দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত পড়ার কারণ কি?
দাঁতের মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়া খুবই বিরক্তিকর ও কষ্টদায়ক একটা বিষয়। মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়ার প্রধান ও অন্যতম কারণ হচ্ছে নিয়মিত দাঁত ব্রাশ না করা।
দাঁত ব্রাশ করার সময় বা শক্ত কিছু খেতে গেলে যদি লক্ষ করা যায় যে মাড়ি থেকে রক্ত বের হচ্ছে তবে বুঝে নিতে হবে জিনজিভাইটিস এ আক্রান্ত।
যদি দাঁত ব্রাশ করার সময় ডেন্টাল প্লাক নিয়মিতভাবে পরিষ্কার করা না হয় তা দীর্ঘদিন জমে থেকে মাড়িতে প্রদাহ তৈরি করে। যার ফলে মাড়ি ফুলে যায় ও লাল হয়ে রক্ত বের হয়।
যদি আপনার মাড়ি থেকে সহজেই রক্ত পড়ে কিংবা দাঁত ব্রাশের সময় রক্ত পড়ে তাহলে শুরুতেই ডেন্টিস্টের পরামর্শ নিতে হবে।
চলুন জেনে নেওয়া যাক, দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত পড়ার কারণগুলি কি কি :
নিয়মিত দাঁত ব্রাশ না করা :
মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়ার প্রধান ও অন্যতম কারণ হচ্ছে নিয়মিত দাঁত ব্রাশ না করা। দাঁতের ওপর লেগে থাকা খাদ্যকণা সাদা প্রলেপ ফেলে দাঁতের উপর, যাকে আমরা ডেন্টাল প্লাগ বলি।
২৪ ঘণ্টা পর এ ডেন্টাল প্লাগ শক্ত হয়ে ক্যালকুলাস হয়। এ ক্যালকুলাসই মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়ার অন্যতম কারণ।
৮০ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনোভাবে দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত পড়া রোগে আক্রান্ত।
ধূমপান বা জর্দা খাওয়ার কারণে :
যারা ধূমপান করেন বা জর্দা, গুল ব্যবহার করেন তাদের মাড়ি অন্যদের তুলনায় ঝুঁকিতে থাকে।
তামাকের রাসায়নিক পদার্থগুলো দেহের রোগ প্রতিরোধ শক্তি কমিয়ে ফেলে। যার ফলে মুখের জীবাণুসমূহ আরো বেশি বিস্তার লাভ করে এবং মাড়িতে প্রদাহ বা ইনফেকশন দেখা দেয়।
ধূমপান ও তামাকের ব্যবহারের কারণে ঘা বা প্রদাহ শুকাতে দেরি হয়। তামাক যতদিন ব্যবহার করা হয় ততদিনই মাড়ির এই রোগ দীর্ঘস্থায়ী হয়, শত ওষুধ বা চিকিৎসাতে ভালো করা যায় না।
গর্ভাবস্থার সময়ে :
গর্ভাবস্থার সময় মাড়ি থেকে রক্ত পড়া খুব বেশি লক্ষণীয়। কারণ এই সময় মায়েদের শরীরের হরমোন পরিবর্তন হয় ফলে মাড়ি সংবেদনশীল হয়ে যায়।
এই সময় সামান্য আঘাতে বা খোঁচাতেই মাড়ি থেকে রক্ত বের হয়।
সুতরাং গর্ভবতী মায়েদের মুখের যত্ন বেশি পরিমাণ নিতে হবে। যেমন তিন বেলা আহারের পর দাঁত ব্রাশ ও জীবাণুনাশক মাউথওয়াশ ব্যবহার করতে হবে।
খাদ্যাভ্যাসের কারণে :
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের কারণে অনেক রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। সুষম খাবার শুধু সুস্থ শরীরের চাবিকাঠি নয়, সুস্থ মুখেরও বটে।
শুধু খাদ্য খেলেই হবে না, খেতে হবে স্বাস্থ্যকর খাদ্য বা সুষম খাদ্য।
স্বাস্থ্যকর খাদ্য বা সুষম খাদ্য শরীর ও দাঁতের জন্য ভালো। তাই আমাদের প্রতিনিয়ত সুষম খাবার গ্রহণ করতে হবে।
টুথব্রাশ বেশি ক্ষয়প্রাপ্ত বা আঁকাবাঁকা থাকলে :
টুথব্রাশ বেশি ক্ষয়প্রাপ্ত বা আঁকাবাঁকা থাকলে বা দীর্ঘদিন ব্যবহার করা টুথব্রাশ দিয়ে ব্রাশ করলে আঘাতের কারণে মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়তে পাড়ে।
সুতারাং টুথব্রাশটি সঠিক আছে কি না সেটাও খেয়াল রাথতে হবে।
সবসময় উন্নতমানের টুথব্রাশ দিয়ে দাঁত ব্রাশ করতে হবে। টুথব্রাশটি ক্ষয় বা আঁকাবাঁকা হতে থাকলে ব্যবহার করা বাদ দিতে হবে।
অন্যান্য রোগের কারণে :
ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদ্রোগ, ক্যানসার, লিভার ও কিডনি রোগের কারণেও মাড়ির প্রদাহ বেশি হয়ে থাকে।
এসব রোগ দেহের প্রতিরোধ ক্ষমতাকে কমিয়ে ফেলে। তাই ছয় মাস অন্তর দাঁতের স্কেলিং ও পরীক্ষা করতে হবে।
মানসিক রোগ, অ্যালার্জি ও উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ মুখের শুষ্কতা তৈরি করে,যার ফলে মাড়ির প্রদাহ বেশি হয়।
মুখের আর্দ্রতা বজায় রাখতে নিয়মিত কিছু টক জাতীয় ফল (আমলকী, কমলা, জাম্বুরা, আমড়া, লেবুর রস, কামরাঙা, জলপাই, বরই ইত্যাদি) এবং প্রচুর পানি পান করতে হবে।