ডিম মস্তিষ্ক বিকাশে, রক্তচাপ হ্রাস, হার্টের রোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়।
ডিম ভাজি বা ডিম সেদ্ধ কিংবা ডিম ভুনা যাই হোকনা কেন ডিম সকলেরই পছন্দের একটি খাবার। একটি স্বাস্থ্যকর ডায়েট চার্টে ডিম এর স্থান শীর্ষে।
যারা ডায়েট করেন শুধু তাদেরই নয় প্রত্যেকের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ডিম থাকা খুবই জরুরী। কারণ আমাদের দেহ গঠনের জন্য সব প্রয়োজনীয় উপাদানই রয়েছে ডিমে।
ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ থাকলে, হার্টের রোগ থাকলে ডিম খেতে মানা—এমন কথা অনেকেই বলে থাকে।
কিন্তু এ কথাটা কতটুকু সত্য? আসলে ডিমে খুব বেশি ক্যালরি নেই বরং ডিম (egg) থেকে প্রোটিন, ভিটামিন, খনিজ, অ্যান্টি–অক্সিডেন্টসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকর পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায়।
একটি বড় সেদ্ধ ডিমে ৭o ক্যালরি রয়েছে। প্রোটিন আছে ৬ গ্রাম। তাই রক্তে শর্করা বৃদ্ধির প্রশ্ন আসে না।
সব বয়সের মানুষের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করতে পারে ডিম। ডিমের সাদা অংশটুকু উচ্চ মানের জৈব আমিষ, আর কুসুমে স্নেহ পদার্থ, লৌহ ও ভিটামিন থাকে।
শিশুর দৈহিক বৃদ্ধি, হাড় গড়নে ও মেধার বিকাশে ডিম খুবই কার্যকরী। কেননা ডিমে রয়েছে ভিটামিন “এ”, যা দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে। আবার কুসুমে আছে ভিটামিন “ডি”, যা হাড়ের সুস্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
ডিমের পুষ্টি উপাদান
অনেক গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান রয়েছে ডিমে। নিচে কয়েকটি পুষ্টি উপাদান দেওয়া হলো –
- ভিটামিন “এ”: ৬%
- ফোলেট: ৫%
- ভিটামিন বি 5: ৭%
- ভিটামিন বি 12: ৯%
- ফসফরাস: ৯%
- ভিটামিন বি 2: ১৫%
- সেলেনিয়াম: ২২%
ডিমের উপকারিতা
হাঁসের ডিম, মুরগির ডিম বা কোয়েলের ডিম যাইহোক না কেন প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় একটি করে ডিম থাকা খুবই জরুরী। ডিম খাওয়ার উপকারিতা নিচে দেওয়া হলো-
হার্টের রোগ, স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়:
আমাদের শরীরে HDL (ভালো কোলেস্টেরল) বৃদ্ধি করে ডিম। যাদের শরীরে HDL উচ্চ মাত্রাই রয়েছে তাদের হার্টের রোগ, স্ট্রোক এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি কম থাকে।
একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ছয় সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন দুটি ডিম খাওয়ার ফলে HDL এর মাত্রা ১০% বৃদ্ধি পেয়েছে।
ট্রাইগ্লিসারাইড এর মাত্রা হ্রাস করে:
ওমেগা-3 সমৃদ্ধ ডিম ট্রাইগ্লিসারাইড এর মাত্রা হ্রাস করে। ফার্মের ডিমের তুলনায় দেশি মুরগির ডিমে ওমেগা–3 বেশি।
ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড রক্তের ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা হ্রাস করতে পারে যা হার্টের রোগের জন্য দায়ী।
একটি গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি সপ্তাহে মাত্র পাঁচটি ওমেগা-3 সমৃদ্ধ ডিম খাওয়ার ফলে ট্রাইগ্লিসারাইড এর মাত্রা ১৬-১৮% হ্রাস পেয়েছে।
মস্তিষ্ক এর জন্য ভালো:
এমন কিছু ভিটামিন এবং খনিজ থাকে ডিমে যা মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকরভাবে কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয়।
প্রতিদিন শিশুদের একটি করে ডিম খাওয়ালে মেধা বিকাশে সহায়তা করবে।
গর্ভাবস্থা এবং বুকের দুধ খাওয়ানোর মায়েদের জন্য কোলিনের পর্যাপ্ত সরবরাহ বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
কারণ, শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য কোলিন প্রয়োজনীয়। ডিম কোলিনের একটি ভালো উৎস।
উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ:
আমাদের খাদ্য তালিকায় পর্যাপ্ত পরিমাণের প্রোটিন থাকলে ওজন হ্রাস পায়, রক্তচাপ হ্রাস পায় এবং হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো থাকে।
ডিম প্রোটিনের একটি দুর্দান্ত উৎস। একটি বড় ডিম থেকে ৬ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায়। তাই আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ডিম রাখা উচিত।
চোখের জন্য ভালো:
বার্ধক্যজনিত সমস্যার মধ্যে একটি হল দৃষ্টিশক্তি। ডিমে অনেকগুলি পুষ্টি উপাদান রয়েছে যা আমাদের চোখকে ভালো রাখতে সহায়তা করে।
লুটিন এবং জেক্সানথিন শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট যা চোখের রেটিনাতে জমা হয়ে চোখকে ক্ষতিকারক সূর্যের আলো থেকে রক্ষা করে।
গবেষণায় দেখা গেছে যে পর্যাপ্ত পরিমাণে এই পুষ্টি গ্রহণ চোখে ছানি এবং ম্যাকুলার অবক্ষয়ের ঝুঁকিটিকে উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করতে পারে।
ডিমের কুসুমে লুটেইন এবং জেক্সানথিন উভয়ই প্রচুর পরিমাণে থাকে। এছাড়া ডিমে ভিটামিন-এ এর পরিমাণও বেশি।
লুটেইন এবং জেক্সানথিন ম্যাকুলার অবক্ষয় রোধ করতে সাহায্য করে যা বয়সের সাথে সম্পর্কিত অন্ধত্বের প্রধান কারণ।
কোলেস্টেরল বেশি, তবে রক্তের কোলেস্টেরলকে বৃদ্ধি করে না:
এটি সত্য যে ডিমের কোলেস্টেরল বেশি থাকে। আসলে, একটি ডিমের মধ্যে ২১২ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল থাকে, যা ৩০০ মিলিগ্রামের প্রতিদিনের চাহিদার অর্ধেকেরও বেশি।
এটি মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে ডায়েটে কোলেস্টেরল রক্তে কোলেস্টেরল বৃদ্ধি করে না।
আমরা যখন ডায়েটরি কোলেস্টেরল গ্রহণের পরিমাণ বৃদ্ধি করি তখন লিভার কেবল কোলেস্টেরল তৈরি করে না এমনকি কোলেস্টেরল বেরিয়ে দেয়। ডিম খেয়ে কোলেস্টেরল বৃদ্ধি বিভিন্ন জনের জন্য বিভিন্ন।
৭০% লোকের মধ্যে ডিম কোলেস্টেরল মোটেও বৃদ্ধি করে না এবং অন্যান্য ৩০% (“হাইপার রেসপন্সার” হিসাবে পরিচিত) এ ডিম হালকাভাবে এলডিএল (LDL) কোলেস্টেরল বাড়িয়ে তুলতে পারে।
কোলিন আছে:
কোলিন এমন একটি পুষ্টি যা বেশিরভাগ লোকেরা এটা সম্পর্কে জানে না। অবিশ্বাস্যরূপে গুরুত্বপূর্ণ কোলিন এবং প্রায়শই বি ভিটামিন অন্তর্ভুক্ত।
কোষের ঝিল্লি তৈরিতে ব্যবহৃত হয় কোলিন এবং মস্তিষ্কে সংকেত অণু তৈরির পাশাপাশি অন্যান্য ক্রিয়াকলাপে ভূমিকা রাখে। ডিম কোলিনের একটি দুর্দান্ত উৎস।
একটি ডিমের মধ্যে ১০০ মিলিগ্রামেরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ এই পুষ্টি উপাদানটি রয়েছে।
ওজন কমায়:
মুরগির ডিম উচ্চ-প্রোটিনযুক্ত খাদ্য। ডিমে থাকা প্রোটিন আমাদেরকে অনেক সময় ধরে পেট ভরিয়ে রাখতে সহায়তা করে।
এটি কোনও ব্যক্তির সামগ্রিক ক্যালোরি গ্রহণ এবং বার বার খাওয়ার প্রবণতা হ্রাস করতে পারে। ফলে ওজন কমে পাশাপাশি শক্তিশালী পেশী গঠনে সহায়তা করে।
অনেকের ডিমে এলার্জি থাকে। বিশেষ করে হাঁসের ডিমে। হাঁসের ডিম না মুরগির ডিম খাবেন এই নিয়ে অনেকে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগেন।
মুরগীর ডিমের তুলনায় হাঁসের ডিমে প্রোটিন এবং চর্বির মাত্রা সামান্য বেশি। অনেকে কাঁচা ডিম খাই কিন্তু কাঁচা ডিম খাওয়া উচিত নয়, এতে সালমোনেলা–জাতীয় ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
বেশি তেল দিয়ে ডিম ভাজি বা ডিম পোচ ক্যালরির পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়।
সতর্কতা
বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমরা অনেকে উচ্চ রক্তচাপে ভুগে থাকি। অনেকের আবার রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমান বেশি। সেক্ষেত্রে, ডিমের কুসুম না খাওয়াই ভালো।
তবে অবশ্যই আপনি আপনার ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাবেন।