বাসক পাতা সর্দি-কাশি ও ব্যথা কমাতে এবং শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ রোধ করতে কার্যকরী।

বাসক আয়ুর্বেদশাস্ত্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভেষজ উদ্ভিদ। বাসকের ইংরেজি নাম: Vasaka, Malabar Nut tree এবং বৈজ্ঞানিক নাম: Justicia adhatoda। গ্রামের বাড়ির আশেপাশের ও ধান ক্ষেতের ধারে, ঝোপে ঝাড়ে অনাদরে এই গাছ জন্মে থাকে। তবে এই গাছটির ঔষধিগুণ অপরিসীম।

ভারত উপমহাদেশের প্রায় সর্বত্র এটি জন্মে। হিন্দীতে এক বলা হয় ‘আডুসা’, ‘বানসা’ অথবা ‘ভাসিকা’। তবে সংস্কৃত নামের ভিত্তিতে এটির ব্যবসায়িক নাম “বাসক”।

বাসক পাতার উপকারিতার জন্য বিভিন্ন কোম্পানি ওষুধ তৈরি করতে এই পাতা ব্যবহার করে থাকে। এজন্য বাসক পাতা বর্তমানে বানিজ্যিক ভাবেও চাষ করা হচ্ছে। এ পাতা সাধারণত সর্দি ও কাশি কমাতে সাহায্য করে। বুকে বহুদিনের জমা কফ তরল করার জন্যও বাসক পাতার রস খাওয়ানোর প্রচলন অনেকদিন ধরেই রয়েছে।

শ্বাসনালীর লালাগ্রন্থিকে সক্রিয় করে বলে বাসক শ্লেষ্মানাশক হিসেবে প্রসিদ্ধ। তবে অধিক মাত্রায় খেলে বমি হয়, অন্তত বমির ভাব বা নসিয়া হয়, অস্বস্তি হয়।

বাসক পাতার স্বাস্থ্য উপকারিতা

আসুন এবার জেনে নেওয়া যাক, বাসক পাতার বিভিন্ন উপকারিতা সম্পর্কে-

জ্বর সর্দি-কাশি কমাতে সাহায্য করে:

জ্বরের প্রভাবে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়, সেই তাপমাত্রা কমাতে বাসক পাতা যথেষ্ট সাহায্য করে। অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি, অ্যান্টিবায়োটিক এবং এক্সপেক্টোরেন্ট প্রোপার্টি সমৃদ্ধ হওয়ায় বাসক পাতা সাধারণ সর্দি, কাশি এবং ফ্লুর উপসর্গের চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

জ্বরের সাথে সর্দি ও কাশি থাকলে বাসক পাতার রসের সঙ্গে তুলসী পাতার রস ও মধু মিশিয়ে খেলে সর্দি কাশি কমে। এছাড়া কাশি হলে বাসক পাতা, গোল মরিচ, তালমিছরি একসঙ্গে পানিতে সেদ্ধ করে খেলে কাশি দূর হয়।

শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ রোধ করে:

বাসক পাতা শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ রোধ করতে সাহায্য করে। এই পাতায় অ্যান্টি-মাইক্রোব্যাল উপাদান আছে। অ্যান্টি-মাইক্রোব্যাল উপাদান যক্ষ্মা, কাশির মতো রোগের ক্ষেত্রেও কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। বাসক পাতা পানিতে সিদ্ধ করে এক চামচ মধু মিশিয়ে পান করুন।

অন্ত্রের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে:

বাসক পাতা একটি শক্তিশালী হজম উদ্দীপক। এই পাতা অন্ত্রের খাদ্য কণা ভাঙতে সাহায্য করে, হজমের রস নিঃসরণকে উৎসাহিত করে এবং অন্ত্রের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পুষ্টির শোষণ বৃদ্ধি করে। পেটের গ্যাস দূর করতেও সাহায্য করে অম্বল, ডায়রিয়া, পেট ফাঁপা, পেপটিক আলসার এবং গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ এর জন্য একটি আশ্চর্যজনক নিরাময় বাসক পাতা।

ব্যথা উপশম করে:

বাতের ব্যথা দূর করতে বাসক পাতা কার্যকরী। বাসক পাতা সকল ধরণের ব্যথা যেমন আরথ্রারাইটিস, বাতের ব্যথা, গেঁটে বাত নিরাময় কার্যকরী। ব্যথা পেলে চুন হলুদ গরম করে তার সঙ্গে বাসক পাতা বেটে মিশিয়ে নিয়ে সেই মিশ্রণটি বেশ কিছুক্ষন ধরে ব্যাথার স্থানে মালিশ করা যায়, তাহলে খুব কম সময়ের মধ্যেই উপকার পাওয়া যাবে।

সাধারণত রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণে জয়েন্টে ব্যথা হয়। গুঁড়ো ভাস্কা ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে এবং গাউটের কারণে যে ব্যথা এবং কোমলতা হয় তা হ্রাস করতেও ভাল কাজ করে।

রক্ত পরিষ্কার করে:

রক্ত বিশুদ্ধিকরণে বাসক পাতার উপকারিতা অনস্বীকার্য। অনেকেরই মুখে ব্রণ হয় বা পেটে সমস্যা হয় অথবা নানারকম অ্যালারজির সমস্যা থাকে। এই সমস্যাগুলো বেশির ভাগই হয় যখন রক্ত পরিষ্কার না থাকে। বাসক পাতা নিয়মিত সেবনে আমাদের শরীরের রক্ত পরিষ্কার হয়।

কৃমিনাশক হিসেবে:

বাসক পাতার সহিত মধু মিশিয়ে খেলে পেটের সমস্যা দূর হয় লিভার ভালো থাকে এবং জন্ডিস থেকেও মুক্তি পাওয়া যায়। এটি খুব তিক্ত হওয়ায় এটি কৃমিনাশক হিসেবে কাজ করে। বাসক পাতার রসের সঙ্গে এক চামচ মধু মিশিয়ে খাওয়ালে দারুণ কাজ দেয়। কৃমিনাশক হিসেবে কালমেঘের পাতার ন্যায় বাসক পাতাও খুব ভালো কাজ দেয়।

চর্মরোগ দূর করে:

বাসক পাতায় উপস্থিত অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান চর্মরোগ প্রতিহত করতে সহায়তা করে। আমাদের অনেকেরই নানা রকমের চর্মরোগ হয়ে থাকে। দাদ, চুলকানি তার মধ্যে অন্যতম। কয়েকটি কচি বাসক পাতা ও এক টুকরো কাঁচা হলুদ এক সঙ্গে বেটে দাদ চুলকানির উপরে লাগালে উপকার পাওয়া যায়।

মুত্রথলির সংক্রমন রোধ করে:

অনেক সময় পানি কম খাওয়ার কারণে মুত্রথলিতে সংক্রমন হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে বাসক পাতা বেটে মিছরি সাথে মিশিয়ে খেলে মুত্রথলিতে সংক্রমন থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

মুখের নানাবিধ সমস্যা সমাধান করে:

মাড়ির যেকোন সমস্যা, মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়া, পায়েরিয়া, মুখে দূর্গন্ধ দূর করতে বাসক পাতার উপকারিতা অপরিসীম। বাসক পাতাকে গরম পানিতে ফুটিয়ে নিয়ে সেই পানি দিয়ে কুলি করলে মুখের সমস্যা দূর হবে।

সতর্কতা

আপনি যদি জটিল কোনো রোগে আক্রান্ত হন বা অন্য কোনো কারণে রেগুলার কোনো মেডিকেল কোর্স-এর মধ্য দিয়ে যান তাহলে অবশ্যই খাওয়ার আগে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন। তবে গর্ভাবস্থায়, স্তন্যদানকালে এই পাতা গ্রহণ করার আগে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করবেন।

রেফারেন্স: