বীট সবজিটি উচ্চ রক্তচাপ হ্রাস করে, ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।
বীট (beet) হলো একটি মিষ্টি মূলজাতীয় সবজি। বীট অত্যন্ত পুষ্টিকর একটি সবজি। বীট আইরনের চমৎকার উৎস, উচ্চ রক্তচাপ কমায় ও Dementia অর্থাৎ স্মৃতিভ্র্রশ বা বুদ্ধিবৈকল্য দূর করে। যদি প্রশ্ন করা হয় ভাই, আপনি কি বীট পছন্দ করেন? দ্বিধাবিভক্তি মতামত পাওয়া যাই।
১০০ জনের ৫০ জন যদি হ্যা বলে তো বাকি ৫০ জন না এর কাতারে। তবে বর্তমানে এই সবজিটি সুপার ফুড স্টাটাসে উঠেছে। গবেষণায় দেখা গেছে বীটরুটের রসের উপকারীতা অন্যান্য অনেক দামি খাবারের থেকে বেশি।
কি সুন্দর দেখতে? রঙ্গিন, রক্তলাল রুট বা মূল দিন দিন মানুষের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বীটরুট বা বীটতরকারি বাঙালিদের কাছে অতটা জনপ্রিয় না হলেও এর স্বাস্থ্যসুবিধার কথা চিন্তা করে অনেকেই এখন এই সবজিটিকে খাবারের মেন্যুতে অন্তর্ভুক্ত করেছেন।
এর উপকারীতার কথা জানলে আপনি আর এটাকে অবহেলা করবেন না। রান্না করে খাওয়ার থেকে আপনি যদি এটি ব্লেন্ডারে রস বা জুইস করে খেতে পারেন তাহলে অনেক বেশি উপকার পাবেন।
এই শীতের সকালে আলু, গাজর ও বীটের মিক্সড সবজি রুটি বা পরোটা দিয়ে খেতে খুবই ভালো লাগে। সবজি, চপ বা মাংসের সাথেও রান্না করে খেতে এটি খুবই ভালো লাগে। বাইরের দেশের লোকেরা এটিকে জুস করেই বেশি খেয়ে থাকেন।
বীট যেহেতু মিষ্টি সেহেতু পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচ, শুকনো মরিচ, গোটা সরিষা দিয়ে ভাজি করে খেতে খুব মজা লাগে। গাঁজরের হালুয়া আর কত খাবেন। গাজরের হালুয়া খেতে খেতে আমরা ক্লান্ত। বীটের হালুয়া খান। বীটের হালুয়াও খেতে খুবই সুস্বাদু।
Beta vulgaris(বিটা ওয়ালগারিস) হিসাবে বৈজ্ঞানিক ভাবে পরিচিত বীট একটি উদ্ভিজ্জ মূল যা শালগম বা রুতবাগাসের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
আজকাল বীট বার্গার, টমেটো পেস্ট, ওয়াইন, ক্যান্ডি এবং জ্যঁমের মতো বাণিজ্যিক খাবারগুলিতে রঙের প্রাকৃতিক বিকল্প হিসাবে এটি ব্যবহার করা হয়।
পুষ্টি উপাদান
বীটরুট প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণে ভরপুর। এটি ফাইবার, ফোলেট, ম্যাঙ্গানিজ, পটাসিয়াম, আয়রন এবং ভিটামিন “সি” এর দুর্দান্ত উৎস। এক কাপ সেদ্ধ বীটে ৬০ এর কম ক্যালোরি থাকে। নিচে বীটের আরও কয়েকটি পুষ্টিউপাদান দেওয়া হলো-
- ক্যালোরি: ৪৩
- পানি: ৮৮%
- প্রোটিন: ১.৫ গ্রাম
- কার্বহাইড্রেট: ৯.৬ গ্রাম
- চিনি: ৬.৮ গ্রাম
- ফাইবার: ২.৪ গ্রাম
- ফ্যাট: ০.২ গ্রাম
বীটের উপকারী দিকগুলো সম্পর্কে জেনে নেই:
প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে:
বিটে জিঙ্ক, ভিটামিন “সি” বেশি থাকে – প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য পরিচিত সমস্ত পুষ্টি উপাদান।
বীটে আয়রনও রয়েছে যা সারা শরীরে অক্সিজেন বহন করতে, কোষগুলিকে শক্তিশালী রাখতে এবং প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে প্রয়োজনীয়।
বীট হার্টের জন্য ভালো:
গাজর, পালং-এর মতো বীট হলো নাইট্রেটের দারুন উৎস। নাইট্রেটস এমন যৌগ যা দেহে নাইট্রিক অক্সাইডে রূপান্তরিত হয়।
নাইট্রিক অক্সাইড রক্তনালীগুলি খুলে দেয় যা রক্তচাপ এবং হৃদস্পন্দনকে হ্রাস করতে সহায়তা করে।
মস্তিষ্কের জন্য ভাল:
বীটে উপস্থিত নাইট্রেট অক্সিজেন প্রবাহ বাড়িয়ে মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করতে সহায়তা করে।
২০১৭- সালে জেরনটোলজির জার্নালে প্রকাশিত একটি সমীক্ষা অনুসারে অনুশীলন বা ব্যায়ামের সময় মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহকে উন্নত করতে বীট রসের দারুন কার্যকর ভূমিকা রয়েছে।
ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করে:
এই সবজিটির ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করার বৈশিষ্ট্য রয়েছে। বীটে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা কোষকে ফ্রি র্যাডিকাল থেকে রক্ষা করে।
কেমোথেরাপির মতো কিছু ক্ষমতা রয়েছে যা ক্যান্সার সেলের বৃদ্ধির ক্ষমতা কমিয়ে দেয়।
চোখের জন্য ভাল:
বীটে লুটেইন এবং জেক্সানথিন থাকে, যা দৃষ্টিশক্তিতে ইতিবাচক প্রভাবের জন্য উপকারী।
লিভারের জন্য ভাল:
বীটে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি থাকে যা আমাদের লিভারকে স্বাস্থ্যকর রাখে – যেমন আয়রন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস, বেটানিন এবং ভিটামিন “বি”। বীট লিভারকে অক্সিডেটিভ ক্ষতি এবং প্রদাহ থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করে।
এছাড়াও এই সবজিতে দ্রবণীয় ফাইবার রয়েছে, যা লিভার থেকে বিষাক্ত পদার্থগুলি বের করতে সহায়তা করে।
বীটের সতর্কতা:
বীটের অনেক স্বাস্থ্য-সুবিধা রয়েছে। তবে তাদের বিবেচনা করার জন্য কয়েকটি নেতিবাচক দিকও রয়েছে। এগুলিতে অক্সলেট একটু বেশি।
অনেক বেশি অক্সালেট কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। এটিতে প্রাকৃতিক চিনির পরিমান তুলনামূলকভাবে বেশি।