সকালে খালি পেটে কিসমিস ভেজানো জল বা পানি খাওয়ার উপকারিতা। একরকম ম্যাজিক।

কুঁচকানো, জীর্ণশীর্ণ চেহারা। দেখে বিভ্রান্তিতে পড়তে পারেন, খেয়ে প্রতারিত হবো না তো? মোটেও না, কিসমিস হলো পুষ্টির ভান্ডার। কিসমিসের গুণকীর্তন আমরা অনেক শুনেছি বা জানি।

আজকে আমরা কিসমিস ভেজানো জলের গুণকীর্তন শুনবো ও সকালে খালি পেটে খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানবো।

রাতভর পানিতে ভিজিয়ে রাখলে কিসমিসে থাকা বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান সহজেই দ্রবণীয় হয়ে যায় যা আমাদের শরীর আরও সহজে নিতে বা শোষণ করতে পারে।

তাই সকালে খালি পেটে ভেজানো কিসমিসসহ পানি খেলে নিম্নোক্ত উপকারিতাগুলো আরও ভালো ভাবে পাওয়া যাবে।

কিসমিস বা কিশমিশ প্রকৃতির ক্যান্ডি হিসাবে সুপরিচিত এবং সকলের পছন্দের। কিসমিসের সবচেয়ে বড় সুবিধা হল এটি চিনির প্রাকৃতিক উৎস। 

প্রয়োজন অনুসারে এটি আপনার দেহকে অতি প্রয়োজনীয় শক্তি বাড়িয়ে তুলতে পারে।

শুকনো ফলের পরিবারের সদস্য কিসমিস ভারতীয় উপমহাদেশে সাধারণভাবে খির, পায়েস বা ফিরনি এবং পোলাও ও বিরিয়ানিতে ব্যবহৃত হয়। মিষ্টিজাত পণ্য, বেকারি পণ্য ইত্যাদিতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।

এগুলি আঙ্গুর শুকিয়ে প্রস্তুত করা হয় এবং আপনি এটি সোনালী, সবুজ, কালো, লাল ইত্যাদি বর্ণের দেখতে পাবেন।

Raisin water বা Soaked Raisin বা কিসমিস জল প্রাকৃতিক শর্করা পূর্ণ এবং দুর্দান্ত শক্তি বুস্টার হিসাবে কাজ করে।

এগুলি আয়রন, পটাসিয়াম এবং ক্যালসিয়ামের মতো পুষ্টিতেও সমৃদ্ধ। তাই শারীরিক ও মানসিক শক্তি অর্জনের জন্য অবশ্যই কিশমিশের উপর ভরসা রাখতে পারেন।

কিসমিস ভিজিয়ে সারারাত রাখুন। পরের দিন ভোরে কিসমিস ভেজানো জল বা পানিটা খান। এটি কাঁচা খাওয়ার বিপরীতে স্বাস্থ্যকর বিকল্প। কিসমিসের বাইরের ত্বকে উপস্থিত ভিটামিন এবং খনিজগুলি পানিতে দ্রবীভূত হয়।

এভাবে দেহের দ্বারা শোষিত হবে এমন পুষ্টির পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য এটি বিশেষ উপকারী। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সামগ্রীও বর্ধিত হয়। তাছাড়া এতে থাকা প্রাকৃতিক চিনি শরীরের কোনও ক্ষতি করে না।

কিসমিস ভেজানো জল বা পানির উপকারিতা বা স্বাস্থ্যসুবিধা:

প্রতিদিন কিসমিসের পানি খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য, অ্যাসিডিটি থেকে মুক্তি পাবেন ওষুধ ছাড়াই। এছাড়া কিসমিস হার্ট ভালো রাখে। নিয়ন্ত্রণে রাখে কোলেস্টেরল। কিসমিসে প্রচুর ভিটামিন এবং খনিজ আছে।

আছে প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যা সহজে রোগমুক্তির কারণ। আর আছে প্রচুর আয়রন, পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং ফাইবার।

রক্তচাপ কমায়:

অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ উচ্চ রক্তচাপের কারণ হিসাবে পরিচিত। তবে কিসমিসে থাকা পটাসিয়াম আমাদের দেহে লবণের পরিমাণকে ভারসাম্য রাখতে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে।

হজমে সহায়তা করে:

আমাদের সুস্থ্য থাকতে ভালো হজমশক্তি দরকার। কিশমিশে ফাইবারের পরিমাণ বেশি এবং জলে ভিজলে এগুলি প্রাকৃতিক রেচক হিসাবে কাজ করে।

সুতরাং, ভেজা কিশমিশ খাওয়া কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করতে সহায়তা করে এবং আপনার হজম প্রক্রিয়াটি দিনের পর দিন ধরে রাখে।

ওজন হ্রাস:

কিসমিস প্রাকৃতিক শর্করায় পূর্ণ এবং অল্প পরিমাণে খেলে আপনার মিষ্টি খাওয়ার আকাঙ্ক্ষা কমে যাবে। পরিমাণমতো খেলে আপনার কোনো ক্ষতি নেই।

এগুলি আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে এবং এগুলি আপনার ওজন হ্রাস করতে সহায়তা করে।

সংক্রমণের প্রবণতা হ্রাস করে:

ভিটামিন “বি” এবং ভিটামিন “সি” সমৃদ্ধ, কিসমিস আপনার প্রতিরোধ ক্ষমতা জোরদার করতে সহায়তা করে। এইভাবে শরীর সংক্রমণের জন্য কম সংবেদনশীল হয়ে ওঠে অর্থাৎ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

হাড়ের শক্তি বৃদ্ধি করে:

হাড় গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় বোরন কিসমিসে প্রচুর পরিমাণে উপস্থিত রয়েছে। কিশমিশে ক্যালসিয়ামও রয়েছে যা হাড়ের শক্তির জন্য প্রয়োজনীয়।

ভেজানো কিশমিশ খাওয়া এই পুষ্টিগুলির আরও ভাল শোষণে সহায়তা করে এবং এইভাবে, সামগ্রিকভাবে হাড়ের ঘনত্বকে উন্নত করে।

অ্যানিমিয়া প্রতিরোধ করে:

আমাদের দেহে লাল রক্তকণিকা গঠনের জন্য আয়রন সবচেয়ে প্রয়োজনীয় উপাদান। কিসমিসগুলিতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে এবং এগুলি শরীরে রক্ত সরবরাহ বাড়িয়ে তুলতে সহায়তা করে এবং এইভাবে রক্তাল্পতা প্রতিরোধ করে।

রক্তাল্পতা / রক্তশূন্যতা রোধঃ

প্রতি ১০০ গ্রামে ১.৮৮ মিলিগ্রাম আয়রন, ০.৩২ মিলিগ্রাম কপার। এগুলো শরীরে লোহিত রক্তকণিকা তৈরিতে প্রয়োজন।

এসিডিটি কমাতে সহায়তাঃ

আয়রন, কপার ছাড়াও কিসমিসে রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম ও পটাশিয়াম। এদের ক্ষারীয় ধর্মের জন্য এসিডিটি সমস্যায় বেশ কার্যকর।

হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়ঃ

সোডিয়ামের পরিমাণ কম, পটাশিয়ামের উপস্থিতি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ হওয়াতে নিয়মিত কিসমিস খেলে হৃদরোগ থেকে বেশ দূরে থাকা যায়। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।

ত্বকের ও চুলের সুরক্ষাঃ

কিসমিসে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন “সি”, সেলেনিয়াম, জিংক এর সম্মিলিত ক্রিয়া ত্বককে সুস্থ, সুন্দর রাখে।

হাড়ের সুরক্ষাঃ

ক্যালসিয়াম ও বোরন সমৃদ্ধ হওয়াতে দাঁত ও হাড় গঠনে কাজ করে।

সতর্কতাঃ

যা কিছু খাবেন পরিমাণমতো খাবেন। আপনার শরীরের অবস্থা বুঝে খাবেন। অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো নয়।

আপনি যদি কোনো জটিল রোগে আক্রান্ত হন বা নিয়মিত কোনো ডাক্তারের তত্বাবধানে থেকে কোনো ওষুধ গ্রহণ করলে খাওয়ার আগে অবশ্যই আপনার ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাবেন।

রেফারেন্স: