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।

বাড়িতে কারও করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হলে বা করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন বলে সন্দেহ হলে কিছু বিষয় অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।

এগুলো হলো আইসোলেশন বা আলাদা রাখা, নিরাপত্তা ও পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতা, চিকিৎসা, মানসিকভাবে সবল রাখা এবং পরিবারের সদস্যদের সুরক্ষা।

আপনি যদি COVID-19 নিয়ে অসুস্থ হন বা মনে করেন আপনার COVID-19 থাকতে পারে তবে নিজের যত্ন নেওয়ার জন্য এবং আপনার বাড়ির লোকদের সুরক্ষা করার জন্য নীচের পদক্ষেপগুলি অনুসরণ করুন-

বাড়িতে থাকুন:

COVID-19 আক্রান্ত বেশিরভাগ ব্যক্তির হালকা অসুস্থ্যতা থাকে এবং এমতাবস্থায় তারা বাড়িতে বসে চিকিৎসা পরিষেবা চালিয়ে যেতে পারেন।

চিকিৎসা সেবা ব্যতীত আপনি বাড়ি ছেড়ে যাবেন না। জনসমাগম এড়িয়ে চলুন। অযথা রাস্তাঘাটে, বাজারে ঘুরে বেড়াবেন না। চায়ের দোকানে, সেলুনে বসে গল্প করা, আড্ডা দেওয়া বাদ দিন।

নিজের যত্ন নিন:

বিশ্রামে থাকুন এবং হাইড্রেটেড থাকুন। যতটা সম্ভব একটি নির্দিষ্ট ঘরে থাকুন এবং আপনার বাড়ির অন্যান্য ব্যক্তি এবং পোষা প্রাণী থেকে দূরে থাকুন। এছাড়াও আপনার যদি পৃথক বাথরুম থাকে তবে তা ব্যবহার করুন।

ডাক্তারের সাথে সর্বদা যোগাযোগ রাখুন:

চিকিৎসা সেবা নেওয়ার আগে কল করুন। আপনার যদি শ্বাস নিতে সমস্যা হয়, বা অন্য কোনও জরুরি সতর্কতার লক্ষণ রয়েছে বা আপনি যদি এটি জরুরী মনে করেন তবে সাথে সাথে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

আপনি যদি এই জরুরী সতর্কতা চিহ্নগুলির কোনও লক্ষণ প্রকাশ বা বিকাশ লাভ করে তাহলে কভিড -১৯ এর জন্য অবিলম্বে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।

  • মারাত্মকভাবে শ্বাস নিতে সমস্যা হচ্ছে
  • বুকে ক্রমাগত ব্যথা বা চাপ
  • নীল ঠোঁট বা মুখ

এই তালিকায় সবগুলো বা কোনো গুরুতর উপসর্গের জন্য দয়া করে স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয় নির্দেশিত জরুরি নম্বরে কল করুন।

আপনার লক্ষণগুলি নিরীক্ষণ করুন:

COVID-19 এর সাধারণ লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে জ্বর এবং কাশি। কিন্তু যদি গুরুতর শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে যাই তাহলে সাথে সাথে চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে চিকিৎসা শুরু করতে হবে।

আপনার স্বাস্থ্যসেবা সরবরাহকারী এবং স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগের যত্নের নির্দেশাবলী অনুসরণ করুন।

পাবলিক ট্রান্সপোর্ট :

রাইড শেয়ারিং বা ট্যাক্সিগুলি এড়িয়ে চলুন। গ্লাভস বা সুরক্ষিত কিছু হাতে পরা না থাকলে লিফটের বাটনে হাত দেবেন না।

* রুমের সাথেই বাথরুম সংযুক্ত এই রকম একটি কক্ষকে রোগীর জন্য আলাদা করে দিতে পারলে ভালো হয়। তার ব্যবহারের সবকিছু আলাদা থাকবে। রুমটা বদ্ধ না হয়ে বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা থাকলে সবথেকে ভালো হয়।

* কক্ষটিকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে ও বাড়তি আসবাব, কার্পেট ইত্যাদি সরিয়ে ফেলুন। ঘরের দরজা অতি প্রয়োজন ছাড়া খুলবেন না। নেগেটিভ বাতাসের প্রবাহ’ তৈরি করতে পারলে আরও ভালো। এ ক্ষেত্রে একজস্ট ফ্যান বা স্ট্যান্ড ফ্যান ভালো কাজে দেয়।

* আলাদা কক্ষের ব্যবস্থা না করা গেলে নিজেদের কক্ষেই জানালার কাছে পর্দা দিয়ে রোগীর জন্য আলাদা অস্থায়ী কক্ষ তৈরি করুন।

* রোগীর বিছানার চারদিকে যথেষ্ট পরিমাণে জায়গা থাকা উচিত। কমপক্ষে ৩ ফুট হলে ভালো।

* বিছানার পাশে জিনিসপত্র, গ্লাস, ওষুধ রাখার জন্য ছোট একটা টেবিল রাখুন। প্রতিদিন কয়েকবার রোগী নিজেই জীবাণুনাশক তরল দিয়ে এগুলো পরিষ্কার করবেন।

* রোগীর বাথরুম থেকে অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরিয়ে ফেলুন। এই বাথরুম বাড়ির আর কারও ব্যবহার না করাই উচিত। সবচেয়ে ভালো হয় রোগী যদি নিজের জামাকাপড় ও টয়লেট ধুয়ে নেন।

* রোগীর ময়লা বা ব্যবহৃত আবর্জনা ফেলতে ঢাকনাসহ বিন বিছানার কাছেই রাখুন।

রোগী নিজে সচেতন হয়ে হাঁচি, কাশি থুতু সম্বলিত টিস্যু, রুমাল একটা পলিথিনের ব্যাগে বা বিনের ভিতরে ফেলবেন। প্রতিদিন ডাস্টবিনটা অন্য কেউ গ্লাভস পরে বাইরে নিয়ে যাবেন।

পুরো বাড়ি আবর্জনামুক্ত ও পরিচ্ছন্ন রাখুন। বাড়ির ভেতরে রোগীর থাকার জায়গা চিহ্নিত করে আলাদা করুন। চিহ্নিত জায়গার ভেতরে পরিচর্যাকারী ছাড়া আর কেউ যাবেন না।

 রোগীর কক্ষ ও হাঁটাচলার পথ রোজ দু-একবার ব্লিচিং পাউডার মিশ্রিত পানি দিয়ে পরিষ্কার করুন।

বাসার শিশুদের জন্য নির্ধারিত জায়গা ঠিক করুন। তাদের খেলার ব্যবস্থা এবং সৃজনশীল কাজের ব্যবস্থা করে দিন। বয়স্ক ও অন্তঃসত্ত্বা নারীদের দূরে রাখুন।

পরিবারের সদস্যদের মানসিক সুস্থতার কথা ভাবুন। রোগীর সঙ্গে মুঠোফোনে বা ডিজিটাল মাধ্যমে পরিবারের সবাই যোগাযোগ রাখুন, তাঁকে মানসিকভাবে চাঙা রাখার চেষ্টা করুন।

দেখতে হবে আক্রান্ত ব্যক্তি যাতে যথেষ্ট বিশ্রাম পান, পুষ্টিকর খাবার খান, প্রচুর পানি আর তরল পান করেন। একই ঘরে যখন সেবা কাজে, তখন মেডিকেল মাস্ক পরবেন দুজনে।

হাত দিয়ে মাস্ক ধরবেন না। মুখে হাত দেবেন না। কাজ শেষে মাস্ক ফেলে দেবেন ময়লার ঝুড়িতে। 

বারবার হাত ধোবেন সাবান পানি দিয়ে বা স্যানিটাইজার দিয়ে: অসুস্থ ব্যক্তির সংস্পর্শে বা এর চারপাশের সংস্পর্শে এলে খাবার তৈরির আগে, খাবার খেতে বসার আগে ও টয়লেট ব্যবহারের পর।

অসুস্থ মানুষের জন্য আলাদা বাসনপত্র, তোয়ালে, বিছানার চাদর—এসব জিনিস সাবান দিয়ে ধুতে হবে। অসুস্থ ব্যক্তি যা যা হাত দিয়ে স্পর্শ করবেন, সেগুলো বারবার জীবাণু শোধন করুন।

সূত্র: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা