সাবুদানার পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও অপকারিতা। সাবুদানা কিভাবে খেতে হয়?

ইংরেজিতে সাবুকে sagu, sabudana, sago pearl ইত্যাদি বলা হয়। ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান সাবুতে তুলনামূলক কম থাকে। হিন্দিতে “সাবুদানা”, বাংলায় “সাবু”, তামিল ভাষায় “জাভরিসি”, তেলেগুতে “সাগুবিয়াম” এবং মালায়ালামে “চাভরি”।

সাবুদানার পুষ্টিগুণ

নিচে সাবু দানার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান দেওয়া হলো:

  • ক্যালোরি: ৩৩২
  • প্রোটিন: ১ গ্রাম
  • ফ্যাট: ১ গ্রাম
  • কার্বস: ৮৩ গ্রাম
  • ফাইবার: ১ গ্রাম
  • জিঙ্ক: ১১% (RDI)

সাবুর অপকারিতা

এতে ব্রাউন রাইস, ওটস এবং আস্ত গমের তুলনায় প্রোটিন, ভিটামিন এবং খনিজের পরিমাণ কম। তারপরও সাবু আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী।

তবে আপনি যদি জটিল কোনো রোগে আক্রান্ত হন বা অন্য কোনো কারণে রেগুলার কোনো মেডিকেল কোর্স-এর মধ্য দিয়ে যান তাহলে অবশ্যই খাওয়ার আগে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।

যদিও সাবুদানা ওজন হ্রাসের পক্ষে ভাল না, এটি ওজন বাড়ানোর পক্ষে ভাল। এটি কার্বসে উচ্চ, তবুও ফ্যাট কম, এটি ওজন বাড়ানোর জন্য স্বাস্থ্যকর পছন্দ করে তোলে। এটি খেলে কোলেস্টেরলের কোনো ভয় নেই। হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।

ডায়াবেটিস রোগীর জন্য সাবুদানা কি নিরাপদ?

স্টার্চ বেশি থাকায় সাবুদানা অনেকটা সাদা ভাত বা আলুর মতোই, ডায়াবেটিস রোগীদের তাই নিয়মিত খাওয়া ঠিক নয়। ডায়াবেটিস রোগীদের সাবু খেতে হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী পরিমাণ মতো খেতে হবে।

সাবুদানা খেলে কি মোটা হয়?

হ্যাঁ সাবুদানা ওজন বাড়াতে ভালো। এতে কার্বোহাইড্রেট বেশি, তবে ফ্যাট কম, এটি ওজন বৃদ্ধির জন্য একটি স্বাস্থ্যকর খাবার। ওজন কমানোর জন্য আপনার কম ক্যালোরিযুক্ত খাবার খাওয়া উচিত। কিন্তু সাবুদানায় ক্যালোরি বেশি।

যেহেতু সাবুদানায় প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট থাকে, তাই বেশিক্ষণ পেট ভরিয়ে রাখার পরিবর্তে এর অতিরিক্ত চিনি আপনাকে ক্ষুধার্ত করে তুলতে পারে।

সাবু দানা খাওয়ার উপকারিতা

আয়ুর্বেদ অনুসারে, সাবু শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে। সাবুদানা প্রোটিনের একটি ভাল উৎস এবং পেশী বিকাশকে সহায়তা করে। এটি ফাইবার এবং ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ এবং এনার্জি বুস্টার হিসাবেও পরিচিত।

উচ্চ-ক্যালোরি, উচ্চ কার্বোহাইড্রেটের খাদ্য উৎস হিসাবে, সাবুদানা একটি দ্রুত শক্তি বাড়িয়ে দিতে পারে। এটি আপনাকে কম ক্লান্ত বোধ করতে সহায়তা করে এবং একটি ওয়ার্কআউটের মাধ্যমে চাপ দেওয়ার জন্য শক্তি সরবরাহ করে।

সাবুদানায় ডায়েটারি ফাইবারও রয়েছে। এটি হজম স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে অবদান রাখে এবং ফুলে যাওয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য এবং বদহজমের মতো সমস্যাগুলি উন্নত করতে সহায়তা করে।

গর্ভাবস্থায় সাবুদানা খেলে কি হয়?

সাবুদানার সবচেয়ে ভালো জিনিস হল এটি সহজে হজমযোগ্য এবং গর্ভাবস্থায় খাওয়ার জন্য এটি একটি উত্তম খাবার। গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মহিলাদের সাবুদানা এড়িয়ে চলা উচিত কারণ এতে প্রচুর পরিমাণে স্টার্চ এবং কার্বোহাইড্রেট রয়েছে।

গর্ভবতী মহিলাদের মধ্যে ক্লান্তি সাধারণ। সাবুদানা গর্ভবতী মহিলাদের মধ্যে ক্লান্তি দূর করে। এছাড়াও, সাবুদানার পুষ্টি উপাদান গর্ভের বেড়ে ওঠা শিশুর জন্যও উপকারী।

সাবুদানা কিভাবে খেতে হয়?

সাবুদানা বা সাগু শরীরের জন্য খুবই উপকারী। উপোস করলে সাগুর খিচুড়ি বা সাগু ভিজিয়ে নারকেল কোরা ও কলা দিয়ে মেখে খেয়ে থাকেন অনেকে। তবে প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় সাবুদানা রাখতে পারেন।

সাবুদানা বা সাগুর খিচুড়ি হোক বা সাগুর ক্ষীর, এই পদ আপনার উপোসকে শুধু সুস্বাদুই করে তোলে না, সঙ্গে রীতিমত স্বাস্থ্যকর বানায়।

সাবুর খিচুড়ি রেসিপি

দেড়শ গ্রাম সাবুর খিচুড়ি রান্না করতে যে সকল উপকরণ প্রয়জন তাহল- ১ কাপ মুগডাল, আলু, বিভিন্ন প্রকার সবজি, হাফ চামচ করে জিরা ও ধনে গুঁড়া, কাঁচা মরিচ, তেজ পাতা, আদা বাটা, পরিমাণ মতো লবণ।

সাবুর খিচুড়ি রান্না করার নিয়ম:
সাবু গুলো প্রথমে ভিজিয়ে রাখতে হবে। ডালগুলো ভালো করে ভেজে নিতে হবে। তারপর একটা কড়াইতে দুই চামচ সরিষার তেল নিন।

তেলটা গরম হলে এর মধ্যে ২ টা শুকনা মরিচ, সামান্য পাঁচ ফোঁড়ন, তেজপাতা, আদা বাটা দিয়ে ভেজে নিবো যতক্ষণ না আদা লালচে রঙ ধারন করে।

ভাজা হয়ে গেলে এর মধ্যে আলু, সবজি, হাফ চামচ হলুদ ও পরিমাণ মতো লবণ দিয়ে ভেজে নিন, ভাজা হয়ে গেলে এর মধ্যে সাবু গুলো দিয়ে মিশিয়ে নিয়ে পরিমান মতো পানি দিয়ে দিন, কাঁচা মরিচ, জিরে গুঁড়া ও ধোনে গুঁড়া সবগুলো দিয়ে চুলার জাল কমিয়ে রেখে দিতে হবে। তাহলেই তৈরি হয়ে যাবে সাবুর খিচুড়ি।

রেফারেন্স: