ইসুবগুলের ভুষি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, ওজন কমায় ও পাইলস প্রতিরোধে কার্যকরী।
পাকস্থলীর সমস্যার ঘরোয়া চিকিৎসা ও প্রতিকারের নাম হলো ইসবগুলের ভুষি (Psyllium)। এটি ৭০% দ্রবণীয় ফাইবার এবং ৩০% অ-দ্রবণীয় ফাইবারে পূর্ণ।
যা আমাদের পাচনতন্ত্র থেকে বিষাক্ত পদার্থগুলি বের করে হজম প্রক্রিয়া ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
এই আশ্চর্য উদ্ভিদকে আয়ুর্বেদে ঔষধ হিসাবে দৃঢ়ভাবে বলা হয়েছে কারণ এটি একটি প্রাকৃতিক শীতলকারক এবং মূত্রবর্ধক।
এটি ইস্পাগুলা (Ispaghula), ইসাবগল, অশ্বকর্না (Ashwakarna), সিসিলিয়াম (Psyllium), ফ্লিয়া বীজ (Flea seed) এবং বালি প্লানটাইন (Sand Plantain) ইত্যাদি নামেও পরিচিত।
ইসবগুলের ভুষি হল প্ল্যান্টাগো ওভাটা (Plantago ovata) উদ্ভিদের বীজ থেকে তৈরি। গবেষণা দেখায় যে ইসবগুলের ভুষি গ্রহণ হৃৎপিণ্ড এবং অগ্ন্যাশয় সহ মানব দেহের অনেক অংশের জন্য উপকারী।
এটি উচ্চ কোলেস্টেরল, ট্রাইগ্লিসারাইড এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে।
এছাড়া ইসবগুলের ভুষি ওজন কমাতে সহায়তা করতে এবং হালকা ডায়রিয়ার পাশাপাশি কোষ্ঠকাঠিন্যতা থেকে মুক্তি দিতে পারে।
ইসবগুলের ভুষির উপকারীতা
ওজন কমানোর জন্য ইসবগুলের খাওয়ার সেরা সময় হলো সকালে খালি পেটে ও রাতে শোবার আগে। নিচে ইসবগুলের ভুষির স্বাস্থ্যে উপকারীতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো –
পাইলস প্রতিরোধে:
প্রাকৃতিক ভাবে দ্রবণীয় ও অদ্রবণীয় ফাইবারে ভরপুর ইসবগুলের ভুষি। এটা পায়ুপথের ফাটল এবং পাইলসের মত বেদনাদায়ক সমস্যায় ভুগছেন এমন লোকেদের জন্য উপকারী।
এটা শুধু পেট পরিষ্কার করতেই সাহায্য করে না মলকে নরম করতে সাহায্য করে। অন্ত্রের পানিকে শোষণ করার মাধ্যমে এবং ব্যাথা ছাড়া তা দেহ থেকে বের হতেও সাহায্য করে।
কোলেস্টেরল কমায়:
ইসবগুলের ভুষি পিত্ত অ্যাসিডের সংশ্লেষণ বাড়ায় এবং খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) হ্রাস করে এবং উল্লেখযোগ্যভাবে ভালো কোলেস্টেরল (HDL) বৃদ্ধি করে।
এটি খাদ্য থেকে কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইডগুলির শোষণকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং হার্টের রোগের ঝুঁকি হ্রাস করে।
কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি দেয়:
ইসবগুলের ভুষি মলের পরিমাণ বাড়াতে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়তা করে। ইসবগুলের ভুষি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে একটি ভাল প্রতিকার যা যুগ যুগ ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
ইসবগুলের ভুষিতে উপস্থিত অ-দ্রবণীয় ফাইবার মলকে নরম করে, ফলে অন্ত্রের গতিবেগ উন্নত হয়।
এক গ্লাস উষ্ণ দুধে ২ চামচ ইসবগুলের ভুষি মিশিয়ে নিয়মিত কয়েক সপ্তাহের ধরে প্রতি রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে এটি পান করুন।
হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখে:
গবেষণায় দেখা গেছে যে, দ্রবণীয় ফাইবার কোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক রাখতে সহায়তা করতে পারে। কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ সকলের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ তবে এটি ৫০ বছরের বেশি বয়সীদের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ।
একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, কমপক্ষে ছয় সপ্তাহে প্রতিদিন ইসবগুলের ভুষি খাওয়ার ফলে কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস পেয়েছিল।
ইসবগুলের ভুষি রক্তচাপ কমিয়ে, লিপিডের স্তর উন্নত করতে এবং হার্টের পেশী শক্তিশালী করতে পারে।
ওজন কমায়:
স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা আমাদের সবার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিশেষত যাদের ডায়াবেটিসের মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগ আছে।
ইসবগুলের ভুষি হার্ট এবং রক্তে শর্করার মাত্রা ভালো রাখার পাশাপাশি এটি ওজন কমাতে সহায়তা করতে পারে।
ফাইবারে ভরপুর ইসবগুলের ভুষি ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করে এবং ওজন হ্রাস করতে সহায়তা করতে পারে।
ডায়াবেটিসে উপকারী:
ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তিদের ইনসুলিন এবং রক্তে শর্করার (গ্লুকোজ) মাত্রা ঠিক রাখার পাশাপাশি তাদের ডায়েট সম্পর্কে সচেতন থাকতে হয়।
কিছু গবেষণা পরামর্শ দিয়েছে যে ইসবগুলের ভুষির মতো ফাইবার একটি স্বাস্থ্যকর গ্লাইসেমিক ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে।
ডায়রিয়ার নিরাময়ে সহায়তা করতে পারে:
গবেষণায় দেখা গেছে যে, ইসবগুলের ভুষি ডায়রিয়া উপশম করতে পারে। এটি মলের ঘনত্ব বাড়িয়ে তুলতে পারে এবং কোলনের মধ্য দিয়ে তার উত্তরণকে ধীর করতে পারে।
একটি পুরানো সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, ৩০ জন লোক ক্যান্সারের জন্য রেডিয়েশন থেরাপি করছিলেন তাদের মধ্যে ইসবগুলের ভুষি ডায়রিয়া উল্লেখযোগ্য পরিমাণ হ্রাস পেয়েছিল।
আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে যারা ল্যাকটুলোজ-প্ররোচিত ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ছিলেন তাদের প্রতিদিন তিনবার ইসবগুলের ভুষি খাওয়ানোর ডায়রিয়ার প্রবণতা কম ছিল।
ল্যাকটুলোজ এক ধরণের সুগার, মল নরম করতে সাহায্য করে।
ইসবগুলের ভুষি একটি শক্তিশালী প্রাকৃতিক রেচক এবং প্রাচীন কাল থেকেই কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়রিয়া, রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
এই আশ্চর্যজনক ফাইবার সমৃদ্ধ খাবারটির স্বাস্থ্য সুবিধা পেতে নিয়মিত আমাদের ডায়েটে যুক্ত করা যেতে পারে।
সতর্কতা
ইসবগুলের ভুষি অনেক সময় হজমের সমস্যা করতে পারে। যেমন- গ্যাস, পেটের অস্বস্তি এবং ডায়রিয়ার সৃষ্টি করতে পারে।
এছাড়া পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি ছাড়াই ইসবগুলের ভুষি গ্রহণ করা হয় তবে এটি অন্ত্রের বাধা সৃষ্টি করতে পারে অর্থাৎ কোষ্ঠকাঠিন্য এর কারণ হতে পারে।
এছাড়া আপনি যদি জটিল কোনো রোগে আক্রান্ত হন বা অন্য কোনো কারণে রেগুলার কোনো মেডিকেল কোর্স-এর মধ্য দিয়ে যান তাহলে অবশ্যই খাওয়ার আগে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।
সূত্র: হেলথলাইন, netmeds, times of india