কদবেল হজমশক্তি বাড়ায়, রক্ত পরিষ্কার ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

গোলাপের মতো সুমিষ্ট গন্ধ বলেন বা পাকা তেতুলের মতো গন্ধ, স্বাদ ও পুষ্টির জন্য এই ফলটি এখন সুপারফুড হিসাবে পরিগণিত।

কোনো কোনো অঞ্চলে বেশি এবং কোনো কোনো অঞ্চলে কম অর্থাৎ এটি অন্যান্য ফলের মতো সাধারণভাবে পাওয়া না। টক স্বাদযুক্ত কদবেল সব বয়সের মানুষের প্রিয় একটি ফল।

অল্প পরিমানে শুকনো মরিচের গুঁড়ো, বিটলবণ, চিনি, গুড় বা মধু দিয়ে বানানো কদবেল মাখা একবার খেলে আপনি এর স্বাদ ভুলতে পারবেন না।

একই উপকরণ দিয়ে আপনি কদবেলের সরবত বানিয়েও খেতে পারেন। গরমের দুপুরে এটি আপনাকে চাঙ্গা করে তুলবে।

Rutaceae পরিবারের এই ফলটির বৈজ্ঞানিক নাম Limonia acidissima. এটি ইংরেজিতে Wood apple, Elephant Apple, Monkey fruit, Organic limonia, Kaitha নামে পরিচিত।

বাংলায় Kathbel বা কদবেল হিন্দিতে Beli, Kaitha, Katbhel এবং সংস্কৃত ভাষায় এর নাম কপিত্থ।

উড অ্যাপল বা কদবেল ৪০০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ভারতে জন্মে। তবে থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা এবং এশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের অন্যান্য অঞ্চলে এটি পাওয়া যায়।

এর খোলস শক্ত ও খসখসে। গাছ ২০-৫০ ফুট উঁচু হয়। কাঠ শক্ত ও পর্ণমোচীি বা পাতা ঝরা বৃক্ষ। পাতা কামিনি ফুলের পাতার মত।

২-৫ ইঞ্চি ব্যাস বিশিষ্ট টেনিস বলের আকারের কৎবেল টক স্বাদের ফল। গাছে ছোট কাঁটা থাকে। আগস্ট-নভেম্বর মাসে ফল পাকে।

কাঠ শক্ত; ঘরবাড়ি তৈরিতে ব্যবহার করা যায়।। সাদা রঙের ফুল হয়। শাঁস শক্ত, ফলের অভ্যন্তরে বাদামি বর্ণের এবং ছোট ছোট সাদা বীজ থাকে।

ওজন কমানোর জন্য কদবেল কি কার্যকরী?

হ্যাঁ, ওজন কমানোর জন্য কদবেল ভালো কাজ করে। টক স্বাদের ফলটিতে ফাইবার যেমন রয়েছে তেমনি আমিষ এবং শর্করাও বিদ্যমান। তাই এটি ওজন কমাতে সাহায্য করে।

কদবেলের পুষ্টি উপাদান

মৌসুমী ফলের সময়ে বাজার এখন কদবেলে সয়লাব। রাস্তার দু’ধারে বিক্রি হচ্ছে কদবেল। 

তাছাড়া উষ্ণ গরমের এই সময়ে গরমের উত্তাপকে মোকাবেলা করতে কদবেলের শরবত শরীরে যেমন প্রশান্তি এনে দিবে, তেমনি কদবেলের রয়েছে নানা ঔষুধি ও পুষ্টিগুণ। যা আপনার শরীরকে রাখবে সুস্থ্য ও স্বাভাবিক।

কদবেলে crude ফাইবার, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, কপার, জিংক, ম্যাঙ্গানিজ, সোডিয়াম, পটাসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ এবং ভিটামিন সি রয়েছে।

কদবেলের(Limonia acidissima)-উপকারিতা বা স্বাস্থ্যসুবিধা:

কোষ্ঠকাঠিন্যতা ও দীর্ঘস্থায়ী আমাশয় দূর করতে:

কদবেলে আঁশ রয়েছে। এটি কোষ্টকাঠিন্য দূর করে। কদবেলে বিদ্যমান পুষ্টি উপাদান দীর্ঘস্থায়ী আমাশয় দূর করতে সাহায্য করে।

রক্ত পরিষ্কার করে:

কদবেল রক্ত পরিষ্কার করতে সহায়তা করে। উষ্ণ গরম জলের সাথে অল্প পরিমাণে উড আপেলের জুস রক্তকে বিশুদ্ধ করতে এবং টক্সিন অপসারণে সহায়তা করার জন্য পরিচিত। এটি লিভার এবং কিডনির বোঝা হ্রাস করে।

হজমশক্তি বৃদ্ধি করে:

কদবেল আয়ুর্বেদিক অনুশীলনের একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ এবং এটি হজম সিস্টেমের সমস্যাগুলি মোকাবেলায় ব্যবহার করা হয়। কদবেলের সজ্জা ডায়রিয়া ও ডিসেন্ট্রির মহৌষধ হিসেবে কাজ করে

শক্তি বৃদ্ধি করে:

এনার্জি ড্রিংকের পরিবর্তে wood apple বা কদবেলের সরবত খান। চিনি বা মিশ্রির সঙ্গে কদবেল পাউডার বা কদবেলের সজ্জা মিশিয়ে খেলে তৎক্ষণাৎ শরীরের শক্তি বৃদ্ধি পায়।

এছাড়া এটি শারীরিক ক্রিয়াকলাপ ও বিপাকক্রিয়ার উন্নতি ঘটায়। এই ফলে প্রোটিন থাকায় পেশী মেরামতে সহায়তা করে।

রক্তসল্পতা দূর করে:

এর পুষ্টি উপাদান শরীরের রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখে। কদবেল বুকের ধড়ফড় এবং রক্তের নিুচাপ রোধেও সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

শরীরের রক্তস্বল্পতাও দূর করে কদবেল।কদবেলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ভিটামিন, লৌহ, পেকটিন প্রভৃতি।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে:

ভিটামিন “সি” যা শক্তিশালী প্রাকৃতিক অ্যান্টি অক্সিডেন্ট হিসেবে শরীরের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করে থাকে।

উড আপেল বা কদবেল ভিটামিন “সি” এর ভাল উৎস হওয়ায় এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করতে সহায়তা করতে পারে।

এটি সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহায়তা করে। ফলের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন “সি” স্কার্ভি উপসাগরীয় স্থানে রাখতে পারে।

মায়েদের জন্য উপকারী:

কদবেল মহিলাদের হরমোনের অভাব সংক্রান্ত সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে। এ ছাড়াও স্তন ও জরায়ু ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।

কদবেলের পুষ্টি উপাদান উদ্দীপক ও মূত্রবর্ধক হিসেবেও কাজ করে।

গলায় ঘা বা ক্ষত হলে, ঘনঘন হেঁচকি উঠলে কদবেল খেলে দ্রুত সেরে যায়। কদবেলের উপাদান ট্যানিন অন্ত্রের কৃমিসহ অন্যান্য জীবাণু ধ্বংস করে থাকে।

ত্বকের স্বাভাবিক রঙ ঠিক রাখা এবং ত্বকের বুড়িয়ে যাওয়া দূর করার জন্য কদবেলের গুরুত্ব অপরিসীম। ব্রণ ও মেছতায় কাঁচা কদবেলের রস মুখে মাখলে বেশ উপকার পাওয়া যায়।

সতর্কতাঃ

যা কিছু খাবেন পরিমাণমতো খাবেন। আপনার শরীরের অবস্থা বুঝে খাবেন। অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো নয়।

আপনি যদি কোনো জটিল রোগে আক্রান্ত হন বা নিয়মিত কোনো মেডিকেল কোর্স-এর ভেতর দিয়ে যান তাহলে খাওয়ার আগে অবশ্যই আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাবেন।

সূত্রঃ www.deccanherald.com, healthbenefitstimes.com