“মুসুর ডাল” রক্তসল্পতা দূর করে এবং হার্টের জন্য ভালো।
মাছ মাংস খেতে খেতে ক্লান্ত, আর খেতে ভালো লাগছে না? পাতলা মুসুরের ডাল (dal) আর তার সাথে আলু ভর্তা বা আলু ভাজি কি যে জম্পেশ একটা খাবার শুনেই খেতে ইচ্ছা করে। অনেকে বলবেন আমার মনের কথা বলে দিয়েছেন।
আমরা সাধারণত সকাল বেলা খুবই হালকা কিছু খেয়ে থাকি। কারণ রান্না করার খুব একটা সময় পাওয়া যায়না। স্কুল বা অফিসের তাড়া থাকে, তাই আমরা খুব সহজে খুবই স্বাস্থ্যকর প্রোটিনে ভরপুর দ্রুত মুসুরের ডাল রান্না করতে পারি।
দুপুরে খাবার আইটেম নিয়ে চিন্তা করছেন? মুসুর ডাল ভিজিয়ে বেটে নিন তারপর একেএকে পেঁয়াজ কুচি, কাঁচা মরিচ কুচি, স্বাদ মতো লবণ, সামান্য হলুদ, চালের গুড়ি বা ময়দা পরিমাণ মতো স্বাদ বৃদ্ধি করার জন্য কিছু ছোট চিংড়ি বেটে দিতে পারেন। তারপর বড়া ভেজে ঝোল রান্না করে ফেলুন বা শুধু বড়াও ভাতের সাথে খেতে পারেন।
বিকালে চায়ের সাথে বিস্কিট বা টোস্টের পরিবর্তে খেতে পারেন মুসুর ডালের বড়া বা কোপ্তা। চাল-ডাল মিলিত খিচুড়ি সকলেরই প্রিয়। এছাড়া মুসুরের ডাল দিয়ে তৈরি ডাল পুরি নাম শুনলেই জিভে পানি চলে আসবে।
শীতকাল মানেই পিঠা খাওয়ার ধুম। অনেকে আছে মিষ্টি ছাড়া পিঠা খোঁজেন, তারা মুসুরের ডাল দিয়ে কুলি পিঠা বা পাটিসাপ্টা তৈরি করে খেতে পারেন। এটা খেতে খুবই সুস্বাদু। ডালটক খাবেন সেটাও আবার মুসুরের ডাল ছাড়া স্বাদ পাবেন না।
মুসুরের ডাল দুই ধরণের ১. খোসা সহ ২. খোসা ছাড়া কমলা রঙের। যারা নিরামিষ খাবার খান তারা মুসুরের ডাল দিয়ে আমিষের চাহিদা পূরণ করতে পারেন।
মুসুর ডালের পুষ্টি উপাদান
উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে মসুর ডাল ২ নম্বরে (সয়াবিন ১ নাম্বারে)। ব্রাউন রাইসের মতো আস্ত শস্যের সাথে মিলিত হলে মাংসের মতো একই মানের প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করতে পারে। নিচে মুসুর ডালের কিছু গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান দেওয়া হলো:
- ক্যালরি: ২৩০
- কার্বহাইড্রেট: ৩৯.৯ গ্রাম
- প্রোটিন: ১৭.৯ গ্রাম
- ফাইবার: ১৫.৬ গ্রাম
- নিয়াসিন(Niacin): ১০% (RDI)
- ভিটামিন B6: ১৮% (RDI)
- ফলেট: ৯০% (RDI)
- প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড: ১৩% (RDI)
- আয়রন: ৩৭% (RDI)
- ম্যাগনেশিয়াম: ১৮% (RDI)
- ফসফরাস: ৩৬% (RDI)
- পটাসিয়াম: ২১% (RDI)
- জিঙ্ক: ১৭% (RDI)
- কপার: ২৫% (RDI)
- ম্যাঙ্গানিজ: ৪৯% (RDI)
মুসুর ডালের অসাধারণ স্বাস্থ্য উপকারিতা
বাঙালির রান্নাঘরের অন্যতম সুপরিচিত একটি খাদ্য উপাদান হলো মসুর ডাল (lentils) প্রচুর পরিমাণে ফাইবারে পূর্ন যা নিয়মিত অন্ত্রের গতিবিধি এবং অন্ত্রে স্বাস্থ্যকর ব্যাকটিরিয়া বৃদ্ধি করে।
এছাড়া এতে ফাইটোকেমিক্যালস নামে প্রচুর উপকারী উদ্ভিদ যৌগ রয়েছে, যার মধ্যে অনেকগুলি দীর্ঘস্থায়ী রোগ যেমন- হার্টের রোগ এবং টাইপ 2 ডায়াবেটিস থেকে রক্ষা করতে পারে।
নিচে এর আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য উপকারীতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
হার্টের জন্য দুর্দান্ত:
মুসুরের ডালের স্বাস্থ্য উপকারীতার কথা বলতে গেলে প্রথমেই আসবে হার্টের কথা। মুসুর ডাল হার্টের সুস্থ্য রাখে কারণ এটি বেশ কয়েকটি হার্টের ঝুঁকি কমাতে পারে।
টাইপ-2 ডায়াবেটিস আছে এমন ৪৮ জন এবং স্থূল লোকদের মধ্যে ৮-সপ্তাহের এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, প্রতিদিন ৬০ গ্রাম মসুর ডাল খেলে “ভাল” কোলেস্টেরলের (HDL) মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং “খারাপ” কোলেস্টেরলের (LDL) এবং ট্রিগ্লিসারাইডস এর মাত্রা হ্রাস পেয়েছে।
উচ্চ স্তরের হোমোসিস্টাইন হার্টের রোগের জন্য আরেকটি ঝুঁকির কারণ। মসুর ডাল ফোলেটের একটি দুর্দান্ত উৎস। ফোলেট আমাদের দেহে অতিরিক্ত হোমোসিস্টাইন জমে যাওয়া রোধ করতে সহায়তা করতে পারে।
ক্যান্সারের কোষের বৃদ্ধি বন্ধ করতে পারে:
মুসুর ডালে প্রচুর পরিমাণে পলিফেনল থাকে। পলিফেনল একধরনের শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। মুসুর ডালে থাকা পলিফেনল ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি বন্ধ করতে পারে।
এছাড়া রক্তে শর্করার মাত্রা ঠিক রাখতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
রক্তস্বল্পতা দূর করে:
এক কাপ মুসুর ডালে ৩৭% আয়রন থাকে যা আমাদের প্রতি দিনের প্রয়োজনের এক তৃতীয়াংশ পূরণ করতে পারে। প্রচুর আয়রন থাকাই এটা রক্ত সল্পতা দূর করতে সাহায্য করে।
ত্বকের যত্নে:
মুসুরের ডাল বেটে মুখে লাগালে মুখের পিম্পল ও ব্রণ দূর হওয়ার পাশাপাশি ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়।
শক্তি বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে:
খুবই পুষ্টিকর এবং প্রোটিনের একটি দুর্দান্ত উৎস মসুর ডাল। যা শক্তি বা এনার্জি বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। এক কাপ রান্না করা মসুর ডাল থেকে ৪০ গ্রাম পর্যন্ত কার্বহাইড্রেট।
ডায়াবেটিস ও কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধ করে:
মুসুরের ডালে থাকা ফাইবার পেট ভরিয়ে রাখে। ফলে ক্ষুধা কম লাগে এবং ওজন ঠিক থাকে। এটি রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায় ডায়াবেটিস এবং কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।
এছাড়া ফাইবার মলের পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়ে কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে।
গর্ভবতী মায়েদের জন্য উপকারী:
মুসুরের ডালে প্রচুর পটাশিয়াম, ফোলেট এবং আয়রন রয়েছে। ফোলেট এবং আয়রন গর্ভবতী মায়েদের জন্য এই দুটি উপাদান বেশ প্রয়োজনীয়।
ফোলেট গর্ভের শিশুর বিকাশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এবং আয়রন ক্লান্তি দূরে রাখতে সহায়তা করে।
পটাসিয়াম লবণের খারাপ প্রভাবের বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং রক্তচাপকে হ্রাস করে।
সতর্কতা
এত উপকারী দিক থাকার শর্তেও একটি খারাপ দিক রয়েছে মুসুর ডালে। অতিরিক্ত মুসুরের ডাল খেলে গ্যাস হতে পারে। আর যাদের গ্যাসের সমস্যা আছে তারা একটু বুঝে শুনে পরিমাণ মত খাবেন।