ওলকপি ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
সূর্য আর কুয়াশার লুকচুরি খেলা বলে দিচ্ছে শীত রাজত্ব করছে। বাজার জুড়ে শুধু শীতের সবজি ফুলকপি, বাঁধাকপি, মূলা, পালংশাক, নতুন আলু, ধনেপাতা এবং ওলকপি বা শালগম। যেন শীতকাল মানে পুরাটাই সবজির রাজত্ব। যারা ডায়েট করতে চান তাদের জন্য উত্তম সময় এটা। তাই এই সুযোগটা হাত ছাড়া করবেন না।
শীতকালের সুস্বাধু ও মজাদার একটি সবজি ওলকপি (Kohlrabi or German turnip)। রন্ধনপ্রিয় বাঙালিরা শালগম বা ওলকপি দিয়ে কত যে মজার মজার পদ রান্না করে থাকে তা বলে শেষ করা যাবে না।
এই শীতের সকালে গরম ভাতের সাথে শালগম বা ওলকপি দিয়ে ট্যাংরা মাছের ঝোল খেতে খুব মজা লাগে। শুধু ট্যাংরা মাছ নয়, রুই মাছ, পার্শে মাছ, ভেটকি মাছ নতুন আলু আর ওলকপি বা শালগম। একেবারে সোনায় সোহাগা। মাংসের সাথেও এটি ভালো যায়। ভাজি করে এবং ডালের সাথেও খেতে ভালো লাগে।
ওলকপিতে ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, লৌহ এবং ভিটামিন “বি”, ভিটামিন “সি”, ভিটামিন “কে” ও ভিটামিন “এ” রয়েছে। এছাড়াও ওলকপি থেকে ডায়েটারি ফাইবার এবং ফাইটোকেমিকেলস ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সহ বিভিন্ন ক্যারোটিন পাওয়া যায়। গ্রুকোসিনোলেটস ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট স্তনক্যান্সার ও প্রোস্টেট ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে।
ওলকপি ভিটামিন “সি” এর একটি দুর্দান্ত উৎস। এটি একটি শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট যা আমাদের শরীরকে ফ্রি-র্যাডিক্যালের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে এবং ক্ষত নিরাময়, কোলাজেন সংশ্লেষণ এবং আয়রন শোষণের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে। এটি পটাসিয়ামের একটি ভাল উৎস যা হার্টের যা হার্টের সাস্থের জন্য ভালো। ডায়েট্রি ফাইবার অন্ত্রের স্বাস্থ্য এবং রক্তে শর্করার নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
ওলকপির পুষ্টিগুণ
ওলকপির পুষ্টির এক দুর্দান্ত উৎস। নিচে ওলকপির কয়েকটি পুষ্টি উপাদান দেওয়া হলো –
- ক্যালোরি: ৩৬
- কার্বহাইড্রেট: ৪ গ্রাম
- ফাইবার: ৫ গ্রাম
- প্রোটিন: ২ গ্রাম
- ভিটামিন “সি”: ৯৩% Daily Value (DV)
- ভিটামিন “বি” 6: ১২% (DV)
- পটাসিয়াম: ১০% (DV)
- ম্যাগনেসিয়াম: ৬% (DV)
- ম্যাঙ্গানিজ: ৮% (DV)
- ফোলেট: ৫% (DV)
ওলকপির স্বাস্থ্য উপকারিতা:
নিচে ওলকপির স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
অন্ত্রের জন্য স্বাস্থ্যকর:
ওলকপিতে ফাইবার বেশি থাকে। ১ কাপ (১৩৫ গ্রাম) ওলকপিতে আমরা প্রতিদিনের চাহিদার প্রায় ১৭% ফাইবার পেতে পারি। ওলকপিতে দ্রবণীয় ফাইবার ও অদ্রবণীয় ফাইবার এই দুই ধরণের ফাইবারে পূর্ণ।
দ্রবণীয় ফাইবার রক্তের শর্করা এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক রাখতে সহায়তা করে। অদ্রবণীয় ফাইবার মলের পরিমাণ বৃদ্ধি করে নিয়মিত অন্ত্রের গতিবিধি ঠিক রাখে। তাই ওলকপি আমাদের অন্ত্রের জন্য খুবই স্বাস্থ্যকর।
হার্টের রোগের ঝুঁকি কমায়:
ওলকপি আমাদের হার্টের জন্য খুবই ভালো। ওলকপিতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের ধমনীতে প্লাক তৈরিতে বাঁধা দেয়। ওলকপিতে উপস্থিত পটাসিয়াম রক্তনালী প্রসারণ ঘটায় এবং শরীর-জুড়ে রক্ত প্রবাহ স্বাভাবিক রাখে।
ফলে দেহের সব অঙ্গ প্রত্যঙ্গের জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত হয় এবং স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমে। বেগুনি ওলকপিতে অ্যান্টোসায়ানিন বেশি থাকে, যা রক্তচাপ এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমায়।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে:
ওলকপি আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এই সবজিতে থাকা ভিটামিন “বি” 6 প্রোটিনের বিপাক, লোহিত রক্ত কোষের বিকাশ এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সহ অনেক কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
এছাড়া ওলকপি ভিটামিন “সি” এর একটি দুর্দান্ত উৎস, যা শ্বেত রক্ত কোষের কার্যকারিতা এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারে।
উচ্চ অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট রয়েছে:
ওলকপিতে উচ্চ পরিমাণের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যেমন ভিটামিন “সি”, অ্যান্থোসায়ানিনস, আইসোথিয়োকায়ানেটস এবং গ্লুকোসিনোলেটস। যা আমাদের শরীরের কোষকে ফ্রি র্যাডিক্যালের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে এবং নানান রোগের ঝুঁকি কমায়।
ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়:
যেহেতু ওলকপি উচ্চ মাত্রার অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট সমৃদ্ধ সবজি এজন্য এটি ডায়াবেটিস, বিপাকজনিত রোগ এবং অকাল মৃত্যুর ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
শীতকালীন সবজি ওলকপি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভালো। তাই শীতকালে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ওলকপি দিয়ে তৈরী খাবার রাখা স্বাস্থ্যকর। যেকোনো প্রসেসেড খাবারের পরিবর্তে প্রাকৃতিক খাবার খান এবং সুস্থ্য থাকুন।