গ্লুকোমা রোগের কারণ, লক্ষণ ও প্রতিরোধে করণীয়।

চোখের রোগের মধ্যে গ্লুকোমা (glaucoma) অন্যতম একটি রোগ। গ্লুকোমা খুবই মারাত্মক একটি রোগ। সময়মত চিকিৎসা না করালে বড় বিপদ হতে পারে। এ রোগের মূল কারণ হল চোখের উপর অতিরিক্ত চাপ।

গ্লুকোমা রোগ হলে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব কিন্তু এ রোগকে নিরাময় করা সম্ভব নয়। একবার গ্লুকোমা হলে সারাজীবন বয়ে বেড়াতে হয়।

গ্লুকোমা কী?

গ্লুকোমা হলে চোখের স্নায়ু ধীরে ধীরে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ধীরে ধীরে চোখের দৃষ্টি কমে যায়। এমনকি এতে এক সময় রোগী অন্ধ হয়ে যায়। সময়মতো ধৈর্য ধরে চিকিৎসা করলে এ অন্ধত্বের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

গ্লুকোমা রোগের লক্ষণ কী?

অনেক ক্ষেত্রেই রোগী এ রোগের কোনো লক্ষণ অনুধাবন করতে পারেন না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে নিম্নের লক্ষণগুলো দেখা দিতে পারে। যেমন-

  • ঘন ঘন চশমার গ্লাস পরিবর্তন করা।
  • চোখে ঝাপসা দেখা বা আলোর চারপাশে রংধনুর মতো দেখা।
  • ঘন ঘন মাথাব্যথা বা চোখে ব্যথা হওয়া।
  • দৃষ্টিশক্তি ধীরে ধীরে কমে আসা।
  • অনেক সময় চলতে গিয়ে কোন কিছুর সাথে ধাক্কা লাগা।
  • মৃদু আলোতে কাজ করলে চোখে ব্যথা অনুভূত হওয়া।
  • চোখের কর্নিয়া সাদা হয়ে যাওয়া, চোখ লাল হওয়া, চোখ দিয়ে পানি পড়া ইত্যাদি।

গ্লুকোমা হওয়ার কারণ

গ্লুকোমা রোগ হওয়ার কারণ সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো-

  • পরিবারের অন্য কোনো নিকটাত্মীয়ের এ রোগ থাকলে।
  • বয়স বেশি হয়ে গেলে।
  • ডায়াবেটিস ও উচ্চরক্ত চাপ থাকলে।
  • মাইগ্রেন নামক মাথাব্যথা থাকলে।
  • উচ্চ রক্ত চাপের ওষুধ সেবন।
  • চোখের ছানি অপারেশন না করলে বা দেরি করলে।
  • চোখের অন্যান্য রোগের কারণে।
  • জন্মগত চোখের ত্রুটি ইত্যাদি।

গ্লুকোমা প্রতিরোধের উপায়

গ্লুকোমা রোগকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় কিন্তু নিরাময় করা যায় না। এ রোগে দৃষ্টি যতটা কমেছে তা আর ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয় না। তবে দৃষ্টি আর কমে না যায় তার জন্য আমাদের চিকিৎসা নিতে হবে। আসুন জেনে নেওয়া যাক গ্লুকোমা রোগ প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে –

নিয়মিত চক্ষু বিশেষজ্ঞ বা গ্লুকোমা বিশেষজ্ঞ দ্বারা চক্ষু পরীক্ষা করা হলে এই রোগের প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা করা সম্ভব। গ্লুকোমায় অন্ধত্ব ফিরে আসে না কারন গ্লুকোমায় চোখের নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসার গুরুত্বপর্ণ।
ছোট বাচ্চারা গ্লুকোমায় আক্রান্ত হয়ে থাকে। জন্মগতভাবে গ্লুকোমা থাকতে পারে। সাধারণত গ্লুকোমা চিকিৎসা তিন ধরনের উপায়ে করা হয়। চোখের ড্রপ, লেজার ও গ্লুকোমা সার্জারি।

গ্লুকোমা রোগ প্রাথমিক পর্যায়ে নির্ণয় করা গেলে খুব সহজেই গ্লুকোমাজনিত অন্ধত্ব রোধ করা যায়। তাই গ্লুকোমা সম্পর্কে সচেতন হওয়া উচিৎ।

চোখের উচ্চচাপ এই রোগের প্রধান কারণ তাই চোখের চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা দরকার ওষুধের দ্বারা। তিন মাস পর পর চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে এবং নিম্নলিখিত পরীক্ষা করিয়ে দেখতে হবে এই রোগ নিয়ন্ত্রণে আছে কিনা।

যেমন-

  • দৃষ্টিশক্তি পরীক্ষা
  • চোখের চাপ পরীক্ষা
  • চোখের নার্ভ পরীক্ষা
এই রোগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো নিয়মিত ওষুধ সেবন করা এবং সময়মতো চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া। অধিকাংশ রোগীর চোখে ব্যথা হয় না বা তেমন কোনো লক্ষণ দেখা দেয় না তাই রোগী দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা অব্যাহত রাখেন না এর ফলে অনেক রোগী  অন্ধত্ব বরণ করেন।
অনেক সময় দেখা যায় দীর্ঘদিন ঔষধ ব্যবহারের ফলে ঔষধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা যেতে পারে তাই নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা। সঠিক ওষুধ ব্যবহার করে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চললে গ্লুকোমা রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।
রেফারেন্স: