সন্তানকে সুশৃঙ্খলভাবে মানুষ করতে কি করবেন?

আমরা মনে করি সন্তানের ভবিষ্যত গড়তে শুধু পড়াশোনা করানোটাই জরুরি। কিন্তু এটা ঠিক নয়। সন্তানের ভবিষ্যত গড়তে পড়াশোনার পাশাপাশি তার সঠিক আচরণ গঠন করাও প্রয়োজন।

তাকে শৃঙ্খলা বোধ শেখানো দরকার। আমরা পিতামাতারা সন্তানের সাফল্য এবং বিকাশের আরেকটি উপাদানকে লালন করতে ভুলে যাই, সেটি হলো — একজন ভাল মানুষ হওয়া।

সন্তানকে সুশৃঙ্খলভাবে মানুষ করতে কি করবেন

শিশুর মধ্যে সঠিক শৃঙ্খলাবোধ গঠন করতে কিছু নিয়ম মেনে চলা জরুরি। চলুন জেনে নেওয়া যাক, সেগুলো কি কি-

সবসময় “না” বলবেন না:

বাচ্চাদের যে জিনিসটা যত বেশি করতে না বলা হয় তাদের সেই জিনিসের উপর তত বেশি কৌতূহল বৃদ্ধি পায়।

তাই বাচ্চাদের কোনো কাজের বিরোধিতা বকে ধমকে করলে বা সরাসরি না বললে ওদের জেদ আরও বেড়ে যায়। তাই সরাসরি “না” বলবেন না। ভালো করে বুঝিয়ে বলুন।

বাচ্চার মতো করে ভাবুন:

বাচ্চাকে বাচ্চার মতো করে বুঝাতে হবে। আমাদের উচিত বাচ্চাদের অনুভূতিকে গুরুত্ব দেওয়া। যেমন ধরুণ, বাচ্চা কিছুতেই ব্রাশ করতে চাচ্ছে না।

জোর করে কোলে নিয়ে মুখে ব্রাশ না ঘষিয়ে ওকে বলুন “ব্রাশ না করলে মুখের মধ্যে পোকারা বাসা বাঁধে এবং রোজ দুবেলা ব্রাশ করতে হয় এটা বুঝান।

এতে বাচ্চার ওপর জোর করে কিছু চাপানো হল না আবার ব্রাশের গুরুত্ব বুঝে গেলো।

বোঝানোর ভঙ্গিমা বদলাতে হবে:

মেরে, চেঁচিয়ে, রাগ করে কিন্তু বাচ্চা মানুষ করা যায় না। সাময়িক ভাবে হয়তো বাচ্চাকে বকাবকি করে কাজ হয়ে গেলে। কিন্তু ভবিষ্যতে এইসব অশান্তির ফলে মা বাবা এবং বাচ্চার মধ্যে সমস্যা হতে পারে।

তাই আদর করে বোঝান। বারবার বোঝান। একটি বাচ্চাকে সবথেকে ভালো জানে তার বাবা মা।

শিষ্টাচার শিক্ষা:

বাচ্চাকে সমস্ত মানবিক আদব কায়দা ছোট বেলা থেকে শেখান।

যেমনঃ স্যরি বা থ্যাংক ইউ বলা, অন্যকে সাহায্য করা, কাউকে ব্যাঙ্গ না করা, মিথ্যা না বলা, অন্যের ক্ষতি না করা, গালাগাল না দেওয়া।

দান করতে শেখান:

আপনার সন্তানকে দান করার শিক্ষা দিন। দান করে দাতা কর্ণ বা হাজী মুহাম্মদ মহসিন হতে হবে তা নয়।

বাড়ির পাশের মারাত্মক অসুস্থ্য কোনো রোগী, সাহায্য নিতে আসা ক্যান্সার আক্রান্ত কোনো রোগী। এতিমখানা, বৃদ্ধাশ্রম, গরিব অসহায় মানুষের কল্যানে কাজ করা সংগঠন-এমন বিভিন্ন ক্ষেত্রে দান করতে শেখান।

আর্থিকভাবে, শ্রম দিয়ে বা জিনিসপত্র দিয়ে যেভাবেই হোক দান বা সাহায্য করতে শেখান।

ভালো মানুষের সাথে সম্পর্ক:

কথাটা তো আমরা অনেকেই জানি-সৎসঙ্গে স্বর্গবাস। অসৎসঙ্গে সর্বনাশ। খারাপ ছেলেদের সাথে মিশে মাদকাসক্ত হয়ে গেলো।

বাজে ম্যাগাজিন, বাজে ছবি দেখে ব্যাভিচার মূলক কিছু করে বসলো। তাই খেয়াল রাখতে হবে, সন্তান কোথায় যাচ্ছে, কাদের সাথে মিশছে। তা না হলে সন্তান অচিরেই বিপদ ডেকে আনবে।

ছেলেমেয়েরা খারাপ আচরণে জড়িয়ে পড়ার গল্পগুলি প্রায়ই শিরোনাম হয়, সত্য সত্য যে অনেক বাচ্চা নিঃশব্দে তাদের জীবনের সাধারণ পথে ভাল কাজ করে।

উত্তেজনার পরিস্থিতি থেকে শিশুকে সরিয়ে আনুন:

বাচ্চা যদি কোনো কারণে প্রচণ্ড উত্তেজিত হয়ে যায়। চেষ্টা করুন সেই জায়গা বা পরিস্থিতি থেকে ওকে সরিয়ে আনতে।

মাঝে মাঝে একদম পাত্তা দেবেন না:

কখনও কখনও বাচ্চার অন্যায় আবদার গুলোকে এড়িয়ে যেতে শিখুন। বাচ্চা জেদ করুক, কাঁদুক, অন্যায় আবদার করুক। কিন্তু কখনই মেনে নেবেন না।

বাচ্চারা বেশিরভাগ মনোযোগ আকর্ষণ করতেই ইচ্ছে করে কাঁদে। সেরকম বুঝলে কাঁদতে দিন বাচ্চাকে।

বাচ্চা কাঁদলেই যদি ওর হাতের কাছে সব চলে আসে, তাহলে যে কোনো কিছুতে কান্নাই হবে ওর একমাত্র অস্ত্র।

প্রশংসা করুন:

আপনার সন্তান কোনো ছবি এঁকেছে হয়তো সেটা খুব ভালো হয় নি। তারপরও বলতে হবে খুব ভালো হয়েছে। আমাকে একটু শিখিয়ে দেবে? বাচ্চা এতে বাচ্চা খুব উৎসাহ পাবে।

আপনি তার কাছে শিখতে চাইলে সে হয়তো তার বাচ্চা মনের মাধুরী মিশিয়ে আরও সৃজনশীল হয়ে আপনাকে শেখাতে চেষ্টা করবে।

প্রয়োজনে শাসন করুন:

সবসময় আদরে বাঁদর করার কিন্তু কোনো প্রয়োজন নেই। দরকারে শাসন করবেন অবশ্যই।

বাচ্চা যাতে বুঝতে পারে যে, অন্যের ভাবনা বা অনুভূতিরও সম্মান করা প্রয়োজন। তবে শাসন মানে মারধর নয়।