পাকা তাল কোষ্টকাঠিন্য দূর করে, হাড় শক্ত করে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
কথায় বলে ভাদ্র মাসে পড়ে তালপাকা গরম। ভাদ্র মাস আর তাল একেবারে সমার্থক হয়ে উঠেছে। ভাদ্র মাসে বাজারে তাল দেখলেই মনে পড়ে মজাদার সব খাবারের নাম। তালের বড়া, তালের পিঠা, তালক্ষীর, তালের পায়েস কোনটা রেখে কোনটা বলি।
তালের ফল এবং বীজ দুটোই আমরা খেয়ে থাকি। কচি অবস্থায় তালের বীজও খাওয়া হয় যা তালশাঁস নামে পরিচিত।
এই তাল পাকলে এর ঘন নির্যাস দিয়ে অনেক মজাদার সব খাবার তৈরি হয়। তাল গাছের কাণ্ড থেকে রস সংগ্রহ হয় এবং তা থেকে গুড়, পাটালি, মিছরি, তাড়ি ইত্যাদি তৈরি হয়।
এর ইংরেজি নাম: Asian Palmyra Palm বা Palmyra fruit বা Palm fruit. বৈজ্ঞানিক নাম: Borassus flabellifer. এটি হচ্ছে এশিয়া ও আফ্রিকার গ্রীষ্মকালীন গাছ। এরা এরিকাসি পরিবারের বরাসুস গণের একটি সপুষ্পক উদ্ভিদ। এর আদিবাস মধ্য আফ্রিকা।
তালের পুষ্টি উপাদান:
পাকা তালের প্রতি ১০০ গ্রাম খাদ্যযোগ্য অংশে রয়েছে-
- খাদ্যশক্তি: ৮৭ কিলোক্যালরি,
- শর্করা: ১০.৯ গ্রাম,
- খাদ্য আঁশ: ১ গ্রাম,
- ক্যালসিয়াম: ২৭ মিলিগ্রাম,
- ফসফরাস: ৩০ মিলিগ্রাম,
- আয়রন: ১ মিলিগ্রাম,
- থায়ামিন: .০৪ মিলিগ্রাম,
- রিবোফ্লাভিন: .০২ মিলিগ্রাম,
- নিয়াসিন: .৩ মিলিগ্রাম,
পাকা তালের উপকারিতা:
তাল দেখতে খুব বেশি আকষণীয় না হলেও ফলটির উপরের খোসা ছাড়ালে বেরিয়ে আসে চোখ জুড়ানো কমলা রঙের অংশ। আর এটি থেকে প্রাপ্ত রস বা নির্যাস শুধু দেখতেই সুন্দর নয় পুষ্টিগুণেও অতুলনীয়। নিচে পাকা তালের উপকারিতা আলোচনা করা হলো –
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি:
তালের রস বা নির্যাসে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন-এ ও ভিটামিন-সি। এগুলি আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এই সময়ের সর্দি কাশি অর্থাৎ ফ্লু জনিত সমস্যা দূরীকরণে পাকা তাল উত্তম একটি খাদ্য। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট গুণসমৃদ্ধ হওয়ায় এটি ক্যান্সার প্রতিরোধে সক্ষম।
ভিটামিন-বি সমৃদ্ধ:
এটি ভিটামিন-বি এর ভালো উৎস। তাই ভিটামিন-বি এর অভাবজনিত রোগ প্রতিরোধে তাল ভূমিকা রাখে।
হাড় মজবুত করে:
পাকা তালের রস বা নির্যাস কিছু খনিজ উপাদানে পূর্ণ। এর মধ্যে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস রয়েছে। আমাদের হাড় ও দাঁতের ক্ষয়রোধ এবং মজবুত রাখতে খনিজ উপাদানে ভরপুর পাকা তালের জুড়ি মেলা ভার।
কোষ্টকাঠিন্য দূর করে:
এতে প্রচুর পরিমানে আঁশ রয়েছে। পাকা তালের পাল্প বা নির্যাস কোষ্টকাঠিন্য দূর করে। এটি অ্যাসিডিটি এবং পেটের আলসার প্রতিরোধেও সহায়তা করে।
যেভাবে খাওয়া যায়:
তালক্ষীর – পাকা তালের নির্যাস ও চিনি বা গুড় দিয়ে বানানো হয় তালক্ষীর। তালের নির্যাস জ্বাল দিয়ে ঘন গরম দুধে ফেলুন। তৈরি হয়ে গেলো তালক্ষীর। রুটি, লুচি ও পরোটা দিয়ে খেতে খুব ভালো লাগে। অনেকে নারকেল, চিনি দিয়ে তালের পাল্প ফুটিয়ে ঘন করে ক্ষীর তৈরি করেন। পরে দুধ ভাতের সাথে খেয়ে থাকেন।ঘন দুধ, তালক্ষীর, ও ভাত খুবই মজাদার একটি খাবার।
তালের বড়া বা পিঠা – তালের ঘন নির্যাস, চালের গুঁড়া, গুড় বা চিনি এবং নারিকেল একত্রে মিশিয়ে একটি আঁঠালো খামির প্রস্তুত করুন। এবার আপনার হাতে নিয়ে পছন্দমতো সাইজে গরম তেলে ভেজে উঠান। গ্রামগঞ্জে এই পিঠার ঐতিহ্য রয়েছে। তালের পিঠার সুন্দর একটি ফ্লেভার রয়েছে।
তালের জুস – তালের পাল্প, দুধ, চিনি দিয়ে জুস বানানো যায়। তাল যেহেতু ভাদ্র মাসে পাকে, সেই সময়ের গরমে এই জুস খাওয়ার প্রচলন রয়েছে।
তালের কেক – কেকের সব উপকরণের সঙ্গে তালের রস মিশিয়ে কেক বানানো হয়। এর রং খুবই আকর্ষণীয় হয়। তালের কেকের মধ্যে চিনি কম এবং ডিমের সাদা অংশ ব্যবহার করলে ডায়াবেটিস ও হৃদরোগীদের জন্য ভালো খাবার হতে পারে।
সতর্কতাঃ
যাঁরা উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন তাঁরা ডিমের কুসুম ও দুধ থাকে এমন তালের খাবার কম খাবেন। যাঁদের ডায়াবেটিস কিংবা কোলেস্টেরল বেশি তাঁরা তালের পিঠা কম খাবেন।
যা কিছু খাবেন পরিমাণমতো খাবেন। আপনার শরীরের অবস্থা বুঝে খাবেন। অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো নয়। আপনি যদি কোনো জটিল রোগে আক্রান্ত হন বা নিয়মিত কোনো মেডিকেল কোর্স-এর ভেতর দিয়ে যান তাহলে খাবার আগে অবশ্যই আপনার ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাবেন।