পেয়ারা ওজন কমাতে, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে কার্যকরী।
পেয়ারাকে গ্রীষ্মমন্ডলীয় এলাকায় আপামর জনগণের আপেল হিসাবে বিবেচনা করা হয় অর্থাৎ গরীবের আপেল বলা হয়। পেয়ারাতে ক্যালরি খুব কম থাকে, ফাইবার বেশি থাকে, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ভিটামিন ও মিনারেলে পরিপূর্ণ।
পেয়ারার উপরটা সবুজ হয় আবার অনেক পেয়ারা পেকে গেলে উপরের সবুজ অংশটা হলুদ হয়ে যায়। কিছু কিছু পেয়ারার ভেতরের অংশ সাদা আবার কোনটা গোলাপি কিংবা লাল এবং কোনটা হলুদ রঙেরও হয়ে থাকে।
আমাদের দেশে আমরা আমকে ফলের রাজা বলি। কোনো কোনো দেশে আনারস-কে ফলের রাজা বলা হয়। আম আনারস যদি ফলের রাজা হয় তাহলে সুপার ফ্রুট পেয়ারাকে (guava) আমরা ফলের রানী বলতে পারি। পেয়ারা শুধু সুস্বাদু একটি ফলই নয়, পুষ্টিগুণেও ভরপুর।
বিজ্ঞানীদের করা গবেষণায় দেখা গেছে যে, সারাবছর জুড়েই শরীর সুস্থ্য রাখতে পেয়ারার কোনো তুলনা হয় না।
পেয়ারার স্বাস্থ্য উপকারিতা
শরীরের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ যাতে ঠিকমতো কাজ করতে পারে সেজন্য পেয়ারার অবদান অনস্বীকার্য। কম খরচে শরীরকে চাঙ্গা রাখতে অসাধারণ পুষ্টি উপাদান রয়েছে এই ফলটির মধ্যে। নিচে পেয়ারার উপকারিতা নিচে দেওয়া হলো –
কোষ্টকাঠিন্য দূর করে:
ফলের জগতে উচ্চমাত্রার ফাইবার সমৃদ্ধ যে ফলগুলো রয়েছে তার মধ্যে পেয়ারার অবস্থান একেবারে উপরের দিকে। সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়া আমাদের প্রতিদিনের কাজ।
আর এটা সহজ ও সুখকর না হয়ে যদি হয় কষ্টকর ও ব্যাথা এবং রক্তপাতযুক্ত তাহলে জীবন হয়ে ওঠে দুর্বিসহ। পেয়ারা পেটের রোগ দূর করার পাশাপাশি কোষ্টকাঠিন্যের সমস্যা দূর করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে:
পেয়ারায় উচ্চ মাত্রায় ভিটামিন “সি” পাওয়া যায়। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে এই ভিটামিন”সি”- এর জুড়ি মেলা ভার। রোগ প্রতিরোধী ব্যাবস্থা মজবুত তো সহজে রোগবালাই শরীরের ধারে ঘেঁষতে পারে না। পেঁয়ারা একটু পেঁকে নরম হয়ে গেলে বিশেষ করে ভেতরের নরম মিষ্টি সাদা অংশ বাচ্চারা ও বৃদ্ধরা খেতে পছন্দ করে।
ত্বকের জন্য ভালো:
পেয়ারা ভিটামিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর যা আমাদের ত্বকের জন্য দুর্দান্ত। এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট ত্বককে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে পারে এবং ত্বকে বয়সের ছাপ দূর করতে সাহায্য করে।
এছাড়া পেয়ারার পাতার রস ত্বকে প্রয়োগ করলে ব্রণ নিরাময় হয়ে যায়। একটি টেস্ট-টিউব সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, পেয়ারা পাতার রসে থাকা অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্টের কারনে ব্রণজনিত ব্যাকটিরিয়াকে ধংস করতে কার্যকর।
রক্তে সুগারের মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে:
পেয়ারায় রয়েছে প্রচুর পরিমানে ফাইবার, যা রক্তে শর্করার মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। ডায়াবেটিস রোগীরা কোনো চিন্তা ছাড়াই পেয়ারা খেয়ে যেতে পারেন কারণ গ্লাইসেমিক ইনডেক্সে পেয়ারার অবস্থান একেবারে নিচের দিকে।
হার্টের স্বাস্থ্যকে বুস্ট করতে পারে:
পেয়ারায় রয়েছে উচ্চমাত্রার ভিটামিন “সি”-সহ অন্যান্য আরো অনেক ভিটামিন ও এন্টিঅক্সিডেন্টস যেগুলি আমাদের হার্টকে রক্ষা করে ফ্রি-রাডিক্যালস-এর ক্ষতির হাত থেকে।
পেয়ারা “খারাপ” LDL কোলেস্টেরল হ্রাস এবং “ভাল” HDL কোলেস্টেরল বৃদ্ধি করে। ১২০ জনের ১২-সপ্তাহের একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, খাবারের আগে পাকা পেয়ারা খাওয়ার ফলে রক্তচাপ হ্রাস পেয়েছে, LDL কোলেস্টেরল ৯.৯% হ্রাস পেয়েছে এবং HDL কোলেস্টেরল ৮% বৃদ্ধি পেয়েছে।
ওজন কমায়:
পেয়ারা হলো একটি লো-ক্যালরির একটি ফল। একটি ফলের মধ্যে ৩৭ ক্যালোরি এবং ফাইবার আছে ১২%। অন্যান্য লো-ক্যালোরি স্ন্যাকগুলির বিপরীতে, এগুলিতে ভিটামিন এবং খনিজগুলি রয়েছে – তাই আপনি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টিগুলি হারাচ্ছেন না। ফাইবারে পূর্ণ এবং ক্যালরি কম থাকে, এর অর্থ পেয়ারা আপনাকে পূর্ণ বোধ করতে অর্থাৎ পেট ভরিয়ে রাখতে এবং ওজন হ্রাসে সহায়তা করতে পারে।
হজমশক্তি বৃদ্ধি করে:
পেয়ারা ডায়েটরি ফাইবারের একটি দুর্দান্ত উৎস। নিয়মিত পেয়ারা খাওয়া মানে অন্ত্রের গতিবিধি ঠিক রাখা এবং কোষ্ঠকাঠিন্যতা দূর করা। কেবলমাত্র একটি পেয়ারা আপনার দৈনিক ফাইবারের চাহিদার ১২% সরবরাহ করতে পারে। এছাড়া গবেষণায় দেখা গেছে যে, এটি ডায়রিয়ার তীব্রতা হ্রাস করতে পারে।
দৃষ্টিশক্তির উন্নতি করে:
সুমিষ্ট পেয়ারাতে প্রচুর মাত্রায় ভিটামিন “এ” রয়েছে। এই কারণে এই ফলটি আমাদের চোখের দৃষ্টিশক্তি উন্নত করতে পারে। সেই সঙ্গে ছানি পড়া, গ্লুকোমা ও অন্যান্য রোগ দূরে রাখে।
ব্রেইন পাওয়ার বৃদ্ধি করে:
পেয়ারায় থাকা ভিটামিন বি-3 ও বি-6 মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ বাড়িয়ে দেয়। ফলে স্মৃতিশক্তি, বুদ্ধি ও মনোযোগের উন্নতি ঘটে।
পেয়ারার ন্যায় পেয়ারার পাতারও অনেক স্বাস্থ্যসুবিধা রয়েছে। পেয়ারা পাতা বেটে রস করে খেলে অর্থাৎ পেয়ারা পাতার নির্যাস মেয়েদের ঋতুস্রাবের সময়ের বিভিন্ন সমস্যা, ডায়াবেটিস, হার্ট-সহ অনেক সমস্যার উপশম করে থাকে।