কোষ্ঠকাঠিন্যতায় ভুগছেন? জেনে নিন যে খাবারগুলি কোষ্ঠকাঠিন্যতার জন্য দায়ী।

সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়া আমাদের প্রতিদিনের কাজ।

আর এটা সহজ ও সুখকর না হয়ে যদি হয় কষ্টকর ও ব্যথা এবং রক্তপাতযুক্ত তাহলে জীবন হয়ে ওঠে দুর্বিসহ।

অনিয়মিত জীবনযাপন, অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস, অনিদ্রা, কায়িক শ্রমের অভাব ইত্যাদির কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য এখন ভয়াবহ আকার ধারণ করছে।

বয়স যা-ই হোক না কেন, কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগছেন বেশিরভাগ মানুষ। অনেকেই আছে এ সমস্যার কথা মুখফুটে বলতে সংকোচ বোধ করে।

কোষ্ঠকাঠিন্যের ফলে খাওয়া-দাওয়ার পরিমাণ বা ইচ্ছার ক্ষেত্রেও প্রভাব পড়ে। পেট ভরে কিছু খাওয়ার ক্ষেত্রে একটা ভয় যেন সারাক্ষণ তাড়া করে বেড়ায়।

১০০ জন প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে প্রায় ২৭ জনই কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় পড়েন। গর্ভবতী মহিলাদেরও এই সমস্যা দেখা যায়।

কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা অপরিকল্পিত ডায়েট, অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি বংশানুক্রমিকও হতে পারে।

সময়মতো কোষ্ঠকাঠিন্যে যথাযথ ব্যবস্থা বা সতর্কতা অবলম্বন না-করলে তা পাইলস, কোলন ক্যান্সারের সম্ভাবনা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। তাই আমাদের সতর্ক হতে হবে।

ডাক্তারদের মতে কোষ্ঠকাঠিন্যের অন্যতম কারণ হলো ফাইবারযুক্ত খাবার এবং শাকসবজি কম খাওয়া, পানি কম খাওয়া, দুশ্চিন্তায় ভোগা।

এছাড়া, যারা অতিরিক্ত চা বা কফি পান করেন তাদের কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার সম্ভাবনা বেশী। একই সাথে চর্বি জাতীয় ও আমিষ জাতীয় খাবার বেশি খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার আশঙ্কা থাকতে পারে।

এমন কিছু কাবার আছে যেগুলো কোষ্ঠকাঠিন্যতা বাড়িয়ে দেয়। নিচে এমন কিছু খাবারের নাম দেওয়া হলো-

দুধ

কিছু লোকের মধ্যে দুধ বা দুগ্ধজাত খাবার কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণ হয়। দুধ বা দুগ্ধজাত খাবার কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা বিশেষত শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।

কারণ গরুর দুধে প্রোটিনগুলি খুবই সক্রিয়।

২৬ বছরের ধরে করা গবেষণাতে দেখা গেছে যে, বাচ্চারা যখন গরুর দুধ খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে তখন তাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা কমে গিয়েছিল।

সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘস্থায়ী কোষ্ঠকাঠিন্যযুক্ত ১-১২ বছর বয়সী শিশুরা কিছু সময়ের জন্য গরুর দুধ পান করে।

তারপরে পরবর্তী সময়ের জন্য গরুর দুধের পরিবর্তে সয়া দুধ প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল।

লাল মাংস

রেড মিট (খাসির মাংস বা যে সব মাংসে চর্বির পরিমাণ বেশি থাকে)। এই জাতীয় খাবার অন্ত্রে বহুক্ষণ থাকে, হজম হতে সময় লাগে।

এই জাতীয় মাংস কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা অনেকটাই বাড়িয়ে দেয়।

অ্যালকোহল

অ্যালকোহল কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণ হিসাবে উল্লেখ করা হয়।

কারণ যদি আপনি প্রচুর পরিমাণে অ্যালকোহল পান করেন তবে প্রস্রাবের মাধ্যমে নষ্ট হওয়া পানির পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়, পানিশূন্যতা সৃষ্টি করে।

শুধু অ্যালকোহল নয় যেকোন নেশা জাতীয় দ্রব কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণ।

প্রক্রিয়াজাত শস্য

প্রসেসড শস্য যেমন সাদা রুটি, সাদা ভাত এবং সাদা পাস্তা এসব খাবারে ফাইবার কম থাকে। কম ফাইবারযুক্ত খাবার কোষ্ঠকাঠিন্য এর জন্য দায়ী।

তাই যাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা আছে তারা ধীরে ধীরে প্রক্রিয়াজাত শস্য গ্রহণের পরিমাণ কমিয়ে লাল আটার রুটি, লাল চাল বেছে নিন।

ভাজা বা দ্রুত খাবার

ভাজা খাবারের ঘন ঘন খাওয়ার ফলেও কোষ্ঠকাঠিন্যের ঝুঁকি বাড়তে পারে।

কারণ এই খাবারগুলিতে চর্বি বেশি এবং ফাইবার কম থাকে, যা হজমশক্তিকে ধীরে করে দেয়।

চিপস, কুকিজ, চকোলেট এবং আইসক্রিমের মতো ফাস্টফুড ডায়েটে ফাইবার গ্রহণের পরিমাণ কমিয়ে দেয়।

এছাড়া ভাজা এবং দ্রুত খাবারগুলিতে প্রচুর পরিমাণে লবণ থাকে, যা মলের পানির পরিমাণ হ্রাস করে, মল শুকিয়ে যায় এবং শক্ত করে তোলে।

কাঁচা কলা

খুবই কমন একটি কথা কাঁচা কলা মল শক্ত করে তোলে। কাঁচকলা আমাদের শরীরের জন্য উপকারী হলেও যাঁদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা রয়েছে, তাঁরা কাঁচকলা খেলে ফলাফল হবে একেবারে উল্টো।

কারণ কাঁচা কলাতে প্রচুর স্টার্চ রয়েছে যা শরীরের পক্ষে হজম সহজ নয়। তবে পাকা কলায় যথেষ্ট পরিমাণ ফাইবার আছে।

তাই কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় পাকা কলা খাওয়া যেতে পারে।

ক্যাফিন

কলার মতো ক্যাফিনও কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা সৃষ্টি করে।

যদি কোনও ব্যক্তি পানি কম খেয়ে থাকে তবে কফি, কালো চা এবং চকোলেটে থাকা ক্যাফিন কোষ্ঠকাঠিন্যতা আরও খারাপ করতে পারে।

সব থেকে বড় কথা হলো কোষ্ঠকাঠিন্যের অন্যতম সমস্যা পানি কম খাওয়া। প্রতিদিন আমাদের অন্ত্রের গতিবিধির জন্য অন্তত ৬-৮ গ্লাস পানি পান প্রয়োজনীয়।

যদি আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য হয়ে থাকে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান না করে থাকেন তবে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন বা অন্যান্য তরল খাবার গ্রহণ করুন।

এতে করে অন্ত্রের গতিবিধি ঠিক থাকার মাধ্যমে কোষ্ঠকাঠিন্যতা দূর হবে।

রেফারেন্স: