দৈনন্দিন জীবনে গ্রীন টির বিভিন্ন উপকারীতা।

গ্রীন টি ক্যামেলিয়া সাইনেনসিস গাছের পাতা এবং কুঁড়ি বা মুকুল থেকে তৈরি করা হয়। গ্রীন টিতে সর্বাধিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং উপকারী পলিফেনল রয়েছে।

চীনা ও ভারতীয় ঔষুধে গ্রীন টি ব্যবহৃত হয়। ওজন কমানো থেকে সৌন্দর্য বৃদ্ধি, একাধিক উপকারীতার কারণে গত কয়েক দশকে মধ্য থেকে উচ্চ, সমাজের প্রায় প্রতিটি স্তরেই গ্রিন টির জনপ্রিয়তা চোখে পড়ার মতো বৃদ্ধি পেয়েছে।

শুধু স্বাস্থ্য উপকারীতার মধ্যেই গ্রীন টি সীমাবদ্ধ নয়। স্বাস্থ্য উপকারীতা, রূপচর্চা থেকে শুরু করে ঘরোয়া বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয় গ্রীন টি। বিশ্বব্যাপী ৭৮ শতাংশ ব্ল্যাক টি বাকি ২০ শতাংশ গ্রীন টি।

আমরা সাধারণত যে চা পান করে থাকি সেই ব্ল্যাক টি থেকে গ্রীন টি-র প্রস্তুতপ্রণালী কিছুটা ভিন্ন। গ্রীন টি সর্বপ্রথম চায়নাতে আবিষ্কৃত হয় এবং ধীরে ধীরে এশিয়ার অন্যান্য দেশে এটি ছড়িয়ে পড়ে। বেশ কয়েক ধরণের গ্রীন টি বাজারে পাওয়া যায়।

গ্রীন টিতে রয়েছে প্রচুর অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট, যা সব দিক থেকে শরীর চাঙা রাখে। এটি রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়ায়, ক্যান্সার প্রতিরোধ করে, উচ্চ রক্তচাপ, মস্তিষ্কের উন্নতি ঘটায়, চর্বি এবং ডায়াবেটিস ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।

এছাড়া ক্যাটেচিন নামক একটি উপাদান থাকে এই চায়ে যা ভিটামিন “ই” এবং “সি” থেকেও বেশি শক্তিশালী।

দৈনন্দিন জীবনে গ্রীন টির বিভিন্ন উপকারীতা

নিচে গ্রীন টির কয়েকটি ব্যবহার দেওয়া হল –

  • বর্তমানে গ্রীন টি সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় এর ওজন কমানোর গুণের কারণে। এটি অতিরিক্ত চর্বি কমিয়ে ওজন নিয়ন্ত্রণে আনতে সাহায্য করে। একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে এটি এক দিনে ৭০ ক্যালরি পর্যন্ত ফ্যাট বার্ন করে।
  • ঘামের দুর্গন্ধ দূর করতে গ্রীন টি খুবই ভালো কাজ করে। গোসলের পর ঠান্ডা গ্রীন টি আন্ডারআর্ম (Underarm) এ লাগালে দুর্গন্ধ দূর হবে। ঠিক এমনিভাবে পায়ের দুর্গন্ধ দূর করতেও একই পদ্ধতি অনুসরণ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
  • গ্রীন টি খুব ভালো টোনার হিসেবে কাজ করে। ১ কাপ পানিতে ৫ চামচ গ্রিন টি, ১ চামচ পুদিনা পাতা একসাথে ১০ মিনিট ফুটান। তারপর ঠান্ডা করে ছেঁকে নিয়ে একটি স্প্রে বোতলে সংরক্ষণ করুন। এই টোনারটি দিনে ২-৩ বার ব্যবহার করুন। এটি ত্বকের জন্য খুব উপকারী।
  • এতে রয়েছে এক ধরনের অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট (Antioxidant) যা বার্ধক্যের গতিকে ধীর করে এবং আয়ু বাড়ায়।
  • চোখের ফোলা ভাব এবং চোখের নিচের ডার্ক সার্কেল (Dark Circle) কমাতে ব্যবহার করা হয়। গ্রীন টির দুটি ব্যাগ ২ ঘন্টা ফ্রিজ এ রেখে, ঠান্ডা করে চোখ বন্ধ করে চোখের উপর ১০ মিনিট রাখুন।
  • গ্রীন টির পাতা মধুর সাথে মিক্স করে স্ক্রাব হিসেবে ব্যবহার করা যায়। যা লোমকুপের ময়লা এবং মৃত কোষ দূর করে ত্বককে নরম ও মসৃণ করে।
  • অর্ধেক কলা, ১ চামচ গ্রিন টি, ১ চামচ মধু এবং ১ চামচ টক দই ভালো মতো মিশিয়ে মুখে লাগান এবং শুকালে ধুয়ে ফেলুন। এটি শুষ্ক ত্বকের জন্য খুব ভালো ময়েশ্চারাইজিং মাস্ক (Moisturizing Mask) হিসেবে কাজ করে।
  • নিয়মিত এক কাপ গ্রীন টি পান হার্ট এর রোগের ঝুঁকি ৪৪% কমায় এবং ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখে।
  • গ্রীন টি নিয়মিত পান করলে মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়, ওরাল ব্যাকটেরিয়া (Oral Bacteria) ধ্বংস করে এবং ডেন্টাল ক্যাভিটিস (Dental Cavities) প্রতিরোধ করে।
  • ফ্রিজের দুর্গন্ধ দূর করতে গ্রীন টি একটি পাতলা কাপড়ে বেঁধে ফ্রিজের এক কোনায় রেখে দিন।
  • ৩-৪ টি গ্রীন টি ব্যাগ ১ লিটার পানিতে এক ঘণ্টা ফুটিয়ে ঠান্ডা করে নিন। এরপর চুল শ্যাম্পু করার পর সেই পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। এটি আপনার চুলকে শক্ত ও মজবুত করবে। এটি চুলের গোড়া শক্ত করে এবং হেয়ার ফলিকল (Hair Follicle) উদ্দীপিত করে যা নতুন চুল গজাতে সহায়ক।
  • মেডিকেল গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, গ্রীন টি ব্রণের সমস্যা ট্রিটমেন্টের জন্য খুবই কার্যকরী। এটি ত্বকে কোন রকম ড্রাইনেস তৈরী করা ছাড়াই ব্রণ নির্মূল করে।
  • গ্রীন টি মাউথওয়াশ হিসেবে খুব ভালো কাজ করে। এতে আছে এন্টিব্যাক্টেরিয়াল প্রপার্টিস (Antibacterial Properties), এতে কোনো এলকোহল (Alcohol) নেই যা রেগুলার মাউথওয়াশে (Mouthwash) থাকতে পারে।
  • গ্রীন টি পানিতে কয়েকদিন ভিজিয়ে রেখে গাছের গোড়ায় সেই পানি দিলে তা ফারটিলাইজার (Fertilizer) হিসেবে কাজ করে।