পাইলসের কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার।
পাইলস (hemorrhoid) বা অর্শ্বরোগ মলদ্বারে হয়। ৫০ বছর বয়সে প্রায় ৫০ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক লোকেরই হেমোরয়েডের লক্ষণ দেখা দেয়।
৫০ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্কদের এ রোগ হওয়ার পরও আমরা এটার সম্পর্কে খুব বেশি জানি না। যার হয় সেও এটা নিয়ে খুব বেশি কথা বলতে চাই না।
পাইলস বা অর্শ হলো মলদ্বারে এক ধরনের রোগ যেখানে রক্তনালীগুলো বড় হয়ে গিয়ে ভাসকুলার কুশন তৈরি করে। মলদ্বারের নিচের অংশ বা মলদ্বারের শিরাগুলো ফুলে যায়।
পাইলস কেন হয়?
পাইলস কেন হয়? এর কোনো সঠিক কারণ জানা না গেলেও নিম্নলিখিত বিষয়গুলি পাইলস হওয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে বলে মনে করা হয়।
- মলত্যাগের সময় অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ করা।
- কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া।
- শরীরের অতিরিক্ত ওজন থাকা।
- শাকসবজি ও অন্যান্য আঁশযুক্ত খাবার এবং পানি কম খাওয়া।
- নিয়মিত ব্যায়াম না করা।
- পায়ুপথে যৌনমিলনে অভ্যস্ততা।
- গর্ভাবস্থার শেষের দিকে অনেকের পাইলস রোগটি দেখা দেয়। শিশুর গ্রোথের সঙ্গে মলদ্বারে চাপ পড়লে গর্ভবতী মায়ের পাইলস হতে পারে।
- ফ্যাটি ও হাই প্লোটিনযুক্ত খাবার যেমন: মাংস, চিজ, মাখন, ফ্রাইড, চকোলেট, আইসক্রিম, কোমল পানীয় ইত্যাদি বেশি খেলে পাইলস হতে পারে।
- দীর্ঘ দিন ধরে ভার বহন করার ফলে পেটে চাপ পড়ে হতে পারে।
- পাইলসের পারিবারিক ইতিহাস।
- অতিরিক্ত মাত্রায় লেকজেটিভ (মল নরমকারক ঔষুধ) ব্যবহার করা।
পাইলসের লক্ষণসমূহ:
পাইলস মলদ্বারের অভ্যন্তরেও হতে পারে আবার বাইরেও হতে পারে। নিচে এর লক্ষণ গুলো দেওয়া হলো-
মলদ্বারের অভ্যন্তরে হলে নিচের লক্ষণগুলো দেখা যেতে পারেঃ
- পায়খানার সময় ব্যাথাহীন রক্তপাত হওয়া
- মলদ্বারের ফোলা বাইরে বের হয়ে আসতে পারে, নাও পারে।
- মলদ্বারে জ্বালাপোড়া, যন্ত্রণা বা চুলকানি হওয়া
- কোন কোন ক্ষেত্রে মলদ্বারে ব্যাথাও হতে পারে।
মলদ্বারের বাইরে হলে নিচের লক্ষণগুলো দেখা যেতে পারেঃ
- মলদ্বারের বাইরে ফুলে যাওয়া যা হাত দিয়ে স্পর্শ ও অনুভব করা যায়।
- কখনও কখনও রক্তপাত বা মলদ্বারে ব্যথাও হতে পারে।
পাইলসের চিকিৎসা:
পাইলসের চিকিৎসা সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো –
ব্যাথা কমাতে
ব্যাথা কমাতে প্রতিদিন কমপক্ষে ১০ মিনিটের জন্য গরম পানিতে স্থানটি ভিজিয়ে রাখুন। বাহ্যিক পাইলসের ব্যাথা উপশম করতে একটি বোতলে গরম পানি ভরে মলদ্বারে ধরতে পারেন।
ব্যাথা যদি অসহনীয় হয় তবে জ্বালা-পোড়া এবং চুলকানি কমানোর জন্য ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সাপোজিটরি, মলম বা ক্রিম ব্যবহার করুন।
পাইলসের ঘরোয়া প্রতিকার
প্রতিদিন গোসলের সময় উষ্ণ গরম পানি দিয়ে মলদ্বার ভালো করে পরিষ্কার করতে হবে।
তবে সাবান ব্যবহার করা যাবে না, কারণ সাবান পাইলসকে বাড়িয়ে তুলতে পারে। মলদ্বার যখন মুছবেন তখন শুকনো বা রুক্ষ টয়লেট পেপার এড়িয়ে চলুন।
মলদ্বারে বরফ বা ঠান্ডা কোনো কিছুর ব্যবহার হেমোরয়েড বা পাইলসের ফোলাভাব হ্রাস করতে সহায়তা করে।
ব্যাথা উপশমকারী যেমন অ্যাসিটামিনোফেন (acetaminophen), আইবুপ্রোফেন (ibuprofen) বা অ্যাসপিরিন (aspirin) ব্যাথা বা অস্বস্তি দূর করতে পারে। অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবহার করবেন।
পাইলসের চিকিৎসা পদ্ধতি
ঘরোয়া চিকিৎসা যদি কাজে না লাগে ভয় না পেয়ে তাহলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হন। ডাক্তার রাবার ব্যান্ড লিগেশন (rubber band ligation) এর পরামর্শ দিতে পারে।
এই পদ্ধতি হলো ডাক্তার পাইলসের চারপাশে একটি রাবার ব্যান্ড স্থাপন করে পাইলসের প্রচলন কেটে দেয়।
এটি পাইলসের সঞ্চালন হ্রাস করে, সঙ্কুচিত করতে বাধ্য করে। এই পদ্ধতিটি কেবল একজন মেডিকেল পেশাদার দ্বারা করা উচিত।
রাবার ব্যান্ড বন্ধন ছাড়াও ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ইঞ্জেকশন থেরাপি করতে পারেন। এর ফলে পাইলসের আকারে হ্রাস পায়।
পাইলসের প্রতিরোধ
পাইলস যাতে না হয় তার জন্য সচেতন হন। বেশি বেশি করে পানি খাওয়ার চেষ্টা করুন। পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করলে কষ্টকাঠিন্যতা দূর হবে।
অন্ত্রের গতিবিধি বা টয়লেট চলে আসার সাথে সাথেই বাথরুমে যেতে হবে চেপে রাখা যাবে না। এছাড়া কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়া রোধ করতে নিয়মিত ব্যয়াম করতে হবে।
পাইলসের ঝুঁকি এড়াতে ডায়েটরি ফাইবার আছে এমন খাবার পরিমাণে বেশি খেতে হবে। উচ্চ ডায়েটারি ফাইবারের উৎসের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হলো :
পাইলসকে ভয় না পেয়ে প্রাথমিক অবস্থাতে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
পাইলসের জন্য কী মলত্যাগের কু-অভ্যাস দায়ী?
অভ্যাস ভালো। কিন্তু কু-অভ্যাসগুলি আমাদের পরিহার করে চলার চেষ্টা করতে হবে। পাইলস রোগীদের তিনটি কু-অভ্যাস দেখা যায়।
- যেভাবেই হোক প্রতিদিন অন্তত একবার পায়খানা করতে হবেই। এটি না হলে তারা সারাদিন শারীরিক ও মানসিক ভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে।
- সকাল বেলা প্রথমবার যখন মলত্যাগের বেগ হয় তখন তাতে সাড়া দেন না।
- পায়খানা ক্লিয়ার হয়নি ভেবে টয়লেটে অনেকক্ষণ বসে থাকেন। তাদের বিশ্বাস, যদি সামান্য মল ভেতরে থেকে যায় তাহলে সারাদিন অস্বস্তিতে কাটাতে হবে।
পানি কম খাওয়া ও কোষ্ঠকাঠিন্যতা কী পাইলসের উপর প্রভাব ফেলে?
পাইলসে যে দুটি সবচেয়ে বেশি সমস্যা করে তাহলো কোষ্ঠকাঠিন্য ও ডায়রিয়া। বেশিরভাগ রোগীর খাদ্যাভ্যাসে ত্রুটি থাকে এবং মলদ্বার ভালোভাবে পরিষ্কার রাখেন না। ডায়রিয়া হয় এমন খাবার পরিহার করতে হবে। মলত্যাগের পর মলদ্বার ভালোভাবে পানি দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। আর যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা আছে তাদের বেশি করে আঁশ জাতীয় খাবার খেতে হবে।
কম পানি খাওয়া পাইলসের উপর প্রভাব ফেলে তাই আমাদের বেশি করে পানি খেতে হবে। একজন পূর্ণবয়স্ক লোকের প্রতিদিন কমপক্ষে ৬-৮ গ্লাস পানি পান করা উচিত। এছাড়াও আমরা ইসুপগুলের ভুসি খেতে পারি।