বদহজম দূর করার প্রাকৃতিক উপায়।
বদহজম একটি বিরক্তিকর সমস্যা, যা মাঝেমধ্যে প্রকট হয়ে ওঠে। কারও দুধ খেলে পেট ফাঁপে, কারও শাক।
যে খাবারে সমস্যা হয়, তা এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। এমনিতে উচ্চ তেল-চর্বিযুক্ত খাবার, ভাজাপোড়া খাবার হজম করতে সমস্যা হয়।
এই সমস্যা সমাধানের জন্য আমরা ঔষুধ খেতে পারি কিন্তু এসব ঔষুধের নিজস্ব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে।
তাই সহজেই বদহজম এর সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আমরা কয়েকটি প্রাকৃতিক প্রতিকার বেছে নিতে পারি। নিচে সেগুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
লেবুর শরবত:
লেবুর পানির ক্ষারীয় প্রভাব পেটের অ্যাসিড কমায় এবং হজমে উন্নতি করে। গরম বা উষ্ণ গরম পানিতে ১ চামচ লেবুর রস মিশিয়ে খাবার খাওয়ার কয়েক মিনিট আগে পান করুন।
এছাড়া লেবুর পানি ভিটামিন “সি” এর একটি দুর্দান্ত উৎস। তবে পরিমানে বেশি লেবুর পানি বা লেবু খেলে দাঁতে এনামেলটি পরে অর্থাৎ দাঁত টক হয়ে যায় এবং প্রস্রাব বেড়ে যায়।
যষ্টিমধু:
যষ্টিমধু আবার বদহজম বা অ্যাসিডিটির খুব ভাল ওষুধ। অ্যাসিড রিফ্লাক্স, অস্থির পেট এবং অম্বলের মতো বদহজমের লক্ষণগুলি দূর করতে প্রায়শই যষ্টিমধু ব্যবহার করা হয়।
বদহজম দ্বারা আক্রান্ত ৫০ জন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের নিয়ে ৩০ দিনের একটি গবেষণায়, প্রতিদিন ৭৫ বার-মিলিগ্রাম যষ্টিমধু ক্যাপসুল গ্রহণের ফলে বদহজমের লক্ষণগুলি উন্নতি ঘটে।
এছাড়া ফুটানো পানিতে যষ্টিমধু ভিজিয়ে রেখে অল্প করে মধু মিশিয়ে পান করতে পারেন। খুব সহজেই অ্যাসিডিটি দূর হবে। খাবার খাওয়ার ৩০ মিনিট আগে বা এক ঘন্টা পরে যষ্টিমধু ভিজানো পান করুন।
বেকিং সোডা:
বেকিং সোডা দ্রুত পেটের অ্যাসিডকে কমায় এবং খাওয়ার পরে বদহজম, ফোলাভাব এবং গ্যাস উপশম করতে পারে।
১/২ চা চামচ বেকিং সোডা ৪ আউন্স গরম পানিতে মিশিয়ে পান করুন। সোডিয়াম বাইকার্বোনেট (বেকিং সোডা) সাধারনত নিরাপদ এবং ননটক্সিক।
তবে প্রচুর পরিমাণে বেকিং সোডা পান করার ফলে কিছু অনাকাঙ্খিত পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে। যেমন কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়রিয়া, বমি বমিভাব এবং মাংসপেশীর কোঁচ।
মৌরি বীজ:
মৌরি বীজ খাওয়ার পরে বদহজমের প্রতিকারও করতে পারে, পাশাপাশি অন্যান্য গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যা যেমন বমিভাব এবং ফোলাভাব দূর করতে পারে।
পানিতে ১/২ চা চামচ মৌরি বীজ গুড়ি করে দিন তারপর ১০ ধরে জ্বাল দিয়ে পান করুন। এছাড়া মৌরি চা ও পান করতে পারেন।
আদা:
বদহজমের জন্য আদা আর একটি প্রাকৃতিক প্রতিকার কারণ এটি পাকস্থলীর অ্যাসিডকে হ্রাস করতে পারে। যাদের হজমের সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য আদা ভীষণ উপকারী।
এছাড়া দীর্ঘস্থায়ী বদহজমের কারণে পেটের উপরের অংশে বা বুকে ব্যথা কমাতে পারে আদা।
এক বা দুই টুকরো আদা চার কাপ পানিতে সিদ্ধ করুন। পান করার আগে লেবু বা মধু যোগ করতে পারেন।
জোয়ান পানি:
জোয়ান সিদ্ধ করে সেই জল খেয়ে ফেললে বদহজমের সমস্যা এড়ানো যায়। সকালে ঘুম থেকে উঠেই এই পানি খেয়ে নিন।
পুদিনা:
পুদিনা পাতার রস গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করতে বহুদিন ধরেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
প্রতিদিন পুদিনা পাতার রস বা পাতা চিবিয়ে খেলে এসিডিটি ও বদহজম থেকে দূরে থাকতে পারবেন।
এটি শরীরে অ্যান্টিস্পাসোডিক প্রভাবও ফেলে, এটি বমি বমি ভাব এবং বদহজমের মতো পেটের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য দুর্দান্ত। খাবারের পরে এক কাপ পুদিনা চা পান করুন।
জিরা পানি:
এক চা চামচ জিরা নিয়ে ভেজে ফেলুন। এবার এটিকে এমন ভাবে গুড়া করুন যেন পাউডার না হয়ে যায়, একটু ভাঙা ভাঙা থাকে।
এই গুড়াটি একগ্লাস পানিতে মিশিয়ে প্রতিবার খাবারের সময় পান করুন। দেখবেন কেমন ম্যাজিকের মতো কাজ করে। অ্যাসিডিটির সমস্যার জন্য ভালো জিরা পানি খুবই উপকারি।
যেকোনো ভারী খাবার খাওয়ার পর ধীরে ধীরে জিরাপানি খেলে অ্যাসিডিটির হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। পেটের গ্যাস কমাতে জিরা পানি সাহায্য করে।