ওটস ওজন কমাতে, কোষ্ঠকাঠিন্যতা দূর করতে ও হার্টের জন্য ভালো।

ওটস পৃথিবীর স্বাস্থ্যকর খাদ্য শস্যগুলির মধ্যে একটি। অনেকে সকালের নাস্তায় দুধের সাথে খেয়ে থাকেন। ওটস খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি এর উপকারিতাও অনেক।

ইংরেজিতে বলে oats এবং বৈজ্ঞানিক নাম: Avena sativa। প্রায় ৪০০০ বছর ধরে মানুষ ধান/গম পরিবারের অর্ন্তভুক্ত এ শস্যটি চাষ করে আসছে। ওটস স্বাস্থ্যকর খাবার হিসাবে সমজাতীয় খাদ্য তালিকার প্রায় উপরের দিকে অবস্থান করে।

ওটস অন্যান্য খাদ্যশস্যের তুলনায় পরিমানে বেশি ফাইবার থাকায় তুলনামূলক ধীরে হজম হয়। গবেষনা থেকে দেখা গিয়েছে যে এতে রয়েছে উচ্চ মাত্রায় দ্রবণীয় বেটা-গ্লুকান, যা ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমাতে উল্লেখযোগ্য ভুমিকা পালন করে। এছাড়া আরো কিছু কিছু উপকারী উপাদান আছে যেমন- আলফা-টোকোটেরিওনল এবং আলফা-টোকোফেরল যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসাবে কাজ করে।

ওটস শিশুদের জন্যও খুব ভালো খাবার হিসাবে বিবেচিত হয়। এগুলি আপনার শিশুর শক্তির উৎস হতে পারে। ফোলেট, ভিটামিন বি-৬, থায়ামিন এবং নিয়াসিনের মতো ভিটামিন শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয়।

ওটমিল কি?

Oatmeal এর বাংলা অর্থ ওটমিল যা ওটস নামেও পরিচিত। এটি গম পরিবারের একটি শস্য। এক সময় এটি পশু খাদ্য হিসেবে পরিচিত থাকলেও উচ্চ পুষ্টিগুন সমৃদ্ধ ও স্বাস্থ্যকর হওয়ার এটি স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের খাদ্য তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। এটি দিয়ে পুষ্টিকর বিস্কুট, কেক তৈরি করা হয়।

ওটসের পুষ্টি উপাদান

ওটস প্রচুর ফাইবার, বিটা-গ্লুকান সহ কার্বস এর ভাল উৎস। অন্যান্য শস্যের তুলনায় এতে প্রোটিন এবং ফ্যাট বেশি থাকে। নিচে ওটসের পুষ্টি উপাদান দেওয়া হলো –

  • প্রোটিন: ১৩ গ্রাম
  • ম্যাঙ্গানিজ: ১৯১% (RDI)
  • ফসফরাস: ৪১% (RDI)
  • ম্যাগনেসিয়াম: ৩৪% (RDI)
  • কপার: ২৪% (RDI)
  • আয়রন: ২০% (RDI)
  • জিন্ক: ২০% (RDI)
  • ফোলেট: ১১% (RDI)
  • ভিটামিন বি-1 (থায়ামিন): ৩৯% (RDI)
  • ভিটামিন বি-5 (পেন্টোথেনিক অ্যাসিড): ১০% (RDI)
  • ফাইবার: ৮ গ্রাম

ওটসের স্বাস্থ্য উপকারিতা

এতে অল্প পরিমাণে ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, ভিটামিন বি-6 (পাইরিডক্সিন) এবং ভিটামিন বি-3 (নিয়াসিন) এবং ৩০৩ ক্যালোরি রয়েছে। নিচে ওটসের স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো –

শৈশবে হাঁপানির ঝুঁকি হ্রাস করতে পারে:

বাচ্চাদের মধ্যে হাঁপানি সবচেয়ে সাধারণ দীর্ঘস্থায়ী রোগ। অনেক গবেষক বিশ্বাস করেন যে খাবারের প্রাথমিক প্রবর্তন শিশুর হাঁপানি এবং অন্যান্য অ্যালার্জিজনিত রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে। ওটস প্রকৃতপক্ষে হাঁপানির বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষামূলক হতে পারে। একটি সমীক্ষা রিপোর্ট করেছে যে ৬ মাস বয়সের আগে শিশুদের ওটস খাওয়ানো শৈশব হাঁপানির ঝুঁকি হ্রাস করতে পারে।

ব্রেস্ট ও কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধ করে:

ওটসে বিদ্যমান অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট ও ফাইটো নিউট্রিয়েন্ট ব্রেস্ট ও কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে পারে। একটি গবেষণায় জানা গেছে, যেসব নারী প্রতিদিন এক বাটি ওটস খান, তাঁদের ভেতর ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি ৪১% পর্যন্ত হ্রাস পায়। পাশাপাশি পাকস্থলী, ক্ষুদ্রান্ত্র ও বৃহদন্ত্রের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখে এটি। কারণ এসব অঙ্গ সুস্থ থাকলে কোলন ক্যান্সার হওয়ার কোনো আশঙ্কাই থাকে না।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়:

ওটস রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ওটসে রয়েছে শক্তিশালী ফাইবার। এ ফাইবার রোগ প্রতিরোধক কোষ সৃষ্টি করে ও শরীরকে আরো বেশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন করে তোলে।

কোষ্ঠকাঠিন্যতা দূর করে:

কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা সব বয়সের মানুষের মধ্যেই কম বেশি আছে। কোষ্ঠকাঠিন্যতা দূর করতে ওটস খুবই কার্যকরী। কারণ এতে প্রচুর ফাইবার রয়েছে। বৃদ্ধদের কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা একটু বেশি হয়ে থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে যে ফাইবার সমৃদ্ধ ওটস, বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়তা করতে পারে।

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ:

ওটস অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ এতে পলিফেনল অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বেশি থাকে। অ্যাভেন্যানথ্রামাইডস নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উল্লেখযোগ্য পরিমাণে থাকে। অ্যাভেনাথ্রামাইড নাইট্রিক অক্সাইডের উৎপাদন বাড়িয়ে রক্তচাপের মাত্রা হ্রাস করতে সহায়তা করে। ওটসে প্রচুর পরিমাণে ফেরিক এসিড পাওয়া যায় যা এক ধরণের অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট।

প্রচুর ফাইবার থাকে:

ওটসে প্রচুর পরিমাণে বিটা-গ্লুকান থাকে, যা এক ধরণের দ্রবণীয় ফাইবার। বিটা-গ্লুকান আংশিকভাবে পানিতে দ্রবীভূত হয় এবং অন্ত্রে একটি ঘন, জেল-জাতীয় পদার্থ তৈরি করে। এই ফাইবার LDL খারাপ কোলেস্টরল হ্রাস করে, রক্তে শর্করার পরিমাণ কমায়, অনেক সময় ধরে পেট ভরিয়ে রাখতে সাহায্য করে এবং অন্ত্রের ভালো ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি করে।

হার্টের জন্য ভালো:

হার্টের রোগ বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ। হার্টের রোগের প্রধান কারণ হল রক্তের কোলেস্টেরল। অনেক গবেষণায় দেখা গেছে যে, ওটসে বিটা-গ্লুকান ফাইবার রয়েছে যা LDL খারাপ কোলেস্টরল হ্রাস করে।

LDL খারাপ কোলেস্টেরল ধমনীতে প্রদাহ সৃষ্টি করে, টিস্যুগুলিকে ক্ষতি করে, হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। অন্য আর একটি সমীক্ষায় জানা গেছে যে, ওটসে থাকা অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট LDL প্রতিরোধ করতে ভিটামিন “সি” এর সাথে একসাথে কাজ করে।

রক্তে শর্করার নিয়ন্ত্রণ করে:

যাদের টাইপ-2 ডায়াবেটিস রয়েছে ওটস তাদের রক্তে শর্করার মাত্রা হ্রাস করতে সহায়তা করতে পারে। রক্তে শর্করার মাত্রা হ্রাস ইনসুলিন সংবেদনশীলতা উন্নত করতে পারে।

ওজন কমাতে সহায়তা করে:

ওটস যেমন সুস্বাদু খাবার তেমনি পেট ভরিয়ে রাখতেও সাহায্য করে। যারা ওজন কমাতে ও শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান তাদের জন্য প্রতিদিন সকালে এক বাটি ওটস নাশতা হিসেবে খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারে।

ওটস প্রোটিন ও ফাইবারে সমৃদ্ধ ফলে এটি দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে। কারণ এতে রয়েছে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন বিটা-গ্লুকান যা একটি ক্ষুদা নিয়ন্ত্রণকারী হরমোন।

ত্বকের যত্নে সহায়তা করতে পারে:

এটি কোনও কাকতালীয় ঘটনা নয় যে ওটস ত্বকের যত্ন নিতে সহায়তা করে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে গ্রাউন্ড ওটস “কোলয়েডাল ওটমিল” হিসাবে পরিচিত। FDA ২০০৩ সালে কোলয়েডাল ওটমিলকে ত্বক-প্রতিরক্ষামূলক পদার্থ হিসাবে অনুমোদন দিয়েছিল।

তবে বিভিন্ন ত্বকের সমস্যায় ওটসের ব্যবহারের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। ওটস ত্বকের মসৃনতা বৃদ্ধিতে, ত্বকের স্বাস্থ্য সুরক্ষা, রুক্ষতা দূরে করে এবং ত্বকের প্রদাহ দূর করতে সহায়তা করে। ওটমিল খাওয়ার সাথে সাথে আপনি এটি মুখে বা শরীরের ত্বকে লাগাতে পারেন। এটি ত্বককে আর্দ্রতা প্রদান করে ও ত্বককে করে তুলে নরম ও কোমল।

ওটস কিভাবে খাবেন?

সকালের নাস্তায় দুধ দিয়ে ওটস খেতে পারেন। এর মধ্যে পছন্দ মত ড্রাই ফ্রুট্স দিতে পারেন। কিংবা টক দই দিয়েও ওটস খেতে পারেন। অনেকে আবার দুপুরে ভাতের বদলে ওটস সেদ্ধ করে খেয়ে থাকে। এছাড়া ওটস দিয়ে খিচুরি বানিয়েও খাওয়া যেতে পারে।

সতর্কতা:

আপনি যদি জটিল কোনো রোগে আক্রান্ত হন বা অন্য কোনো কারণে রেগুলার কোনো মেডিকেল কোর্স-এর মধ্য দিয়ে যান তাহলে অবশ্যই খাওয়ার আগে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।

রেফারেন্স: