লাউশাক কোষ্টকাঠিন্য দূর করে, ওজন কমায় ও গর্ভবতী মায়েদের জন্য ভালো।

পরিবারের সবাইকে নিয়ে সুস্থ্য সবল থাকুন। অবশ্যই পরিবারের সবাইকে নিয়ে সুস্থ্য-সবল থাকবেন। তবে তার জন্য আপনাকে খাবারের তালিকায় রাখতে হবে লাউপাতা বা লাউশাক।

বাঙ্গালী জনপদে ঘরের চালে, উঠানের মাচায় বা খেতে খামারে অনেক জায়গাতেই লাউ গাছ বা লাউ শাক জন্মাতে দেখা যায়। লাউশাক আমাদের দেশের একটা জনপ্রিয় শাক।

লাউ শাক পছন্দ করেন না এমন বাঙ্গালী খুঁজে পাওয়া মুশকিল। দেখতে খুব সাদাসিধে হলেও এর উপকারিতা এবং পুষ্টিগুণ কিন্তু অনেক।

বাংলায় লাউশাক, ইংরেজিতে Bottle Gourd Leaves বা Bottle Gourd Spinach, হিন্দিতে লাউকি সবজি নামে পরিচিত।

লাউশাক বাটা বা ভর্তা, তরকারি কিংবা বিভিন্ন মাছের সাথে খাওয়ার খুব প্রচলন রয়েছে। এই শাকে রয়েছে ফলিক এসিড, আয়রন, ভিটামিন সি, পটাশিয়ামের মতো উপাদান। এতে রয়েছে প্রচুর ফাইবার।

লাউশাক সারা বছরই পাওয়া যায়, তবে শীতের মৌসুমে এর ফলন হয় বেশি। স্বাদের পাশাপাশি এই শাকের রয়েছে নানা স্বাস্থ্য উপকারিতা। এতে রয়েছে প্রচুর ফাইবার।

শাক-সবজি স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে সহায়ক শাক সবজি। তাইতো প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় অবশ্যই শাক সবজি রাখার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা।

সুস্বাস্থ্য এবং দীর্ঘায়ু পেতে আমাদের নিয়মিত লাউ শাক খাওয়া উচিত কারণ অবাক করা গুণ সম্পর্কে অনেকেরই অজানা।

এক কাপ কাঁচা লাউশাকের মধ্যে রয়েছে:

  • ৭ ক্যালোরি
  • ০.৮৬ গ্রাম  প্রোটিন।
  • ৩০ মিলিগ্রাম  ক্যালসিয়াম।
  • ০.৮১ গ্রাম আয়রন।
  • ২৪ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম।
  • পটাসিয়াম ১৬৭ মিলিগ্রাম।
  • ভিটামিন এ এর ২৮১৩ ইন্টিরিশনাল ইউনিট (আইইউ)
  • ফোলেট ৫৮ মাইক

লাউশাকের স্বাস্থ্য উপকারিতা:

নিচে লাউশাকের স্বাস্থ্য উপকারিতা আলোচনা করা হলো –

কোষ্টকাঠিন্য দূর করে:

লাউশাকের উপকারিতার কথা বলতে গেলে প্রথমে যে কথাটি বলতে হয় সেটি হলো এতে বিদ্যমান ফাইবার বা খাদ্যআঁশ। লাউশাকের পাতা, পাতার ডগা ও গাছের ডগা পুরো প্যাকেজটি ফাইবারে পরিপূর্ণ। যাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা রয়েছে তাদের দুপুরের পাতে এক বাটি লাউশাক সবথেকে সেরা খাবার। পাইলস প্রতিরোধেও এটি বেশ সহায়ক।

গর্ভবতী মায়েদের জন্য ভালো:

লাউ শাক ফলিক এসিড সমৃদ্ধ খাবার। গর্ভস্থ শিশুর স্পাইনাল কর্ড এবং মস্তিষ্কের বৃদ্ধির জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে ফলিক এসিড সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ প্রয়োজন। ফলিক এসিডের অভাবে গর্ভস্থ শিশুর স্পাইনাল কর্ডের বৃদ্ধি ব্যহত হয়, যার ফলে প্যারালাইসিস, মস্তিষ্ক বিকৃতি অথবা মৃত শিশু জন্মাতে পারে।

রক্তস্বল্পতা কমায় ও রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখে:

লাউশাকে রয়েছে আইরন যা রক্তের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ঠিক রাখতে সাহায্য করে। এটি লোহিত রক্ত কণিকার সংখ্যা বাড়ায়। লাউ শাক পটাসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার। পটাসিয়াম হৃদস্পন্দন ও রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখে।

ওজন কমায়:

লাউশাক ওজন কমাতে পারে এই বিষয়ে কি কোনো সন্দেহ আছে? যদি থাকে তাহলে শুনুন। লাউশাকে একদিকে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ফাইবার। এই শাক খেলে আপনার পেট ভরা থাকবে অনেকক্ষণ। বার বার খাওয়ার ইচ্ছা জাগবে না।

অন্যদিকে লাউ শাকে ক্যালরি কম থাকে এবং কোলেস্টেরল ও ফ্যাট মুক্ত। তাই ওজন কমানোর জন্য লাউ শাক একটি আদর্শ খাবার।

ভিটামিন সি:

এই শাকে রয়েছে উচ্চ মাত্রার ভিটামিন সি। বিভিন্ন সংক্রমণ ও ঠান্ডা প্রতিরোধে সাহায্য করে লাউ শাক।

চোখের জন্য ভালো:

লাউশাকে বিটা ক্যারোটিন সমৃদ্ধ যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়াও এটি লুটেইন এবং জেক্সানথিনের একটি দুর্দান্ত উৎস যা চোখকে ক্ষতিকারক আলো থেকে রক্ষা করে ও বয়সের সাথে সম্পর্কিত ম্যাকুলার অবক্ষয়ের ঝুঁকি হ্রাস করে।

ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম:

এই উপাদানগুলো হাড় শক্ত ও মজবুত করে। তাই শক্ত ও মজবুত হাড় পেতে খাদ্য তালিকায় লাউ শাক রাখুন।

এছাড়াও দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে লাউ শাক। নিয়মিত লাউ শাক খেলে মস্তিষ্ক ঠান্ডা থাকে। ঘুমের সমস্যায় যারা ভুগছেন তারা লাউ শাক খেলে উপকার পাবেন।

সতর্কতাঃ

যা কিছু খাবেন পরিমাণমতো খাবেন। আপনার শরীরের অবস্থা বুঝে খাবেন। অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো নয়। আপনি যদি কোনো জটিল রোগে আক্রান্ত হন বা নিয়মিত কোনো ডাক্তারের তত্বাবধানে থেকে কোনো ওষুধ গ্রহণ করলে খাওয়ার আগে অবশ্যই আপনার ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাবেন।