পানিফল পানিশূন্যতা দূর করে, ক্যান্সার প্রতিরোধী ও হার্টের রোগের ঝুঁকি হ্রাস করে।

জলাশয়ে চাষ হয় বলে একে পানিফল বলা হয়। দেখতে সিঙ্গারার মতো তাই এটি হিন্দিতে সিঙ্গারা (singhara) নামে পরিচিত।

পানিফল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, চীন, অস্ট্রেলিয়া, আফ্রিকা এবং ভারতবর্ষের স্থানীয় বলে মনে করা হয়। পানিফল রান্না করে এবং কাঁচা দুই ভাবেই খাওয়া যায়।

সুস্বাদু, হালকা মিষ্টি ও সতেজ স্বাদের এই ফলটিকে ইংরাজিতে বলে water chestnuts এবং বৈজ্ঞানিক নাম Eleocharis dulcis. পানিফল খোসার ভিতরের অংশটা সাদা। পানিফল দুই রঙের হয় সবুজ ও হালকা লালচে। সহজলভ্য এ ফলটি শীতের শুরুতে পাওয়া যায়।

পানিফল খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি পুষ্টিতেও ভরপুর। এতে আছে কার্বোহাইড্রেড ও শর্করা।

এছাড়া রয়েছে— রাইবোফ্ল্যাবিন, ভিটামিন “বি”, পটাশিয়াম, কপার, ম্যাঙ্গানিজ ও আমিষ। এই ফলটিতে উচ্চ পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে।

পানিফলে ক্যালোরি কম থাকায় ওজন কমাতে সাহায্য করে এবং হার্টের রোগের ঝুঁকি কমাতে ও উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।

পানিফলের পুষ্টিগুণ

পানিফলে বেশ কয়েকটি পুষ্টি উপাদান রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান নিচে দেওয়া হলো-

  • ক্যালোরি: ৯৭
  • পানি: ৭৪%
  • ফাইবার: ৩ গ্রাম
  • পটাশিয়াম: ১৭% (RDI)
  • ম্যাঙ্গানিজ: ১৭% (RDI)
  • তামা: ১৬% (RDI)
  • ভিটামিন বি-6: ১৬% (RDI)
  • রিবোফ্লাভিন: ১২% (RDI)
  • ম্যাঙ্গানিজ: ১০% (DV)

পানিফলের উপকারিতা

পানিফল ফাইবারের একটি দুর্দান্ত উৎস। গবেষণায় দেখা যায় যে, প্রচুর পরিমাণে ফাইবার খাওয়া অন্ত্রের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে, রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস করতে, রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে এবং অন্ত্রকে সুস্থ্য রাখতে সহায়তা করে।

নিচে পানিফলের উপকারিতা দেওয়া হলো –

ওজন কমায়:

পানিফলে ৭৪% পানি থাকে। তাই অল্প খেলেই পেট ভরে যায় এবং বেশি সময় ধরে পেট ভরিয়ে রাখতে সাহায্য করে।

ফলে বারবার খাওয়ার প্রবণতা কমে যায়। যারা ওজন কমাতে চান তারা পানিফল ডায়েটে যোগ করতে পারেন।

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ:

পানি ফলে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট ফ্রি র‌্যাডিকাল নামক ক্ষতিকারক অণু থেকে শরীরকে রক্ষা করতে সহায়তা করে।

যদি ফ্রি র‌্যাডিকাল শরীরে জমা হয় তবে তা অক্সিডেটিভ স্ট্রেস তৈরি করে।

অক্সিডেটিভ স্ট্রেস হার্টের রোগ, টাইপ-2 ডায়াবেটিস এবং বিভিন্ন ধরণের ক্যান্সার সহ দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকির কারণ।

পানি ফল ফারিউলিক অ্যাসিড, গ্যালোকোটেকিন গ্যালেট, এপিকেচিন গ্যালেট এবং ক্যাটচিন গ্যালেটে এসব অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। তাই পানিফল ক্যান্সার সহ দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি কমাতে পারে।

হার্টের রোগের ঝুঁকি হ্রাস করে:

বয়স বাড়লেই উচ্চ রক্তচাপ, রক্তে উচ্চ কোলেস্টেরল, স্ট্রোক এবং রক্তে উচ্চ ট্রাইগ্লিসারাইডস যেন সাধারণ একটি বিষয় হয়ে উঠেছে।

আর এসব কারণে বাড়ছে হার্টের রোগের ঝুঁকি। মজার বিষয় হল, পানি ফল উচ্চ রক্তচাপ কমাতে পারে। কারণ এটি পটাশিয়ামের একটি উৎস।

৩৩ টি গবেষণার বিশ্লেষণে দেখা গেছে যে, উচ্চ রক্তচাপের লোকেরা যখন বেশি পরিমাণে পটাসিয়াম গ্রহণ করেন, তখন তাদের সিস্টোলিক রক্তচাপ এবং ডায়াস্টলিক রক্তচাপ যথাক্রমে ৩.৪৯ mmHg এবং ১.৯৬ mmHg হ্রাস পায়।

একই বিশ্লেষণে আরও দেখা গেছে যে, যারা সবচেয়ে বেশি পটাশিয়াম গ্রহণ করেছিলেন তাদের স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি ২৪% হ্রাস পেয়েছিল।

পানিশূন্যতা দূর করে:

পানির ঘাটতি পূরণের জন্য পানিফল অতুলনীয়। কারণ পানিফলে ৭৪ ভাগই পানি। তাই পানিফল শরীরে প্রয়োজনীয় পানিশূন্যতা দূর করে আমাদের সুস্থ্য থাকতে সাহায্য করে।

দেহকে শীতল করে:

পানিফল একটি প্রাকৃতিক শীতলকারক। হালকা মিষ্টি ও সতেজ স্বাদের পানিফল শরীরকে শীতল রাখতে সহায়তা করে।

এটি কেবল শরীরকে হাইড্রেট করে না, অতিরিক্ত ঘামের কারণে নষ্ট হওয়া পুষ্টি এবং ইলেক্ট্রোলাইট করতে সহায়তা করে।

ক্যান্সার হওয়ার প্রবণতা কমায়:

পানিফলে রয়েছে উচ্চ মাত্রায় অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট ফেরুলিক অ্যাসিড (ferulic acid)। বেশ কয়েকটি গবেষণায় ফেরুলিক অ্যাসিড কয়েকটি ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস করেছে।

একটি টেস্ট-টিউব সমীক্ষায় বিজ্ঞানীরা দেখতে পেয়েছেন যে, স্তন ক্যান্সারের কোষের বৃদ্ধি দমন করতে পারে ফেরুলিক অ্যাসিড।

অন্যান্য টেস্ট-টিউব সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, ফেরিলিক অ্যাসিড ত্বক, থাইরয়েড, ফুসফুস এবং হাড়ের ক্যান্সারের কোষগুলির বৃদ্ধি দমন করতে সহায়তা করেছে।

রেফারেন্স: