পুঁইশাক কোষ্টকাঠিন্য, পাইলস দূর করে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
রসালো পাতা এবং কান্ড, গাঢ় সবুজ ও বেগুনী রঙের দুটি জাত। খেতে খুবই সুস্বাদু এবং এখন সারাবছরই হাতের কাছেই পাওয়া যায়। হ্যা বন্ধুরা, আমি পুঁইশাক সম্পর্কে বলছি।
এটি ইংরেজিতে Malabar spinach, Indian spinach, Country spinach, Vine spinach, Malabar nightshade ইত্যাদি নামে পরিচিত। এর বোটানিক্যাল নাম Basella alba.
এই উদ্ভিদটি মালাবার পালং শাক, ভারতীয় পালং শাক, সিলোন পালং, পূর্ব-ভারতীয় পালং শাক, ভাইন পালং শাক, ক্লাইম্বিং পালং শাক, চিনা পালংশাক, ঘূর্ণিঝড় পালঙ্ক এবং আলুগবাটি নামেও পরিচিত। যদিও এটি সত্যিকারের পালং শাক নয়।
চিংড়ি মাছ আর কুমড়ো দিয়ে পুঁই শাকের চচ্চড়ি বা রুই বা ইলিশ মাছের মাথা/ডিম/তেল দিয়ে রান্না করা এক বাটি পুঁইশাক ও গরম ভাত। আর কিছু লাগবে না, মুহূর্তেই থালা পরিষ্কার এবং আপনি তৃপ্তির ঢেকুর তুলতে তুলতে খাওয়া শেষ করবেন। কেবল চচ্চড়ি নয় ভাজি কিংবা ডাল দিয়েও এ শাক রান্না করা হয়।
পুঁইশাক বনাম পালংশাক:
মালাবার পালং (বাসেল্লা আলবা) এবং স্পিনাচ (স্পিনাসিয়া ওলেরাসিয়া)-এই শাক দুটির একই জাতীয় পুষ্টি উপাদান এবং স্বাস্থ্যসুবিধা রয়েছে। তবে উভয়ই আলাদা পরিবারভুক্ত। মালাবার গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলের জন্য উপযুক্ত, তবে পালংশাকটি শীতপ্রধান অঞ্চলের জন্য।
পুঁইশাকের উপকারিতা:
পুঁই শাকে রয়েছে ভিটামিন বি, সি ও এ। এতে রয়েছে ক্যালসিয়াম, আয়রনের মতো উপাদানগুলো। এছাড়াও রয়েছে ফলিক অ্যাসিড, পটাশিয়াম, জিঙ্ক এই সব খনিজ পদার্থ। নিচে পুঁইশাকের উপকারিতা আলোচনা করা হলো –
ওজন কমানো:
পুঁইশাকে খুব কম ক্যালোরি এবং ফ্যাট থাকে (100 গ্রামে কেবল 19 ক্যালোরি সরবরাহ করে)। ক্যালোরি কম আঁশ বেশি তাই ওজন কমাতে সহায়তা করে।
হজমে সহায়তা:
এর ঘন, মাংসল পাতা হল স্টার্চবিহীন পলিস্যাকারাইড, মিউকিলজের একটি দুর্দান্ত উৎস। কান্ড এবং পাতাগুলিতে যে প্রাকৃতিক ফাইবার পাওয়া যায় তা আমাদের হজম সহজ করে। আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় আলসারেটিভ কোলাইটিস এবং রক্তপাতের পাইলসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য এটি ব্যবহৃত হয়।
ডায়াবেটিস কমানো:
পুঁইশাকে রয়েছে লিপোইক অ্যাসিড নামে এক ধরনের অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদান যা রক্তে শর্করার মাত্রা কমায় আর ইনসুলিনের ভারসাম্য বজায় রাখে। এছাড়া এটি ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ায় পেট ভরিয়ে রাখে, বার বার খাবার প্রবণতা কমায়। এটি শরীরের অতিরিক্ত কোলেস্টেরল বের করে দিতে সহায়তা করে।
দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে:
পুঁইশাক বা বাসেলা পাতা এবং কান্ড ভিটামিন ‘এ’ এর অবিশ্বাস্যভাবে সমৃদ্ধ উৎস। স্বাস্থ্যকর ত্বক বজায় রাখতে এবং ভাল দৃষ্টিশক্তির জন্য ভিটামিন-এ প্রয়োজনীয়।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়:
পুঁইশাকে পালং শাকের চেয়ে বেশি ভিটামিন “সি” রয়েছে। ভিটামিন-সি একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট, যা সংক্রামক এজেন্টগুলির বিরুদ্ধে মানব শরীরকে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে এবং ক্ষতিকারক র্যাডিক্যালসকে তাড়াতে সহায়তা করে।
রক্তাল্পতা প্রতিরোধ করে:
পালংশাকের মতো, পুঁইশাকও আয়রন একটি দুর্দান্ত উৎস। আয়রন হল লাল রক্তকণিকা উৎপাদনের জন্য মানব দেহের জন্য খুব প্রয়োজনীয় একটি উপাদান।
রক্তচাপ ঠিক রাখে:
পুঁইশাক পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং কপার জাতীয় খনিজগুলির ভালো উৎস। এগুলি রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। পটাশিয়াম দেহের সোডিয়ামের মাত্রা ঠিক রাখে। তাই নিয়মিত পুঁই শাক খেলে রক্তচাপ থাকে নিয়ন্ত্রণে।
সতর্কতাঃ
যা কিছু খাবেন পরিমাণমতো খাবেন। আপনার শরীরের অবস্থা বুঝে খাবেন। অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো নয়। আপনি যদি কোনো জটিল রোগে আক্রান্ত হন বা নিয়মিত কোনো মেডিকেল কোর্স-এর ভেতর দিয়ে যান তাহলে খাওয়ার আগে অবশ্যই আপনার ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাবেন।
সূত্রঃ
ccras.nic.in, blog.agrihomegh.com, www.healthbenefitstimes.com