LDL কোলেস্টেরল কমানোর উপায়।
অনিয়ন্ত্রিত কোলেস্টেরল স্বাস্থ্য ঝুঁকি অনেকটাই বাড়িয়ে তোলে। এর ফলে হার্টের রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাই কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ রাখা সকলেরই উচিত। ঔষুধ ছাড়া কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রায় বেশ কিছুটা পরিবর্তন আনতে হবে।
আমাদের দেহে খারাপ কোলেস্টেরল LDL বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে অনিয়ন্ত্রিত ও অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস একটি বড় কারণ। অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার ফলে রক্তে LDL কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যায় এবং HDL কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে যায়। রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে গেলে তা কমানো কঠিন হয়ে পড়ে।
কোলেস্টেরল রক্তচাপ ও ওজনের মাত্রা বাড়িয়ে তোলে। তাই যাঁদের LDL কোলেস্টেরলের সমস্যা আছে, তাঁদের সবসময় সচেতন থাকতে হবে।
LDL কোলেস্টেরলের মাত্রা কমানোর কয়েকটি উপায়
নিচে LDL কোলেস্টেরলের মাত্রা কমানোর কয়েকটি উপায় সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
পর্যাপ্ত পানি পান করা:
শরীরের আর্দ্রতা বজায় রাখতে ও LDL কোলেস্টেরল কমাতে পানি পান করা খুবই উপকারী। নিয়মিত পানি পান করার ফলে শরীর থেকে বিষাক্ত উপাদানের পাশাপাশি ক্ষতিকর LDL কোলেস্টেরল বের হয়। যা পক্ষান্তরে হৃদরোগের ঝুঁকি কমিয়ে দেয় ৫০-৬০ শতাংশ। তাই LDL কোলেস্টেরল কমাতে প্রতিদিন ২-৩ লিটার পানি পান করতে হবে।
ব্যায়াম:
ব্যায়াম হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য অন্যতম একটি প্রাকৃতিক ঔষধ। এটি শুধুমাত্র শারীরিক সুস্থ্যতা উন্নত করে না এবং স্থূলত্বের বিরুদ্ধে লড়াই করতেও সাহায্য করে। পাশাপাশি ব্যায়াম ক্ষতিকারক LDL কমায় এবং উপকারী HDL বৃদ্ধি করে।
১৩ টি গবেষণার পর্যালোচনার ভিত্তিতে, সপ্তাহে পাঁচ দিন ৩০ মিনিটের ব্যায়াম কোলেস্টেরল উন্নত করতে এবং হার্টের রোগের ঝুঁকি কমাতে যথেষ্ট। এছাড়া সাঁতার, দৌড়ান, সাইকেল চালানো, যোগাসন ইত্যাদি ব্যায়াম LDL কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে।
ওমেগা-3 ফ্যাটি এসিড জাতীয় খাদ্য:
ওমেগা-3 ফ্যাটি এসিড শরীরে LDL কোলেস্টেরল কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। গবেষণা দেখায় যে পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট “খারাপ” LDL কোলেস্টেরল কমায় এবং হার্টের রোগের ঝুঁকি কমায়।
একটি গবেষণায় ১১৫ জন প্রাপ্তবয়স্কদের খাদ্যে স্যাচুরেটেড ফ্যাটকে আট সপ্তাহের জন্য পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট দিয়ে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত, LDL কোলেস্টেরলের মাত্রা প্রায় ১০% হ্রাস পেয়েছে। ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড হল হার্ট-স্বাস্থ্যকর পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট।
ওজন কমানো:
ডায়েটিং অর্থাৎ খাদ্য গ্রহণ আপনার শরীরের কোলেস্টেরল শোষণ এবং উৎপাদনকে প্রভাবিত করে। ৯০ জন প্রাপ্তবয়স্কের দুই বছরের গবেষণায় দেখা গেছে যে, কোনও ডায়েটে ওজন হ্রাস খাদ্য থেকে কোলেস্টেরল শোষণকে বাড়িয়েছে এবং শরীরে নতুন কোলেস্টেরল তৈরিতে হ্রাস পেয়েছে। অন্য একটি ৩৫ জন তরুণীর উপর করা একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে ছয় মাসের মধ্যে ওজন কমানোর সময় শরীরে নতুন কোলেস্টেরল তৈরি হয়েছে।
গ্রিন টি:
গ্রিন টি তে থাকে পলিফেনল নামক উপকারী উপাদান। গ্রিন টি শরীরের LDL কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। গ্রিন টি আমাদের শরীরকে সতেজ ও উৎফুল্ল রাখতে সাহায্য করে। গ্রিন টি হৃদ্রোগ ও ক্যান্সারের ঝুঁকিও কমায়।
নিয়মিত গ্রিন টি পান করলে শরীরের মেদ কোষে বেশি শর্করা ঢুকতে পারে না। ফলে আমাদের শরীরের ওজন ও রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। তাই LDL কোলেস্টেরল কমাতে গ্রিন টি নিয়মিত খেতে হবে।
ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খান:
ফাইবার খারাপ (LDL) কোলেস্টেরল হ্রাস করতে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করতে সহায়তা করে। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে যে ডায়েটে উচ্চমাত্রায় ডায়েটরি ফাইবার অন্তর্ভুক্ত করা মানে হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখা।
৩০ জন প্রাপ্তবয়স্কদের একটি গবেষণায়, ১২ সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন ৩ গ্রাম দ্রবণীয় ফাইবার পরিপূরক গ্রহণ করার ফলে LDL ১৮% কমে যায়।
ডার্ক চকলেট:
LDL কোলেস্টেরল কমাতে ডার্ক চকলেট খুবই কার্যকরী। ডার্ক চকোলেটে রয়েছে পলিফেনল, থিওব্রোমিনের মতো উপাদান যা LDL কোলেস্টেরল কমিয়ে HDL কোলেস্টেরল এর মাত্রা বাড়িয়ে তোলে। ডার্ক চকলেট LDL কোলেস্টেরল কমানোর পাশাপাশি বিভিন্ন ধরণের সমস্যা দূর করে।
ধূমপান ত্যাগ করতে হবে:
নিয়মিত ধূমপান করার ফলে রক্তে HDL কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে যায়। ধুমপান “ভাল” কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস করে, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এবং হার্টের রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই LDL কোলেস্টেরল কমাতে অবশ্যই ধূমপান ত্যাগ করতে হবে।
ধনে বীজ:
আমাদের শরীরে LDL নামক এক ধরনের ক্ষতিকর কোলেস্টেরল থাকে যা শরীরের শিরা উপশিরার দেয়ালে জমে হৃৎপিণ্ডে রক্তচলাচলে সমস্যা করে। আর এ কারনে হার্ট অ্যাটাক হয়ে থাকে।
ধনে বীজে রয়েছে ফলিক অ্যাসিড, ভিটামিন ‘এ’, বিটা ক্যারোটিন ও ভিটামিন ‘সি’ যা শরীরের ক্ষতিকর LDL কোলেস্টেরল মাত্রা কমিয়ে আনে। দেহের মধ্যে থাকা ভালো HDL কোলেস্টেরল এর মাত্রা বাড়িয়ে দিয়ে শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।