গাজরের জুস চোখের জন্য ভালো, ক্যান্সার প্রতিরোধী ও তারুণ্য ধরে রাখে।
শীতকাল মানে সবজির সমারহ। শীতকালীন প্রতিটা সবজিই রূপে গুণে ভরপুর। বাঁধাকপি, ফুলকপি, ওলকপি, বীট, পেঁয়াজকলি ইত্যাদি।
তবে এসব সবজির মধ্যে রূপে ও গুণে গাজর একটু এগিয়ে। সুন্দরী, মায়াবিনী, রূপসী এক কথায় অনন্যা চেহারার অধিকারী গাজর।
কমলা রং স্বাদে মিষ্টি এবং খুবই পুষ্টিকর সবজি এটি। ছোট থেকে বড় সকলের খুবই পছন্দের এই সবজিটির সব থেকে বড় গুণ হলো দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে।
গাজর এতো জনপ্রিয় সবজি হওয়ার কারণ এর গাঢ় রং ও স্বাদ। গাজর সুপ, সালাদ, তরকারি, ভাজিতে ব্যবহার করা হয় আর একটা পদের কথা না বললেই নয় তাহলো গাজরের হালুয়া।
গাজর সুপ, সালাদ, তরকারি, ভাজিতে খাওয়ার পাশাপাশি গাজরের জুস (carrot juice) জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। প্রতিদিন সকালে এক গ্লাস গাজরের জুস আপনার স্বাস্থ্যের উন্নতি করবে কয়েকগুণ।
গাজরের জুসের পুষ্টিগুণ
গাজরের জুসে ক্যালরি এবং শর্করা কম থাকে। এতে বেশ কয়েকটি পুষ্টি উপাদান রয়েছে। নিচে গাজরের জুসের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদানগুলো দেওয়া হলো –
- ক্যালোরি: ৯৬
- প্রোটিন: ২ গ্রাম
- কার্বস: ২২ গ্রাম
- সুগার: ৯ গ্রাম
- ভিটামিন “এ”: ২৫৫% (DV)
- ভিটামিন “সি”: ২৩% (DV)
- পটাশিয়াম: ১৫% (DV)
গাজরের জুসের উপকারিতা
গাজরের রসের প্রধান ক্যারোটিনয়েড হল বিটা ক্যারোটিন যা গাজরের কমলা রঙের জন্য দায়ী।
আপনার শরীর বিটা ক্যারোটিনকে ভিটামিন “এ” তে রূপান্তর করে। আসুন জেনে নি গাজরের জুসের উপকারিতা সম্পর্কে –
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে:
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে চান তাহলে শীতে নিয়মিত গাজরের জুস খাওয়ার অভ্যাস করুন।
গাজরের রস রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলবে কারণ গাজরের রসে রয়েছে ভিটামিন “এ” এবং ভিটামিন “সি” উভয়ই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসাবে কাজ করে।
এই জুসটি ভিটামিন বি-6 সমৃদ্ধ। ১ কাপ গাজরের জুস ৩০% এরও বেশি ভিটামিন বি-6 সরবরাহ করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে শুধুমাত্র ভিটামিন বি-6 প্রয়োজনীয় নয়, তবে এর ঘাটতি দুর্বল প্রতিরোধ ক্ষমতা এর সাথেও জড়িত।
চোখের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো:
গাজরের জুসে উচ্চমাত্রায় পুষ্টি থাকে যা আপনার চোখের উপকার করে। ১ কাপ গাজরের জুসে ২৫০% এরও বেশি ভিটামিন “এ” থাকে ক্যারোটিনয়েড আকারে।
ভিটামিন “এ” চোখের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যাবশ্যক। বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে ফল এবং শাকসবজি থেকে গ্রহণ করা ভিটামিন “এ” অন্ধত্ব এবং বয়সের সাথে সম্পর্কিত চক্ষু রোগের ঝুঁকি হ্রাস করে।
এছাড়া লুটেইন এবং জেক্সানথিনের একটি দুর্দান্ত উৎস এই জুস, যা চোখকে ক্ষতিকারক আলো থেকে রক্ষা করে ও বয়সের সাথে সম্পর্কিত ম্যাকুলার অবক্ষয় এর ঝুঁকি হ্রাস করে।
ক্যান্সার থেকে রক্ষা করতে পারে:
খুবই সুস্বাদু ও পুষ্টিগুণে ভরপুর গাজরের জুস ক্যান্সার বিরধী প্রভাব রয়েছে। টেস্ট-টিউব সমীক্ষায় পরামর্শ দেওয়া হয় যে গাজরের জুস ক্যান্সার থেকে রক্ষা করতে পারে।
