ভিটামিন বি 12 এর অভাবে কি কি সমস্যা হয়?
সুস্বাস্থ্যের জন্যে ভিটামিন বি 12 খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ভিটামিন। ভিটামিন বি 12 কে কোবালামিন (cobalamin) বলা হয়। প্রতিটা কোষের বিপাকীয় কাজের জন্য প্রয়োজন হয় এই ভিটামিন। এই ভিটামিন খাদ্যকে (শর্করাকে) জ্বালানিতে (গ্লুকোজ) রূপান্তরিত করে শক্তির জন্য।
ভিটামিন বি 12 আমাদের দেহে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে। উদাহরণস্বরূপ এটি আমাদের শরীরে ডিএনএ এবং লোহিত রক্তকণিকা তৈরিতে সহায়তা করে। আমাদের শরীর ভিটামিন বি 12 তৈরি করে না।
প্রতি মিনিটে আমাদের শরীরে লক্ষ লক্ষ লাল রক্ত কোষ তৈরি হচ্ছে। কিন্তু ভিটামিন বি 12 ছাড়া এই কোষ সঠিকভাবে সংখ্যা বৃদ্ধি করতে পারে না। ৪০-৬০ বছর বয়সী নারীদের মাঝে এই সমস্যাটি বেশী দেখা দেয়। একজন পূর্ণ বয়স্ক লোকের শরীরে প্রতিদিন ২.৪ মাইক্রোগ্রাম পরিমাণ ভিটামিন বি ১২ প্রয়োজন হয়।
ভিটামিন বি 12 বা বি 9 কে সাধারণত ফোলেট বলা হয়। ভিটামিন বি 12 এর অভাবে রক্তাল্পতা দেখা দেয়। ভিটামিন বি 12 প্রাকৃতিকভাবে মাংস, মাছ, হাঁস-মুরগি, ডিম এবং দুগ্ধ সহ প্রাণীজাতীয় খাবারে পাওয়া যায়।
আসুন এবার জেনে নেওয়া যাক, ভিটামিন বি 12 এর অভাবে আমাদের শরীরে কি কি সমস্যা দেখা দিতে পারে-
মুখের আলসার:
অনেক সময় ভিটামিন বি 12 এর অভাবে মুখের আলসার হয়। গবেষণায় দেখা গেছে যে, বি 12 এর অভাবজনিত কিছু লোক মুখের আলসার, জিহ্বায় পিন এবং সূঁচের অনুভূতি বা মুখের মধ্যে জ্বলন এবং চুলকানি অনুভব করেছে।
শ্বাসকষ্ট এবং মাথা ঘোরা:
ক্রমাগত মাথা ঘোরা ভিটামিন বি 12 এর অভাবে হতে পারে। আপনি যখনি আপনার বসা অবস্থান থেকে দ্রুত উঠে দাঁড়ান তখন আপনার মাথা ঘুরবে। এছাড়া সিঁড়ি দিয়ে ওপরের দিকে উঠবার সময়ও মাথা ঘুরতে পারে। এছাড়া বি 12 এর অভাবজনিত কারণে শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
বিস্মৃতি ও মেজাজ পরিবর্তন হয়:
বিস্মৃতি বা ক্রমাগত কিছু না কিছু ভুলে যাওয়া। এটিও ভিটামিন বি 12 এর ঘাটতির ইঙ্গিত করে। আজকাল সকলের মধ্যেই কম-বেশি এই সমস্যা রয়েছেই। বিশেষ করে এটি হয় বয়স্ক মানুষদের ক্ষেত্রে। তবে মাঝ বয়সি বা কম বয়সিরা এর থেকে বাদ যান না।
স্মৃতির লোপের এই সমস্যাকে ডাক্তাররা সাধারণত ডিমেনশিয়া বলেন। এই ডিমেনশিয়ার অন্যতম একটি কারণ হতে পারে ভিটামিন বি 12 এর অভাব। বি 12 এর অভাবে প্রায়শই মেজাজ পরিবর্তন হয়।
পেশির দুর্বলতা:
ভিটামিন বি 12 এর অভাবে মাংসপেশিতে পর্যাপ্ত পরিমান অক্সিজিনেশন হয় না। ফলে মাংস পেশি দুর্বল লাগে। বিশেষ করে যারা সব সময় ভারী কাজ করেন বা জিমে যান নিয়মিত তাদের জন্য প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ভিটামিন বি 12 রাখাটা আবশ্যক।
চেহারায় ফ্যাকাসে ভাব:
ভিটামিন বি 12 এর ঘাটতি হলে ত্বক এবং চোখের সাদা অংশে হালকা হলুদ রঙ ধারণ করে, এটি জন্ডিস নামে পরিচিত। এটি তখন ঘটে যখন বি 12 এর অভাবে আপনার দেহের লোহিত রক্তকণিকা উৎপাদন কমে যায়। যার ফলে লিভার থেকে অধিক পরিমান বিলিরুমিন বের হয়ে যেতে থাকে। ফলে চোখ মুখ ফ্যাকাসে হয়ে যায় এবং চোখে একটা হলদেটে ভাব আসে।
হাঁটা চলার পরিবর্তন:
স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি, হাঁটা ও চলার পরিবর্তন বি 12 এর অভাবের কারণ হতে পারে। এমনকি ভারসাম্য বা ব্যালেন্স কমে যেতে পারে। ৬০ বছরের বেশি বয়সের লোকেরা বি 12 এর অভাবের ঝুঁকিতে বেশি থাকে।
দুর্বলতা ও ক্লান্তি অনুভব করি:
দুর্বলতা এবং ক্লান্তি ভিটামিন বি 12 এর অভাবের সাধারণ লক্ষণ। এগুলি ঘটে কারণ আপনার শরীরে লোহিত রক্তকণিকা তৈরি করতে পর্যাপ্ত ভিটামিন বি 12 থাকে না। ফলে শরীরের কোষগুলিতে দক্ষতার সাথে অক্সিজেন পরিবহন করতে অক্ষম হয় এজন্য ক্লান্ত এবং দুর্বল বোধ করি।
রাতে পর্যাপ্ত পরিমান ঘুম হওয়া সত্ত্বেও সারাদিন ঘুম ঘুম ভাব থাকতে পারে। অল্প একটু কাজ করার পরই খুব ক্লান্ত লাগতে পারে বা কোনো কারণ ছাড়াই শরীর ক্লান্ত লাগতে পারে এই ভিটামিন বি 12 এর অভাবে।
সূঁচ এর মতো অনুভূতি:
দীর্ঘমেয়াদী বি 12 এর অভাবে স্নায়ু ক্ষতি হয়। ভিটামিন বি 12 বিপাকীয় পথগুলিতে ফ্যাটি পদার্থ মেলিন (myelin) উৎপাদন করে। মেলিন স্নায়ুগুলিকে সুরক্ষা ফর্ম হিসাবে ঘিরে রাখে। বি 12 ব্যতীত স্নায়ুতন্ত্র সঠিকভাবে কাজ করতে সক্ষম হয় না। ফলে হাত ও পায়ে কাঁটার মতো অনুভূতি হয়।
দৃষ্টিশক্তি হ্রাস:
অনেক সময় ধরে শরীরে ভিটামিন বি 12 এর অভাব থাকলে তার প্রভাব দৃষ্টি শক্তির ওপর পড়তে পারে। যেমন- আলোর সংবেদনশীলতা, ঝাপসা দেখা, দ্বিত দেখা, ছায়া দেখা এগুলো হতে পারে। তাছাড়া অনেক সময় ভিটামিন বি 12 এর অভাবে চোখের রেটিনা নষ্ট হয়ে চোখের দৃষ্টি একেবারে চলে যেতে পারে।
সুতরাং সময় থাকতেই সাবধান হওয়া উচিত। সমস্যা হলে ফেলে না রেখে উচিত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া। পাশাপাশি রোজের খাদ্য তালিকায় ভিটামিন বি ১২ সমৃদ্ধ রাখা।