হাঁটু ব্যথার কারণ ও প্রাকৃতিক প্রতিকার।

হাঁটু ব্যথা যা সব বয়সের মানুষকে প্রভাবিত করে। বাত, গেঁটেবাত এবং সংক্রমণ এছাড়াও হাঁটু ব্যথা হতে পারে। হাঁটু আমাদের দেহের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ।

আমাদের পুরো শরীরের উপরিভাগের ওজন হাঁটু বহন করে। যদি মাথায় বা কাঁধে ওজন কিছু নেওয়া হয় ওই ওজনের ভরটা হাঁটুর ওপরেই পরে।

হাঁটুর ব্যথা বৃদ্ধ, যুবক বা শিশু যেকোন বয়সের মানুষেরই হয়। তবে বয়স্ক লোকেদের হাঁটুর ব্যথা একটু বেশি হয়।

হাঁটু ব্যথার কারণ

যেসব কারণে হাঁটুর ব্যথা হয়ে থাকে তা নিচে দেওয়া হলো –

আঘাত: সাধারণত আঘাত হাঁটু ব্যথার অন্যতম কারণ। এটা যে কোনো বয়েসেই ঘটতে পারে। হাঁটুতে আঘাত পেলে হাঁটু নিয়ন্ত্রণকারী মাংসপেশি, লিগামেন্টস, হাড় ও স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
গাউট: এটি এক ধরণের বাত রোগ। শরীরে ইউরিক অ্যাসিড বেশি থাকার কারণে গাউট হয় এবং হাঁটুতে ব্যথাও দেখা দেয়।
অস্বাভাবিক ভার বহন করার কারণে: অস্বাভাবিক ওজন বহন করার কারণে হাঁটুর উপর চাপ পড়ে। এতে হাঁটু ব্যথা হতে পারে।
রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস: দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট হয়ে গেলে এই সমস্যা দেখা দেয়। রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস কারণে হাঁটুর জয়েন্টে ব্যথা দেখা দিতে পারে।
অনিয়ন্ত্রিত ব্যয়াম: অতিরিক্ত হাঁটুর সাথে সম্পৃক্ত ব্যয়াম এর কারণে মাংসপেশি বা লিগামেন্টস ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে হাঁটু ব্যথা সৃষ্টি হতে পারে।
অস্টিওআর্থারাইটিস: অস্টিওআর্থারাইটিস কারণেও হাঁটুতে ব্যথা দেখা দেয়। পাশাপাশি হাঁটুতে ফোলাভাবও দেখা দেয়।
দূর্ঘটনা: যেকোন দূর্ঘটনা হলে হাঁটুসহ অন্যান্য স্থানেও ব্যথা পেয়ে থাকি। কোনো কোনো সময় এটা সাথে সাথে বোঝা না গেলেও পরে ব্যথা অনুভূত হয়।

হাঁটু ব্যথার প্রাকৃতিক প্রতিকার

নিচে হাঁটু ব্যথার প্রাকৃতিক প্রতিকার দেওয়া হলো –

গরম সেঁক ও বরফ:

যেকোন ব্যথা ফোলাতে সেঁক অত্যন্ত কার্যকরী। ব্যথা আক্রান্ত স্থানে গরম সেঁক এবং বরফ দেওয়া দুটোই উপকারী। দীর্ঘমেয়াদি হাঁটুর ব্যথা নিরাময়ে গরম সেঁক অত্যন্ত কার্যকর।

ব্যয়াম:

২০১৩ সালের একটি পর্যালোচনা দেখা গেছে যে থেরাপিউটিক ব্যায়াম যেমন হাঁটা, শক্তি প্রশিক্ষণ, সাইকেল চালানো, যোগব্যায়াম এবং সাঁতার কাটা ব্যথা কমাতে পারে। থেরাপিউটিক ব্যায়াম জয়েন্ট এবং হাঁটু শক্তিশালী করতে পারে।

ওজন এবং খাদ্য হ্রাস করুন:

যাদের অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা আছে তাদের হাঁটুতে ব্যথা হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। অতিরিক্ত ওজন বহন করতে জয়েন্টগুলিকে আরও বেশি কাজ করতে হয়। অতিরিক্ত ওজন সারা শরীরে ব্যথা বাড়ায় এবং হাঁটুতে ও ব্যথা হয়।

তাই আমাদের অতিরিক্ত ওজন কমাতে হবে। আর অতিরিক্ত ওজন কমানো মানে কম খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

অ্যারোমাথেরাপি:

প্রয়োজনীয় তেল ব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারে। ২০০৮ সালে প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যে, আদা তেল দিয়ে ম্যাসাজ করা অস্টিওআর্থারাইটিসের কারণে হাঁটুতে ব্যথা কমে গেছে।

আপেল সিডার ভিনেগার:

আপেল সিডার ভিনেগার এর প্রদাহবিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা আর্থ্রাইটিস এবং অন্যান্য ধরণের ব্যথা উপশম করতে সহায়তা করতে পারে। আর্থ্রাইটিস ফাউন্ডেশন আপেল সিডার ভিনেগার কে একটি “খাদ্য মিথ” হিসাবে উল্লেখ করে।

কর্পূরের তেল:

কর্পূরের প্রচুর অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। কর্পূর তেল প্রয়োগ করা নিরাময় প্রক্রিয়াটির গতি বাড়িয়ে তুলতে পারে এবং ফোলাভাব কমাতে পারে। ১ চামচ কর্পূরের গুঁড়া ও ১ কাপ গরম নারিকেল তেলের সাথে মিশাতে হবে। মিশ্রণটি ঠান্ডা হওয়ার পর দিনে ২ বার হাঁটুতে মালিশ করতে হবে। এতে করে হাঁটুর ব্যথা দূর হবে।

লাল মরিচ:

লাল মরিচে প্রচুর “ক্যাপসাইসিন” নামক উপাদান থাকে, যা প্রাকৃতিক ব্যথানাশক হিসেবে কাজ করে।

হলুদ:

হলুদ ক্ষমতাশালী এন্টিসেপ্টিক যৌগ হিসেবে পরিচিত। হলুদ ব্যথা নিরাময়ে সাহায্য করে কারণ এতে কারকিউমিন থাকে। ১ চা চামচ হলুদ গুঁড়ার সাথে পরিমাণমতো পানি মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন এবং আক্রান্ত হাঁটুতে লাগান। এতে করে হাঁটুর ব্যথা দূর হবে।

সরিষার তেল:

সরিষার তেল হালকা গরম করে ব্যথা হাঁটুতে মালিশ করলে ব্যথা কমে যায়। তেল গরম করার সময় সাথে কয়েক কোয়া রসুনও যোগ করতে পারেন। তারপর ব্যথা হাঁটুতে মালিশ করতে হবে।

আদা:

আদার তেল, নির্যাস কিংবা সরাসরি আদা খাওয়া হাঁটুর জন্য খুবই উপকারী। আদাতে “জিঞ্জার” নামক উপাদান রয়েছে যা প্রাকৃতিকভাবে ব্যথানাশক।