গাজরের জুস থেকে প্রাপ্ত পলিয়েটিসিলিনস, বিটা ক্যারোটিন এবং লুটিন হিউম্যান লিউকেমিয়া ক্ষতিকর কোষের বিরুদ্ধে কার্যকর।
একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে ২ ঘন্টার জন্য গাজরের জুস ক্যান্সারের কোষের বৃদ্ধির চক্রকে বন্ধ করে দেয়।
রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে:
ডায়বেটিস রোগীদের জন্য গাজরের জুস খুব কার্যকরী। গাজরের জুস রক্তে শর্করার মাত্রা হ্রাস করতে সহায়তা করে।
গবেষণায় দেখা গেছে যে, বেগুনি রঙের গাজরের জুস রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
গাজরের রসে গ্লাইসেমিক সূচক (জিআই) এর মান কম থাকে। আর কম গ্লাইসেমিক খাবার এবং পানীয় ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য ভালো।
ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো:
শীতে আপনার ত্বকে সুন্দর প্রানোজ্জ্বল রাখতে চান তাহলে আপনার ডায়েটে গাজরের জুস রাখতে ভুলবেন না। এক কাপ গাজরের জুসে ২০% এর বেশি ভিটামিন “সি” রয়েছে।
ভিটামিন “সি” ত্বকের কোলাজেন উৎপাদনের জন্য অতি প্রয়োজনীয় একটি ভিটামিন।
এছাড়া ভিটামিন “সি” ও বিটা ক্যারোটিন আপনার ত্বকে ফ্রি র্যাডিক্যাল এর ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট হিসাবে কাজ করে।
একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে ক্যারোটিনয়েড সমৃদ্ধ ডায়েট আপনার ত্বককে সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মির ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে পারে।
বয়স বা তারুণ্য ধরে রাখে:
যেকোন ফল ও সবজির জুস বয়সের চাপ দূর করে ত্বকের উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আন্তে সাহায্য করে। গাজরের জুস ২৩% ভিটামিন “সি” সরবরাহ করে।
ভিটামিন “সি” ত্বকের কোষগুলিকে পুনরুত্থিত করে যা মুখের চামড়া কুঁচকিয়ে যাওয়া রোধ করতে সহায়তা করে।
এটিতে ভিটামিন “এ”, পটাসিয়াম এবং ভিটামিন “সি” রয়েছে যা ত্বকের সতেজতা বজায় রাখে এবং ত্বককে আরও উজ্জ্বল করে। এটি ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা বজায় রাখে যাতে এটি কুঁচকে না যায়।
হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো:
গাজরের জুস হার্টের রোগের ঝুঁকির কারণগুলি হ্রাস করতে সহায়তা করে।
এই জুসটি পটাসিয়ামের একটি ভাল উৎস, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। উচ্চ রক্তচাপ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে উচ্চ পটাসিয়াম যুক্ত ডায়েট বেশি নজর দেওয়া হয়।
উচ্চ কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইড যুক্ত ১৭ জন প্রাপ্তবয়স্কদের গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন ২ কাপ গাজরের জুস রক্তের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৃদ্ধি পাই এবং রক্তের লিপিড হ্রাস করে।
ওজন কমায়:
গাজরের জুসে অন্যান্য সকল জুসের তুলনায় ক্যালরি কম থাকে। তাই সকালে নাস্তায় কিংবা বিকেলে এক গ্লাস গাজরের জুস পান করেই দেখুন না। ওজন কতো দ্রুত কমে আসে।
লিভারের জন্য ভালো:
গাজরের রসে থাকা ক্যারোটিনয়েড লিভারের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
বেশ কয়েকটি গবেষণা বলে যে ক্যারোটিনয়েড অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ফ্যাটি লিভার ডিজিজ থেকে সুরক্ষা দেয়।